আগরতলা, ৩ ডিসেম্বর : রাজ্যে বিভিন্ন পেশার সাথে যুক্ত শ্রমিকদের মহার্ঘ্য ভাতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। আজ সচিবালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে শ্রম মন্ত্রী ভগবান দাস এই সংবাদ জানান। তিনি জানান, এই মহার্ঘ্য ভাতা বৃদ্ধি করার ফলে ২০টি বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত ১ লক্ষ ৫০ হাজার শ্রমিক এবং তাদের পরিবার উপকৃত হবে। তিনি বলেন, নূন্যতম মজুরী আইনের ৫নং ধারা অনুযায়ী ত্রিপুরা সরকার প্রতিটি তালিকাভুক্ত পেশার প্রতি ৫ বছর অন্তর ন্যূনতম মজুরী আইনের তালিকাভুক্ত পেশার শ্রমিকদের মহার্ঘ্য ভাতা বৃদ্ধি করে।
মন্ত্রী আরও জানান, শ্রমিকদের মহার্ঘ ভাতা সাধারনত শ্রম ব্যুরো, সিমলা হতে প্রেরিত ভোক্তা মূল্য সূচকের ছয় মাসের গড় বৰ্দ্ধিত হিসাবের উপর ভিত্তি করে বাড়ানো হয়ে থাকে। তিনি জানান, বর্তমানে রাজ্য সরকার বিবেচনা পূর্বক নূন্যতম মজুরী আইনের তালিকাভুক্ত ২০টি পেশার সাথে যুক্ত শ্রমিকদের পুনরায় মহার্ঘ্য ভাতা বাড়ানোর অনুমোদন করেছে যা ১লা অক্টোবর ২০২১ থেকে কার্যকরি হবে এবং এটি জানুয়ারি ২০২১ থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত ভোক্তা মূল্য সূচকের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে শ্রমমন্ত্রী জানান, যে ২০টি কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা উপকৃত হবেন সেগুলি হল রাস্তা নির্মাণ বা রক্ষনাবেক্ষণ বা বিল্ডিং অপারেশন, যান্ত্রিক কর্মশালা, বিড়ি শিল্প, পেট্রোল পাম্প, রাবার বাগান, রাইস মিলস, স্টোন ব্রেকিং এবং স্টোন ক্রাশিং দোকান ও প্রতিষ্ঠিত, প্রাইভেট টিচিং ইনস্টিটিউট/কোচিং স্কুল, অটো রিক্সা, সাফাই কর্মী, লেম্পস এবং পেক্স (কো-অপারেটিভ), পাবলিক মোটর পরিবহণ, কৃষি, গৃহকর্মী, প্রাইভেট সিকিউরিটি গার্ড, লোডিং এবং আন লোডিং কর্মসংস্থানের যুক্ত শ্রমিক, স্বর্ণকার, ধূপকাঠি তৈরির সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক এবং হোটেল ও রেস্টুরেন্টের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক। তিনি জানান, এই মহার্ঘ্য ভাতা বাড়ানোর ফলে সংঘটিত এবং অসংগঠিত উভয় ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের আর্থিক উন্নতি হবে।
শ্রমমন্ত্রী জানান, রাজ্যের সমস্ত অসংগঠিত শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় সরকারের ই-শ্রম পোর্টালে নথিভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ৫ লক্ষাধিক অসংগঠিত শ্রমিকদের এই পোর্টালের আওতায় আনা হয়েছে। এক্ষেত্রে ত্রিপুরা উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে। তিনি জানান, এই ৫ লক্ষাধিক পোর্টালে যুক্ত অসংগঠিত শ্রমিকদের মধ্যে ২ লক্ষ ৫০ হাজারের উপর শ্রমিক কৃষি শ্রমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। বাকি শ্রমিকরা অন্যান্য কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন। তিনি জানান, ই-শ্রম পোর্টালে শ্রমিকদের আনার জন্য সচেতনতামূলক শিবির আয়োজন করা হচ্ছে।
এক্ষেত্রে তিনি ই-শ্রম পোর্টালে নিবন্ধিত অসংগঠিত শ্রমিকদের বিভিন্ন সুবিধা সম্পর্কে জানতে গিয়ে বলেন, ই-শ্রমে নথিভুক্ত করার পর প্রাপ্ত ই-শ্রম কার্ড সারা দেশে গ্রহণ করা হবে। নথিভুক্ত করার পর এক বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তা বীমা যোজনার আওতায় আনা হবে। দুর্ঘটনাজনিত কারণে কোন শ্রমিকদের মৃত্যু বা স্থায়ী অক্ষমতার শিকার হলে তাকে ২ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। আংশিক অক্ষমতার ক্ষেত্রে ১ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা এই পোর্টালের মাধ্যমে প্রদান করা হবে। দুর্যোগ বা মহামারী চলাকালীন সময় কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার থেকে সহায়তা প্রদান করা হবে।
শ্রমমন্ত্রী ই-শ্রম রেজিস্ট্রেশন বিষয় সম্পর্কে জানাতে গিয়ে বলেন, গত ২৬ আগস্ট, ২০২১ থেকে ই-শ্রম পোর্টালে নিবন্ধনকরণের কাজ শুরু হয়েছে। সব অসংগঠিত শ্রমিক www.eshram.gov.in এর মাধ্যমে নিজেই নাম নিবন্ধন করতে পারবেন। সারা দেশে ৪ লক্ষেরও বেশি সিএসসি এবং এসএসকে কেন্দ্রের মাধ্যমে এই সহায়তা প্রদান করা হবে। ই-শ্রমে নিবন্ধনের পর প্রাপ্ত ই-শ্রম কার্ড সারা দেশে গ্রহণ করা হবে। সাংবাদিক সম্মেলনে শ্রমমন্ত্রী শ্রমিকদের এই পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করার জন্য আহ্বান জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শ্রম দপ্তরের কমিশনার নরেশ বাবু এবং শ্রম দপ্তরের যুগ্ম কমিশনার বৈজয়ন্ত দাস।