ভারতে ‘সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু’ নারী সমাজ, তাহলে সংরক্ষণ ছাড়াই কেন দেওয়া হবে না প্রতিনিধিত্ব? প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের

নয়াদিল্লি, ১০ নভেম্বর : সুপ্রিম কোর্ট সোমবার নারীদের ‘ভারতের বৃহত্তম সংখ্যালঘু’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, সংরক্ষণ ছাড়াও কি নারীদের প্রতিনিধিত্ব দেওয়া যায় না? সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চের নেতৃত্ব দেন বিচারপতি বি.ভি. নাগারথ্না যিনি সুপ্রিম কোর্টে একমাত্র নারী বিচারপতি। বেঞ্চের অপর সদস্য ছিলেন বিচারপতি আর. মহাদেবন।

ড. জয়া ঠাকুরের দায়ের করা এক আবেদনের শুনানিতে বিচারপতিরা এই মন্তব্য করেন। ওই আবেদনটি ২০২৩ সালে পাস হওয়া ‘নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম’ বা সংবিধানের ১০৬তম সংশোধনী আইনের কিছু ধারা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা হয়েছিল। এই আইন অনুযায়ী, লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভাগুলিতে নারীদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের বিধান করা হয়েছে। যদিও ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু আইনটিতে স্বাক্ষর করেন, তবে এটি এখনও কার্যকর হয়নি বলে আদালতে জানান সিনিয়র আইনজীবী শোভা গুপ্তা ও আইনজীবী বরুণ ঠাকুর।

শোভা গুপ্তা প্রশ্ন তোলেন, তাহলে এই ‘বন্দন’-এ দেরি কেন? বিচারপতি নাগারথ্না পর্যবেক্ষণ করেন, এই সাংবিধানিক সংশোধনটি নারীদের রাজনৈতিক ন্যায়বিচার দেওয়ার একটি দৃষ্টান্ত। রাজনৈতিক ন্যায়বিচার যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। নারীরা দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৮.৪৪ শতাংশ, অর্থাৎ তারাই দেশের সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, সংবিধানের ১৫(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্র নারীদের উন্নয়নের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য। আদালত এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রকের উদ্দেশ্যে নোটিশ জারি করেছে।

আইন অনুযায়ী, নারীদের জন্য আসন সংরক্ষণের বিধান কার্যকর হবে পরবর্তী জনগণনা ও সীমানা পুনর্বিন্যাস প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর। এই সংরক্ষণ কার্যকর হওয়ার পর ১৫ বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে এবং সংসদ চাইলে পরবর্তীতে মেয়াদ বাড়াতে পারবে।

আবেদনে বলা হয়েছে, একটি সাংবিধানিক সংশোধন অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঝুলিয়ে রাখা যায় না। স্বাধীনতার পর ৭৫ বছর পেরিয়ে গেলেও নারী প্রতিনিধিত্ব যথেষ্ট নয়, এটা বহু দশকের পুরনো দাবি। বিচারপতি নাগারথ্না জানতে চান, পরবর্তী জনগণনা কবে হবে? কোনো নির্দিষ্ট তারিখ আছে কি? জবাবে শোভা গুপ্তা বলেন, আইনটিতে জনগণনা বা সীমা পুনর্বিন্যাসের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারিত নেই।

বিচারপতি নাগারথ্না মন্তব্য করেন, জনগণনার মাধ্যমে জনসংখ্যার সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে, যার ভিত্তিতে বিজ্ঞানসম্মতভাবে নারীদের জন্য আসন সংরক্ষণ নির্ধারণ করা সম্ভব। এদিকে আবেদনকারী ড. ঠাকুর আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সংবিধানের ৭৩তম ও ৭৪তম সংশোধনী (১৯৯৩), যা স্থানীয় প্রশাসনে নারীদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে। পাশাপাশি ৭৭তম সংশোধনীতে (এসসি, এসটি-দের চাকরিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সংরক্ষণ) ও ১০ শতাংশ ইডব্লিউএস সংরক্ষণ (অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল সাধারণ শ্রেণির জন্য)– এই সব উদাহরণ তুলে ধরে আবেদনকারী বলেন, এসব ক্ষেত্রেই কোনো জনগণনা ছাড়াই আইন কার্যকর হয়েছে, তাহলে নারীদের ক্ষেত্রেও দেরি কেন?