নয়াদিল্লি, ১৯ অক্টোবর : জিএসটি-র সংশোধিত হার সাধারণ মানুষের কাছে পুরোপুরি পৌঁছাচ্ছে এবং এর সুফলও দেখা যাচ্ছে—শনিবার এমনই দাবি করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ। ৫৪টি নির্বাচিত পণ্যের দামে নজরদারি চালিয়ে দেখা গেছে, এই সংস্কারের প্রভাব ইতিবাচক বলে জানান তিনি।
রাজধানীতে ‘জিএসটি বাঁচত উৎসব’-এর উপলক্ষে এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে নির্মলা সীতারামণের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এবং রেল, তথ্য ও সম্প্রচার, ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।
অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লাল কেল্লা থেকে এই সংস্কারের ঘোষণা করেছিলেন এবং দীপাবলির আগেই তা কার্যকর হবে বলেছিলেন। সেই মতো নবরাত্রির প্রথম দিন ২২ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে এই নতুন জিএসটি ব্যবস্থা, যাতে হ্রাস করা হয়েছে করের হার, সরলীকৃত হয়েছে প্রক্রিয়া, চারটি স্ল্যাবকে কমিয়ে আনা হয়েছে দুটিতে এবং শ্রেণিবিভাগ সংক্রান্ত জটিলতাও মেটানো হয়েছে।
নির্মলা বলেন, “আমরা জিএসটি চালু করেছিলাম, বিরোধীরা না এনেছে, না সাহস দেখিয়েছে। আজ যা করছি তা শুধুই সংশোধন নয়, বরং একটি সচেতন সিদ্ধান্ত, যা কেন্দ্র ও জিএসটি কাউন্সিলের সহযোগিতার ফসল—এর লক্ষ্য জনগণের উপকার।”
তিনি আরও জানান, ২০১৭ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নির্দেশনা অনুযায়ী কর হ্রাসের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ভোক্তাদের উপকার করা। রাজস্ব দপ্তর ৫৪টি পণ্যের দামে নিয়মিত নজরদারি চালাচ্ছে এবং এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে তার সুফল ভোক্তাদের কাছে পৌঁছেছে।
পীযূষ গোয়েল এই সংস্কারকে “দুই গুণের ধামাকা” বলে অভিহিত করেন, যা স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় কর-সংস্কার বলে দাবি করেন তিনি। তাঁর মতে, এতে ১৪০ কোটি ভারতীয় উপকৃত হচ্ছেন। মোদী ও নির্মলার প্রশংসা করে তিনি জানান, এই সংস্কার শুরু হয়েছে নবরাত্রিতে এবং এটি ঘরোয়া ও বাণিজ্যিক খাতে এক নতুন উদ্দীপনা এনেছে।
তিনি বলেন, ২.৫ লক্ষ কোটি টাকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর ছাড় দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ফেব্রুয়ারি ১ তারিখে ঘোষিত আয়কর সংস্কার অন্যতম। এতে সঞ্চয় বাড়ছে, ব্যয়ক্ষমতা বাড়ছে। ইতিমধ্যেই বিনিয়োগ, ব্যবসা ও ভোক্তা ব্যয়ে গুণিতক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। নবরাত্রিতে ঐতিহাসিক গাড়ি বিক্রি হয়েছে, মারুতি, মাহিন্দ্রা ও টাটা নতুন রেকর্ড গড়েছে। স্বাস্থ্য, বিমা ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীতে কর কমিয়ে তা আরও সহজলভ্য করা হয়েছে। এর সঙ্গে পরিকাঠামো উন্নয়নের জোড়া ধাক্কা মিলিয়ে ভারত আজ বিশ্বের দ্রুততম প্রবৃদ্ধির বড় অর্থনীতি।
অশ্বিনী বৈষ্ণব জানান, ইলেকট্রনিক্স খাতে গত বছরের তুলনায় ২০–২৫ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে। বড় বড় রিটেল চেইনে ৮৫ ইঞ্চি টিভি পর্যন্ত বিক্রি হয়ে গিয়েছে, মানুষ আত্মবিশ্বাস নিয়ে নতুন যন্ত্রপাতি কিনছেন। তিনি বলেন, খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে গত চার মাসে ২% হারে পতন দেখা গেছে, যা মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য স্বস্তির বার্তা।
তিনি আরও বলেন, ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনে দ্বিঅঙ্কের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, এবং এতে ২৫ লক্ষেরও বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে। ভারত এখন আমেরিকায় স্মার্টফোন রফতানিতে প্রতিবেশী দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। একটি বৈশ্বিক সংস্থা তাদের মোট উৎপাদনের ২০ শতাংশ ভারতেই করছে। পাশাপাশি, দুটি সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন কেন্দ্র—সিজি সেমি ও কায়নেস-এ উৎপাদন শুরু হয়েছে, যা আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্যে এক বড় পদক্ষেপ।
বৈষ্ণব বলেন, ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে ভারতের মোট জিডিপি ছিল ৩৩৫ লক্ষ কোটি টাকা, যার মধ্যে ২০২ লক্ষ কোটি এসেছে ভোগ থেকে এবং ৯৮ লক্ষ কোটি বিনিয়োগ থেকে। জিএসটি সংস্কার ভোগব্যয় প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে, যার ফলে ২০ লক্ষ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে, এবং তা ভবিষ্যতের বিনিয়োগকে আরও গতি দেবে।
এই জিএসটি সংস্কারকে ঘিরে সরকার দাবি করছে, এটি শুধুমাত্র অর্থনীতিকে চাঙ্গা করছে না, বরং সরাসরি জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নেও বড় ভূমিকা রাখছে।

