নয়াদিল্লী, ২৫ জানুয়ারী৷৷ সন্ত্রাসবাদকে মদত ও উৎসাহ দেয় উদ্দেশ্য ও সীমাহীন হিংসা৷ প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে একথা বলেন৷ তিনি জানান, সন্ত্রাসবাদকে প্ররোচনা যোগায় কিছু ক্রীড়নক শক্তি যারা নিরীহ ও নিরপরাধদের নিবির্চার হত্যার মাধ্যমে বিপর্যয় ঘটাতে তৎপর৷ তাদের এই যুদ্ধ ঘোষণার পেছনে কোন আর্দশ বা মতবাদ নেই৷ তারা হল কর্কটের মতোই ভয়ংকর যাদের শক্ত হাতে বিনাশ ও নিশ্চিহ্ণ করা প্রয়োজন৷ সন্ত্রাসবাদের ভালো-মন্দ বলে কিছু নেই, সন্ত্রাসবাদ মানেই অশুভ এক শক্তি৷
রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী তাঁর ভাষণে বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এক বিশেষ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বিদায় নিয়েছে বিংশ শতকটি৷ তাই, একবিংশ শতাব্দী সম্পর্কে স্বভাবতই আমরা আশাবাদী হয়ে উঠেছি৷ চরম দারিদ্র্যের অভিশাপ দূর করতে বিভিন্ন জাতি ও সেখানকার মানুষ নতুন উদ্যম ও শক্তিতে বলীয়ান হয়ে উঠবে এই শতকটিতে এটাই আমরা আশা করি৷ আর এইভাবেই একবিংশ শতাব্দী সূচনা করবে এক নতুন যুগের৷ কিন্তু বর্তমান শতকের প্রথম ১৫টি বছরে এই আশা ছিল যথেষ্ট নিষ্প্রভ৷ বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে শুরু হয় নজিরবিহীন টালমাটাল যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে এক ক্রমবর্ধমান বিপদ সঙ্কেত হয়ে দেখা দিয়েছিল৷ সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়েছে তার বর্বরোচিত জেহাদ ঘোষণার মধ্য দিয়ে৷ এই ধবংস দৈত্যের হাত থেকে কোন অঞ্চল আজ আর নিরাপদ নয়৷
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, প্রতিটি বিষয়েইজাতিতে জাতিতে সহমত কখনই সম্ভব নয়৷ চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং থাকবেও৷ পরিচিত সীমান্ত অঞ্চলগুলিতে কৌশলগত স্থিতিশীলতা বানচাল করে দিয়ে শৃঙ্খলার পরিবেশ বিনষ্ট করতে চায় সন্ত্রাসবাদীরা৷ বেআইনি কার্যকলাপ যদি তাণ্ডব চালাতে থাকে সীমান্ত এলাকায় তাহলে এক চরম সঙ্কটের মুখোমুখী হব আমরা৷ জাতিতে জাতিতে শুরু হবে বিবাদ-বিসংবাদ৷ নিকটতম প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বিতর্ক ও বিবাদের আশঙ্কাও থাকে প্রচুর৷ এই সাতটি কারোরই অজানা নয়৷ কিন্তু, এই মতানৈক্যের বিষয়টিকে মোকাবিলা করা প্রয়োজন সভ্যতার সৌজন্যের মধ্য দিয়ে৷ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিরন্তর এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত৷ কিন্তু, গোলাবারুদ যখন ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসতে থাকে আমাদের দিকে তখন শান্তির আলোচনা আমরা চালিয়ে যেতে পারি না৷
আমাদের এই উপমহাদেশে এই বিশেষ সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে আশার প্রদীপ জাগিয়ে তোলার এক ঐতিহাসিক সুযোগ আমাদের সামনে এখন উপস্থিত৷ শান্তিপূর্ণ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে আমাদের আবেগ ও ভৌগোলিক তথা রাজনৈতিক উত্তরাধিকারকে সঙ্গী করে সমস্যার সমাধানে আমরা উদ্যোগী হতে পারি৷ মানবজাতির মূলে রয়েছে মানবিকতার গুন ও ধর্ম৷ এই বিষয়টিকে স্বীকার করে নিয়ে পারষ্পরিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা একে অপরের সঙ্গে মত বিনিময় চালিয়ে যেতে পারি৷ মনে রাখতে হবে, মানুষের ঘৃণ্যতম প্রবৃত্তিগুলিকে এক্ষেত্রে প্রতিহত করা প্রয়োজন৷ সমগ্র বিশ্ব যখন মৈত্রী প্রার্থী তখন আমরা এমন এক দৃষ্টান্ত করতে পারি যা সকলের কাছে হয়ে উঠতে পারে এক বিশেষ বার্তা৷
তিনি বলেন, ভারতে এক সুখী, সুস্থ এবং সৃজনশীল জীবনধারনের অধিকার রয়েছে আমাদের প্রত্যেকেরই৷ কিন্তু এই অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বিশেষত আমাদের শহর এলাকায় যেখানে দূষণের মাত্রা বিপদসীমার পৌঁছে গেছে৷ ২০১৫ সালটি ছিল উষ্ণতম বছর৷ তাই, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিশ্চিতভাবেই অনূভূত হয়েছে৷ এর মোকাবিলায় বিভিন্ন পর্যায়ে প্রচেষ্টা ও কৌশলের আশু প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে৷ নগর পরিকল্পনায় উদ্ভাবনী ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ জ্বালানি শক্তির ব্যবহার এবং জনসাধারণের মানসিকতার পরিবর্তন বিশেষভাবে জরুরি এই মোকাবিলার কাজে অংশগ্রহণের জন্য৷ মানুষ যদি নিজের থেকেই তাদের এই পরিবর্তনগুলিকে স্বীকার করে নিতে পারেতাহলে সুপরিবর্তন হয়ে ওঠে দীর্ঘস্থায়ী৷
2016-01-26