আগরতলা, ১৮ অক্টোবর: ত্রিপুরার উত্তর জেলার পানিসাগরে এক শিশুকন্যাকে ধর্ষণ ও খুন করে মাটিচাপা দেওয়ার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের নারকীয় ঘটনা সামনে এল অমরপুরের তৈদুতে। ১৬ অক্টোবর রাতে এক ৭২ বছর বয়সি বৃদ্ধা মহিলাকে ধর্ষণ করে নৃশংসভাবে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তি শাসক বিজেপি জোটের একজন সক্রিয় কর্মী বলেই দাবি করেছে প্রদেশ কংগ্রেস।
ঘটনার পর প্রথমে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হলেও, স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। জনরোষে অভিযুক্ত গণপিটুনির শিকার হয় এবং পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আবারও প্রশ্ন তুলেছে প্রদেশ কংগ্রেস। তাদের দাবি, একের পর এক নারীঘটিত অপরাধ, ধর্ষণ, খুন এবং মাদকের রমরমা কারবার প্রমাণ করে দিচ্ছে, রাজ্যের সামাজিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে এবং অপরাধীরা ভয়হীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মনুবাদী নারী বিদ্বেষী মানসিকতার পৃষ্ঠপোষকতায় আজ রাজ্যজুড়ে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সরকারি প্রশাসন ও আর্থিক ক্ষমতার জোরে তারা আজ কোনও অপরাধকেই অপরাধ বলে মানছে না।
নেশার কারবারে সরকারি নীরবতা প্রশ্ন তুলে কংগ্রেস আরও অভিযোগ করেছে, মাত্র তিনদিন আগে জিরানিয়া রেল স্টেশন থেকে উদ্ধার হয়েছে দুই ওয়াগন ভর্তি প্রায় দশ কোটি টাকার মাদক দ্রব্য, যা একটি বেসরকারি লজিস্টিক সংস্থার নামে দিল্লি থেকে আমদানি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রতিটি গাছের পাতাও যেখানে স্থানীয় নেতার অনুমতি ছাড়া নড়ে না, সেখানে এমন পরিমাণ মাদক ঢোকা এবং তার পিছনের মূল ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে পুলিশের সময় লাগা অযৌক্তিক বলে মনে করছে বিরোধীরা।
রাজ্যজুড়ে ‘ওয়াশিং মেশিন’ সংস্কৃতি, কংগ্রেসের তীব্র কটাক্ষ কংগ্রেসের অভিযোগ, অপরাধীদের রক্ষা করার জন্য রাজ্যে একটি ওয়াশিং মেশিন সংস্কৃতি” গড়ে উঠেছে, যেখানে সমস্ত দাগী অপরাধী প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় নিরাপদে থেকে যাচ্ছে। নারকীয় ঘটনা, আর্থিক দুর্নীতি, এমনকি মন্ত্রিত্ব ধরে রেখে ঘুষ নেওয়ার মতো অপরাধও প্রকাশ্যে স্বীকার করা সত্ত্বেও কোনও বিচার হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানে প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়েছে, আজ যাঁরা শাসকদলের ভেতরে থেকেও বিবেকবোধে বিশ্বাস করেন, তাঁদের ঘরেও শিশুকন্যা, কিশোরী, মা ও বোন আছেন। এই অপরাধী চক্রের হাত থেকে তাঁরা কতদিন নিরাপদ থাকবেন, তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।

