লোকসভায় পরমাণু শক্তির স্থায়ী ব্যবহার ও উন্নয়ন বিল, ২০২৫ পেশ

নয়াদিল্লি, ১৭ ডিসেম্বর: লোকসভায় আজ পরমাণু শক্তির স্থায়ী ব্যবহার ও উন্নয়ন বিল, ২০২৫ পেশ করা হল। এই বিলের উদ্দেশ্য হল পরমাণু শক্তি উৎপাদনের জন্য পরমাণু শক্তি ও আয়নীকরণ বিকিরণের উন্নয়ন এবং নিরাপদ ব্যবহারের জন্য একটি শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক কাঠামো গড়ে তোলা।

বিলের মাধ্যমে পরমাণু শক্তি নিয়ামক বোর্ড গঠন এবং পরমাণু শক্তি ক্ষতিপূরণ পরামর্শদাতা পরিষদ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, কোনও পরমাণু দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের দায়বদ্ধতাও নির্ধারণ করা হয়েছে। এই দায়বদ্ধতা কার্যকর করার লক্ষ্যে একটি পরমাণু দায়বদ্ধতা তহবিল গঠনের কথাও বিলে উল্লেখ রয়েছে।

এই আইন অনুযায়ী, নিয়ামক বোর্ডকে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ও বিকিরণ উৎপন্নকারী যন্ত্রের উৎপাদন, ব্যবহার, রফতানি, আমদানি, পরিবহণ ও হস্তান্তর নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে, তেজস্ক্রিয় পদার্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নির্দিষ্ট করতে পারবে। ইউরেনিয়াম বা থোরিয়ামের অনুসন্ধান ও খননের জন্য অনুসন্ধানমূলক কার্যক্রম চালানোর অধিকারও কেন্দ্রের হাতে থাকবে।

বিল পেশ করতে গিয়ে পরমাণু শক্তি প্রতিমন্ত্রী ড. জিতেন্দ্র সিং বলেন, সারা বিশ্ব এখন পরিচ্ছন্ন শক্তির দিকে এগোচ্ছে এবং ভারত সরকার ২০৪৭ সালের মধ্যে ১০০ গিগাওয়াট পরমাণু শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্য নিয়েছে। তিনি জানান, বর্তমানে ভারতের পরমাণু শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা ৮.৮ গিগাওয়াট, যেখানে ২০১৪ সালে তা ছিল মাত্র ৪.৪ গিগাওয়াট। ড. সিংয়ের মতে, পরমাণু শক্তি নবীকরণযোগ্য শক্তির অন্যান্য উৎসের তুলনায় অধিক কার্যকর। তিনি কপ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ২০৪৭ সালের মধ্যে শূন্য কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্য পূরণের ঘোষণার কথাও স্মরণ করান। তাঁর বক্তব্য, এই লক্ষ্য অর্জন, দেশের ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদা মেটানো এবং আত্মনির্ভর ভারতের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি ও পেট্রোলিয়ামের ওপর নির্ভরতা কমানো জরুরি। তিনি একে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক বিল বলে উল্লেখ করেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে কংগ্রেস সাংসদ মনীশ তিওয়ারি বিলটির বিরোধিতা করেন। তিনি বিলে থাকা একাধিক নতুন বিধান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, যার মধ্যে পরমাণু পণ্যের সরবরাহকারীদের দায়বদ্ধতা থেকে ছাড় দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, ভারত এখনও নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপের সদস্য নয়। তাঁর দাবি, এই বিল পুনর্বিবেচনা করা উচিত এবং একে যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি)-তে পাঠানো হোক।

বিজেপি সাংসদ শশাঙ্ক মণি বলেন, এই বিল দেশকে নতুন গতি দেবে এবং বিকশিত ভারতের রথকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাঁর মতে, নতুন আইনের ফলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে এবং দেশ শক্তি নিরাপত্তার পথে আরও এক ধাপ এগোবে।

বিলের বিরোধিতা করে তৃণমূল কংগ্রেসের সৌগত রায় বলেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে পরমাণু শক্তি ক্ষেত্রে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সুরে ডিএমকে সাংসদ অরুণ নেহরু পরমাণু শক্তির মতো সংবেদনশীল ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের প্রবেশের সম্ভাব্য ক্ষতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

অন্যদিকে, জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর ড. আলোক কুমার সুমন বিলের সমর্থনে বলেন, এটি দেশে পরমাণু শক্তির নিয়ন্ত্রণ ও টেকসই ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

তেলুগু দেশম পার্টির কৃষ্ণা প্রসাদ টেনেটি বিলের সমর্থনে বলেন, সাসটেইনেবল হারনেসিং অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট অব নিউক্লিয়ার এনার্জি ফর ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়া বিল, ২০২৫—এই নামই প্রমাণ করে যে দেশ দায়িত্বশীল ও কৌশলগতভাবে পরমাণু শক্তি ব্যবহারের অঙ্গীকার করেছে। তিনি ভারতের পরমাণু কর্মসূচির জনক ড. হোমি জাহাঙ্গীর ভাবাকে স্মরণ করে বলেন, ড. ভাবা পরমাণু শক্তিকে উন্নয়ন ও আত্মনির্ভরতার চালিকাশক্তি হিসেবে দেখতেন।

কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর বলেন, বিলে এমন একটি ধারা রয়েছে যা ঝুঁকি কম হলে কেন্দ্রীয় সরকারকে কোনও প্ল্যান্টকে লাইসেন্স বা দায়বদ্ধতা থেকে ছাড় দেওয়ার অনুমতি দেয়। তিনি এই ধারাটিকে বিপজ্জনক বলে আখ্যা দেন।

Leave a Reply