আগরতলা, ৫ অক্টোবর: ত্রিপুরায় প্রবেশের মুখে আসামের চুরাইবাড়ি চেকপোস্টে কলকাতা থেকে আগরতলাগামী লরিতে উদ্ধার প্রচুর নেশাসামগ্রী। ধৃত লরি চালক। অসমের শ্রীভূমি জেলার চুরাইবাড়ি ওয়াচ পোস্টে আটক হওয়া নেশাজাতীয় কফ সিরাপ বোঝাই ট্রাক ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে অসম-ত্রিপুরা সীমান্তে। শুক্রবার রাতে আটক করা ট্রাকটি রবিবার সকালে সিজ দেখানো হয়, আর এই দুই রাত একদিন গোপন রাখার রহস্য ঘিরে উঠেছে হাজারো প্রশ্ন।
সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার রাত আনুমানিক পৌনে বারোটার সময় পশ্চিমবঙ্গ থেকে ত্রিপুরাগামী ডাব্লিউবি-২৩ -ডি – ৭১৭৬ নম্বরের একটি বারো চাকার লরি অসমের শ্রীভূমি জেলার চুরাইবাড়ি ওয়াচ পোস্টে পৌঁছালে কর্তব্যরত অসম পুলিশ গাড়িটি থামিয়ে তল্লাশি চালায়। প্রথমে ট্রাকটিতে পিচ বোঝাই বলে দাবি করা হলেও, গভীরভাবে অনুসন্ধান চালিয়ে পিছের ড্রামের আড়ালে মজুত পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণ এসকফ নামক নেশাজাতীয় কফ সিরাপ।
অসম পুলিশ জানিয়েছে, মোট ১৪৪টি কার্টুন থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ২১,৬০০ বোতল কফ সিরাপ। প্রতিটি কার্টুনে ছিল ১৫০টি করে বোতল। কালোবাজারে এর আনুমানিক মূল্য এক কোটি আট লক্ষ টাকা। পুলিশ আটক করেছে ট্রাকের চালক সৈয়দ আফ্রিদিকে, যার বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে, বারো হাজার টাকার বিনিময়ে মালটি পশ্চিমবঙ্গের মালদা এলাকা থেকে নিয়ে এসেছিল এবং পণ্যটির প্রকৃত মালিক সম্পর্কে তার কোনও ধারণা নেই।
তবে এখানেই শেষ নয়। অসম পুলিশের এক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ট্রাকটি শুক্রবার রাতেই আটক করা হলেও, রবিবার সকালে এসে তল্লাশি ও সিজ দেখানোর ঘটনা সন্দেহ উত্থাপন করেছে। অভিযোগ, এই সময়ের মধ্যে ট্রাক থেকে প্রায় সিংহভাগ কফ সিরাপ রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গেছে। সূত্র জানিয়েছে,শুক্রবার রাতে অসম-ত্রিপুরা সীমান্ত এলাকায় এএস নম্বরের দুটি ওয়াগনার গাড়িকে সন্দেহজনকভাবে চক্কর কাটতে দেখা যায়। সূত্রের দাবি, ওই দুই রাতের মধ্যে ট্রাক থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কফ সিরাপ সরিয়ে ফেলার পর বাকি অংশ রবিবার সকালে সিজ দেখানো হয়।
ফলে প্রশ্ন উঠছে — রক্ষকই যদি ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তবে নেশা ব্যবসার বিস্তার রোধ হবে কীভাবে? অসম পুলিশের অভ্যন্তরেই এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাকি শুরু হয়েছে ঠান্ডা যুদ্ধ। এদিকে, ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে অসম পুলিশ। তবে পুরো ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করছে স্থানীয় মহল, যাতে সত্য প্রকাশ্যে আসে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

