সিপিআইএমকে কুমন্তব্য করেছেন কংগ্রেস বিধায়ক বিরজিত সিনহা, অভিযোগ ঘিরে সরগরম রাজনৈতিক মহল

কৈলাসহর, ১৪ অক্টোবর : কৈলাসহরের রাজনৈতিক ময়দান যেন কু-কথার রঙ্গমঞ্চে পরিণত হচ্ছে। একের পর এক রাজনৈতিক নেতাদের মুখ থেকে অন্য রাজনৈতিক দলের নেতা এবং সংগঠনের প্রতি কু-কথার লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে কৈলাসহরে নতুন করে সংযোজিত হয়েছে বিধায়ক বিরজিত সিনহার বক্তব্য। তাদেরই জোটসঙ্গী সিপিআইএম দলের অঞ্চল কমিটিকে ‘ ডগ ‘ বলে সম্বোধন করে নজিরবিহীন বিতর্কের সৃষ্টি করলেন কংগ্রেস বিধায়ক বিরজিত সিনহা।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিপুরা রাজ্যে বাম কংগ্রেস জোট ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করেছিল। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক শত্রুতা ভুলে সিপিআইএম ও কংগ্রেস দলের কর্মীরা একে অপরের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ৫৩কৈলাসহর বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়াই করে রেকর্ড সংখ্যক ভোটে জয়ী হয়েছিলেন বিরজিত সিনহা। যা ১৯৭২ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে প্রথমবার এত বেশি ভোটের ব্যবধানে কংগ্রেস প্রার্থী বিরজিত সিনহা নির্বাচিত হয়েছিলেন।

৫৩ কৈলসহরে বিধানসভা কেন্দ্রে সে সময় অবশ্য বামপন্থীদের প্রতি কংগ্রেস নেতারা কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর আবারও বাম কংগ্রেস একসাথে জোট বাঁধে। সাধারণ মানুষও এই জোটের প্রতি আস্থা রেখে ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্যে একমাত্র কৈলাসহরের গৌরনগর পঞ্চায়েত সমিতি বাম কংগ্রেসের হাতে তোলে দেয়। যদিও এককভাবে আটটি আসন পেয়ে কংগ্রেস একাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। কংগ্রেস একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পরে দুই দলের মধ্যে তিক্ততা তৈরি হয়। বামেরা অভিযোগ করে, কংগ্রেস এক প্রকার বামেদের পাত্তা না দিয়ে এককভাবে পঞ্চায়েত সমিতি গঠন করে। তখন থেকে দুই দলের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হওয়া শুরু হয়।

এই সমস্ত কিছুকে ছাপিয়ে গেছে, গত কয়েকদিন পূর্বে কৈলাসহরের ইয়াজেখাওরা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কংগ্রেসের এক যোগদান সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। অভিযোগ, সেই যোগদান সভায় নাকি বিধায়ক বিরজিত সিনহা বামেদের এলসি-কে ডগ বা কুকুর বলে আখ্যায়িত করেছেন। শুধু তাই নয়, তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, সিপিআইএম দলের প্রাক্তন মহকুমা সম্পাদক এবং বর্তমান ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সদস্য বিশ্বরূপ গোস্বামীকে টেঙ্গরা গোস্বামী এবং পিস্তল গোস্বামী বলেও কটাক্ষ করেছেন বিরজিত সিনহা। উনি আরও গুরুতর অভিযোগ করেন যে, বিরজিত সিনহাকে প্রানে মেরে ফেলার জন্য বিশ্বরূপ গোস্বামী দুইটি পিস্তল এনেছিলেন। পরবর্তী সময়ে পুলিশকে বলার পর বিশ্বরূপ গোস্বামীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিলো বলেও জানান বিধায়ক বিরজিত সিনহা।

এছাড়াও বিধায়ক জানান যে, ২০২৩ সালের বিধানসভা ভোটের সময় সিপিআইএম দলের কর্মী সমর্থকদের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু সিপিআইএম দলের নেতারা সেই টাকা খরচ না করে নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছিলো। কিন্তু ভোটের পর দলের কর্মী সমর্থকরা জানার পর দলের মধ্যে ক্ষোভ তৈরী হয়েছিলো। সেই ক্ষোভ প্রশমিত করতে সিপিআইএম দলের নেতারা পঞ্চাশ হাজার টাকা বিরজিত সিনহাকে ফিরিয়ে দিতে চাইলেও বিরজিত সিনহা সেই টাকা গ্রহন করেননি বলেও বিরজিত সিনহা নিজেই জানান।

এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে চাউর হতেই বাম কর্মী সমর্থকদের মধ্যে নজিরবিহীন ক্ষোভ পরিলক্ষিত হয়। তারা বিরজিত বাবুর এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানায় সামাজিক মাধ্যমে। সামাজিক মাধ্যমে দুই দলের কর্মী সমর্থকরা পক্ষে-বিপক্ষে নানান যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করছেন। সেই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী কৈলাসহর মহকুমা কমিটি ও জেলা কমিটি যৌথভাবে তাদের দলীয় অফিসে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন। সেই সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিপিআইএম ঊনকোটি জেলা কমিটির সম্পাদক সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী, মহকুমা কমিটির সম্পাদক অঞ্জন রায় এবং সিপিআইএম নেতা কান্তি লাল দেব।

সাংবাদিক সম্মেলনে বিধায়ক সিনহার বক্তব্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করতেই সিপিআইএম ঊনকোটি জেলা কমিটির সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী বিরজিত বাবুর এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন যে, বিগত ২০২৩সালের বিধানসভা ভোটে ও ২০২৪সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কৈলাসহরে কংগ্রেসের জয়ের পেছনে বামেরা যে বড় অংশীদার ছিল তা তারা মনে করিয়ে দেন। তাছাড়াও উনারা বিরজিত সিনহাকে কটাক্ষ করে জানান যে, বিরজিত সিনহার পারিবারিক শিক্ষা নেই এবং রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার বলতে বিরজিত সিনহা জানেন না। ভোটের সময় টাকা দিয়ে এভাবে প্রকাশ্যে বিরুপ মন্তব্য করায় তীব্র নিন্দা জানান। কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী এও জানান যে, ২০২৪সালের লোকসভা ভোটের সময় সিপিআইএম দলের পক্ষ থেকেও কংগ্রেস দলকে টাকা দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু আজ অব্দি সিপিআইএম দলের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে সেই টাকার ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। অথচ বিরজিত বাবু প্রকাশ্যে সিপিআইএম দলকে নিয়ে নানান কুকথা বলে যাচ্ছেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত সিপিআইএম কৈলাসহর মহকুমা কমিটির সম্পাদক অঞ্জন রায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন যে, বিরজিত সিনহা সিপিআইএম দলের ৫টি এলসি নিয়ে যে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন তাতে বিরজিত সিনহা নিজেই নিজের ছোট মানষিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়াও উনি বলেন যে, ২০২৩সালের বিধানসভা ভোটে যদি সিপিআইএম দলের কর্মী সমর্থকরা ভোট না দিতো তাহলে কোনো অবস্থাতেই বিরজিত সিনহা ভোটে জয়ী হতে পারতেন না বলেও জানান।