প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-এর শ্রদ্ধাঞ্জলি ভারত রত্ন এম. বিশ্বেশ্বরাইয়ার প্রতি, ইঞ্জিনিয়ার্স ডে-তে দেশজুড়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য

নয়াদিল্লি, ১৫ সেপ্টেম্বর: সারা দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হল ইঞ্জিনিয়ার্স ডে, যা ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পথিকৃত স্যার মোক্ষগুন্ডম বিশ্বেশ্বরাইয়ার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে উদযাপিত হয়। ১৮৬১ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর কর্ণাটকের মুদেনাহল্লিতে জন্মগ্রহণ করা এই প্রতিভাবান প্রকৌশলী তাঁর অসামান্য কাজ ও পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারতের পরিকাঠামোগত উন্নয়নে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। এই বিশেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে. পি. নাড্ডা তাঁকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং দেশের প্রকৌশলীদের অবদানের প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী আজ এক্স (প্রাক্তন টুইটার)-এ একটি বার্তা দিয়ে লেখেন, “আজ ইঞ্জিনিয়ার্স ডে-তে আমি স্যার এম. বিশ্বেশ্বরাইয়াকে শ্রদ্ধা জানাই, যাঁর প্রতিভা ভারতের প্রকৌশল ক্ষেত্রকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। আমি দেশের সমস্ত প্রকৌশলীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই, যাঁরা তাঁদের সৃজনশীলতা ও সংকল্পের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত উদ্ভাবন ঘটিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছেন। আমাদের প্রকৌশলীরা ‘বিকসিত ভারত’ গঠনের সম্মিলিত প্রয়াসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন।” প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, প্রকৌশলীরা আজ কেবলমাত্র প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেই নয়, বরং জাতি গঠনের প্রতিটি স্তরে নিজেদের সক্রিয় উপস্থিতি দেখাচ্ছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-ও এক্স-এ পোস্ট করে দেশের প্রকৌশলীদের অভিনন্দন জানান এবং বিশ্বেশ্বরাইয়ার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি লেখেন, “ইঞ্জিনিয়ার্স ডে-তে সকল প্রকৌশলীদের জানাই শুভেচ্ছা। আপনারা হচ্ছেন প্রযুক্তিগত অগ্রগতির চালিকাশক্তি। আপনারা দেশকে প্রযুক্তির শিখরে পৌঁছে দিতে যে উদ্ভাবনী চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি ও নিষ্ঠার পরিচয় দিচ্ছেন, তা অতুলনীয়। ভারত রত্ন স্যার এম. বিশ্বেশ্বরাইয়ার জন্মজয়ন্তীতে আমি তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই, যিনি আমাদের দেশকে এক রূপান্তরমূলক পথের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।” অপরদিকে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে. পি. নাড্ডা তাঁর বার্তায় প্রকৌশলীদের অবদানের প্রশংসা করে লেখেন, “আপনাদের উদ্ভাবনী চিন্তা, সৃজনশীলতা এবং নিষ্ঠা আমাদের দেশের উন্নয়নের গল্পকে প্রতিদিন আরও শক্তিশালী করে তুলছে। এই দিনে আমি ভারত রত্ন স্যার বিশ্বেশ্বরাইয়াকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি, যাঁর ভাবনা ও কাজ আজও দেশের প্রকৌশলীদের অনুপ্রেরণা জোগায়।”

স্যার এম. বিশ্বেশ্বরাইয়া শুধুমাত্র এক জন অসামান্য প্রকৌশলীই নন, তিনি ছিলেন একজন দক্ষ প্রশাসক, অর্থনীতিবিদ, লেখক এবং রাষ্ট্রনায়ক। তিনি ১৯১২ থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত মাইসোর রাজ্যের দেওয়ান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতায় মাইসোর পরিণত হয় দক্ষিণ ভারতের অন্যতম উন্নত রাজ্যে। তাঁর উদ্ভাবিত ‘অটোমেটিক উইয়েড গেট’-এর নকশা আজও জল সংরক্ষণ ও সেচ ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণরাজ সাগর বাঁধ, ব্রিন্দাবন গার্ডেন, মাইসোর ইউনিভার্সিটি সহ একাধিক প্রকল্প তাঁর পরিকল্পনায় বাস্তবায়িত হয়। ১৯৫৫ সালে তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান “ভারত রত্ন” প্রদান করা হয়। তিনি অল ইন্ডিয়া ম্যানুফ্যাকচারার্স অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন এবং দেশের শিল্পক্ষেত্রেও ব্যাপক অবদান রেখেছেন।

ইঞ্জিনিয়ার্স ডে শুধু বিশ্বেশ্বরাইয়ার কীর্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো নয়, বরং বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রকৌশলীদের জন্য এক মূল্যবান অনুপ্রেরণা। আজকের দিনে দেশের নেতারা এই বার্তাই পৌঁছে দেন যে, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে একটি বিকসিত ও স্বনির্ভর ভারতের স্বপ্নপূরণে প্রকৌশলীদের ভূমিকা অপরিহার্য। বিশ্বেশ্বরাইয়ার জীবন ও কর্ম আমাদের শিখিয়ে দেয় যে, আত্মবিশ্বাস, পরিশ্রম এবং প্রজ্ঞার সমন্বয় ঘটিয়ে একজন মানুষ কিভাবে গোটা জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। আজ তাঁর জন্মদিনে গোটা দেশ তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে, নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণে।
বর্তমানে দেশের প্রকৌশল ব্যবস্থার রূপরেখা যে কতটা বিস্তৃত ও অগ্রসর হয়েছে, তার একাধিক দৃষ্টান্ত উঠে এসেছে সাম্প্রতিক সরকারি কর্মসূচিতে। ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’, ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা ’, ‘পিএম-ডিভাইন’, এবং ‘নর্থ-ইস্ট স্পেশাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট স্কিম ’ – এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে রেল, সড়ক এবং গ্রামীণ সংযোগে বিপুল উন্নয়ন সাধন করছে কেন্দ্রীয় সরকার। রেল মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রণালয় এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রকের যৌথ উদ্যোগে ভারত আজ এক নতুন যুগে প্রবেশ করছে, যেখানে প্রকৌশলীদের দক্ষতা দেশ গঠনের অন্যতম স্তম্ভ হয়ে উঠেছে।

একইসঙ্গে প্রযুক্তি ক্ষেত্রেও ভারত এখন একটি বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। স্ট্যানফোর্ডের এআই ইনডেক্স ২০২৪ অনুযায়ী, এআই স্কিল পেনিট্রেশনে ভারত এখন বিশ্বের শীর্ষে, এবং বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ চিপ ডিজাইন প্রকৌশলী ভারতের। সরকারের ‘ন্যাশনাল কোয়ান্টাম মিশন’-এর লক্ষ্য ২০৩১ সালের মধ্যে ১,০০০ কিউবিটের কোয়ান্টাম কম্পিউটার নির্মাণ, যা প্রযুক্তির সীমারেখা পেরিয়ে ভারতের ভবিষ্যৎকে সংজ্ঞায়িত করবে। এসব প্রকল্পে শিক্ষা মন্ত্রক, ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক, এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরের মতো সংস্থাগুলির উদ্যোগ, নীতিগত সহায়তা এবং গবেষণা ও উন্নয়নকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা অবকাঠামো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

এছাড়াও, ভারতে প্রকৌশল শিক্ষা ও গবেষণার প্রসার ঘটছে দ্রুত হারে। শুধুমাত্র বড় শহর নয়, বরং গ্রামীণ ও আধা-নগরাঞ্চলেও তৈরি হচ্ছে এআই, ডেটা সায়েন্স ও কোয়ান্টাম টেকনোলজির ল্যাব, বাড়ছে অনলাইন শিক্ষা ও ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাকাডেমিয়া সহযোগিতা। এই ‘ডিজিটাল ডেমোক্রেটাইজেশন’-এর ফলে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন আর শুধুমাত্র মেট্রো শহরগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না, বরং ভারতের টিয়ার-2 ও টিয়ার-3 শহরগুলিও এই নতুন দিগন্তে শামিল হচ্ছে।

এমন এক সময়ে যখন বিশ্ব জুড়ে প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা চরমে, ভারত তার বিশাল প্রকৌশল প্রতিভা ও নীতিগত সমর্থনের মাধ্যমে কেবলমাত্র আত্মনির্ভরতা অর্জনের পথে নয়, বরং বৈশ্বিক নেতৃত্বের দিকে এগিয়ে চলেছে। আজকের ইঞ্জিনিয়ার্স ডে-তে তাই শুধু অতীতের কৃতিত্বকে স্মরণ করাই নয়, বরং বর্তমান ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকেও উদযাপন করা হচ্ছে।

স্যার এম. বিশ্বেশ্বরাইয়ার মতো মানুষ যাঁরা কঠোর পরিশ্রম, উদ্ভাবনী মনোভাব ও জাতির প্রতি দায়বদ্ধতার মধ্য দিয়ে এক নতুন ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন—তাঁদের স্মরণে আজকের দিনে প্রকৌশলীরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হচ্ছেন এক বিকসিত ভারত ২০৪৭-এর জন্য, যেখানে প্রযুক্তির মাধ্যমে গড়ে উঠবে এক টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ।