অখিলেশ যাদবকে আটকানো, জেপিএনআইসি-তে সপা কর্মীদের বিক্ষোভ

লখনউ, ১১ অক্টোবর: লখনউতে সমাজবাদী পার্টির (সপা) প্রধান অখিলেশ যাদবকে জয়প্রকাশ নারায়ণ আন্তর্জাতিক কেন্দ্র (জেপিএনআইসি)-তে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়ায় তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সমাজবাদী নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণের জন্মবার্ষিকী। ওই উপলক্ষে অখিলেশ যাদব সেখানে গিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে চাইলেও পুলিশ তাঁকে আটকে দেয়। প্রশাসনের দাবি, জেপিএনআইসি-তে নির্মাণকাজ এবং নিরাপত্তার কারণে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে অখিলেশ যাদব প্রশ্ন তোলেন, “সরকার টিনের ব্যারিকেডের আড়ালে কী লুকাতে চাইছে? আমাদের কেন থামানো হচ্ছে? আমরা তো একজন মহান নেতাকে শ্রদ্ধা জানাতে যাচ্ছি।” এই ঘটনার প্রতিবাদে সমাজবাদী পার্টির বহু কর্মী ব্যারিকেড ভেঙে প্রবেশ করে মূর্তিতে মাল্যদান করেন এবং বিক্ষোভ দেখান।

এই ঘটনার মধ্যেই শুক্রবার সন্ধ্যায় অখিলেশ যাদবের অফিসিয়াল ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হঠাৎ করেই সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়, যা নিয়ে শুরু হয় আরেকটি রাজনৈতিক বিতর্ক। সপা নেতা ও কর্মীরা দাবি করেন, এটি শুধুমাত্র একটি প্রযুক্তিগত বিষয় নয়, বরং এটি গণতান্ত্রিক মতপ্রকাশের ওপর আক্রমণ। অখিলেশ যাদব নিজে জানান, তাঁর অ্যাকাউন্ট বন্ধ হওয়ার কারণ হিসেবে ‘প্রাপ্তবয়স্কদের যৌন শোষণ ও সহিংসতা’ সম্পর্কিত অভিযোগ দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন, “আমার পোস্টে বলিয়ার এক মহিলার রহস্যজনক মৃত্যু এবং এক সাংবাদিকের হত্যার প্রসঙ্গ ছিল। এই সব ইস্যু তুলে ধরার জন্যই আমার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে। বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি, মিথ্যা FIR, এসবের বিরুদ্ধে আমি কথা বলেছি।”

এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন সপা সাংসদ রাজীব রবি। তিনি বলেন, “ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের নেতার অ্যাকাউন্ট বন্ধ গণতন্ত্রের ওপর সরাসরি আঘাত। এটি যদি শাসক দলের নির্দেশে হয়ে থাকে, তবে তা স্পষ্ট কাপুরুষতা।” সপা মুখপাত্র ফখরুল হাসান চান্দ অভিযোগ করেন, দেশে বর্তমানে এক ধরনের ‘ঘোষণা না করা জরুরি অবস্থা’ চলছে এমএলএ পূজা শুক্লা বলেন, “ফেসবুক তাদের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। এটি কেবল একটি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট নয়—এটি অখিলেশ যাদব, যিনি কোটি মানুষের কণ্ঠস্বর।”

এদিকে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব দাবি করেছেন, ফেসবুকের সিদ্ধান্তে সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। তিনি জানান, “ফেসবুক তাদের নিজস্ব নীতিমালার ভিত্তিতে অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। সরকারের এতে কোনও হাত নেই।” যদিও অখিলেশ যাদবের অ্যাকাউন্ট পরে পুনরুদ্ধার করা হয় এবং তিনি শনিবার সকালে ফেসবুকে জয়প্রকাশ নারায়ণের একটি উদ্ধৃতি পোস্ট করেন: “সম্পূর্ণ বিপ্লব বলতে আমি বুঝি সমাজের সবচেয়ে নিপীড়িত মানুষকে ক্ষমতার শিখরে পৌঁছে দেওয়া।”

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে অখিলেশ যাদব বলেন, “আমরা বুঝেছি যে যত বেশি মাঠে কাজ করব, ততই আমাদের লড়াই সফল হবে। তাই এখন থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার পরিবর্তে মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগই হবে আমাদের প্রধান হাতিয়ার।” সামগ্রিকভাবে এই দুই ঘটনা সমাজবাদী রাজনীতির নতুন দিশা এবং রাজনৈতিক মতপ্রকাশের ওপর চাপ নিয়ে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।