বোগোটা, ২ অক্টোবর : কংগ্রেস নেতা ও লোকসভায় বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী ফের কেন্দ্রীয় মোদি সরকারের কড়া সমালোচনা করলেন। কলম্বিয়ার এনভিগাডোতে অবস্থিত ইআইএ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, ভারতের সবচেয়ে বড় শক্তি হল তার বহুত্ববাদ বিভিন্ন ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির সহাবস্থান। আর এই সহাবস্থানের জন্য একমাত্র কার্যকর পদ্ধতি হল গণতন্ত্র। কিন্তু আজ সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা একটি সংগঠিত আক্রমণের মুখে পড়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, ভারতের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য একটা সুপরিকল্পিত প্রয়াস চলছে। রাহুল গান্ধীর মতে, ভারতের কাঠামো এমন একটি বিকেন্দ্রীকৃত ও জটিল ব্যবস্থা, যেখানে কেন্দ্রীভূত শাসনের স্থান নেই। চীনের মতো একনায়কতান্ত্রিক মডেল ভারতের বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খায় না, বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ভারত একটি চলমান সংলাপ এর প্রতিটি নাগরিকের মধ্যে এক আলোচনা। আর এই সংলাপের ভিত্তি হল গণতন্ত্র, যা না থাকলে বহু মত ও ঐতিহ্য একসঙ্গে টিকে থাকতে পারে না।
বিশ্ব রাজনীতিতে ভারতের অবস্থান সম্পর্কেও তিনি মন্তব্য করেন। রাহুল গান্ধী বলেন, ব্রিটিশরা কয়লা ও স্টিম ইঞ্জিন যুগে নেতৃত্ব দিয়েছে, আমেরিকানরা পেট্রল ও ইন্টারনাল কম্বাসশন ইঞ্জিন যুগে আধিপত্য বিস্তার করেছে। এখন বিশ্ব এগোচ্ছে ব্যাটারি ও ইলেকট্রিক মোটরের যুগে। এই প্রতিযোগিতায় এখন প্রধান লড়াই আমেরিকা ও চীনের মধ্যে, আর ভারত এই সংঘাতের কেন্দ্রে অবস্থান করছে।
তিনি উল্লেখ করেন, চীন বর্তমানে এই প্রযুক্তিগত দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে। ভারত যদি এই দৌড়ে এগোতে চায়, তবে তাকে এমন একটি উৎপাদন মডেল গড়ে তুলতে হবে, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খায় এবং চীনের সাফল্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে, বলেন গান্ধী।
দেশের বেকারত্ব প্রসঙ্গেও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ভারতের সার্ভিস নির্ভর অর্থনীতি পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারছে না। এই সমস্যা যদি সমাধান না হয়, তাহলে সমাজে আরও বিভাজন ও অসন্তোষ দেখা দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেরুকরণ রাজনীতির সঙ্গেও তিনি তুলনা টানেন। তিনি বলেন, যে মার্কিন নাগরিকরা চাকরি হারিয়েছে, মূলত তারাই ট্রাম্পের প্রচারে সবচেয়ে বেশি সাড়া দিয়েছিল। ভারতেও যদি মানুষের অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ না হয়, তাহলে গণতন্ত্র দুর্বল হতে বাধ্য।
এছাড়াও তিনি আঞ্চলিক ভাষা ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করার গুরুত্বের ওপর জোর দেন এবং বলেন, ভারতের বৈচিত্র্যই তার শক্তি। যদি কেউ তা দমন করতে চায়, তা হলে তা দেশের জন্য ক্ষতিকর হবে।
রাহুল গান্ধীর এই বক্তব্য ঘিরে নতুন করে রাজনৈতিক চর্চা শুরু হয়েছে, বিশেষ করে এমন সময়ে যখন ভারতের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশ্ন উঠছে।

