মণিপুরে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

নয়াদিল্লি, ১৩ সেপ্টেম্বর : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ মণিপুরের চুরাচাঁদপুরে প্রায় ৭,৩০০ কোটি টাকার একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন। এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মণিপুরকে সাহস ও সংকল্পের ভূমি হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, “মণিপুরের পাহাড় প্রকৃতির অমূল্য দান, যা মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমের প্রতীক।”

মোদি জানান, প্রায় ৭,০০০ কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে, যা বিশেষ করে পাহাড়ি ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার উন্নতি ঘটাবে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন সুবিধা তৈরি হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০১৪ সালের পর থেকে আমরা মণিপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। আজ শত শত গ্রাম সড়ক যোগাযোগের আওতায় এসেছে। নতুন নতুন জাতীয় সড়ক প্রকল্পও দ্রুত এগোচ্ছে।” তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ৩,৭০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে জাতীয় সড়ক উন্নয়নে এবং আরও ৮,৭০০ কোটি টাকার প্রকল্প কাজ চলছে।

রেল যোগাযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিরিবাম–ইম্ফল রেললাইন প্রকল্পে ২২,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে, যা ইম্ফলকে জাতীয় রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করবে। এছাড়া ৪০০ কোটি টাকায় নির্মিত ইম্ফল বিমানবন্দর এবং হেলিকপ্টার সেবা চালুর ফলে রাজ্যের বিমান যোগাযোগও উন্নত হয়েছে।

মোদি উল্লেখ করেন, কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই মণিপুরে প্রায় ৬০,০০০ পরিবারকে পাকা বাড়ি দিয়েছে, ১ লক্ষাধিক পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে এবং ৩.৫ লক্ষ পরিবারের ঘরে নলকূপের জল পৌঁছে দিয়েছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে চুরাচাঁদপুরে মেডিকেল কলেজ চালু হয়েছে এবং আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে প্রায় ২.৫ লক্ষ রোগী বিনামূল্যে চিকিৎসা পেয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মণিপুরে শান্তি প্রতিষ্ঠা ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। উত্তর-পূর্বের বহু দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সমাধান আমরা গত ১১ বছরে করেছি। সংলাপ, শ্রদ্ধা ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমেই আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছি।”

তিনি ঘোষণা করেন, বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলির জন্য ৭,০০০ নতুন বাড়ি নির্মাণ করা হবে এবং এ উদ্দেশ্যে প্রায় ৩,০০০ কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ অনুমোদিত হয়েছে।

আদিবাসী উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানান, ধরতি আবা জনজাতীয় গ্রাম উৎকর্ষ অভিযান-এর আওতায় মণিপুরের ৫০০-র বেশি গ্রামে কাজ চলছে। পাশাপাশি ১৮টি একলব্য মডেল আবাসিক স্কুল গড়ে তোলা হচ্ছে।

নারী উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মণিপুরের সংস্কৃতিই নারীশক্তিকে উৎসাহিত করে। সরকারও মেয়েদের জন্য ৯টি স্থানে কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল তৈরি করছে।”

প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন, “মণিপুরকে শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির প্রতীক করে তুলতে কেন্দ্র সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।”

অনুষ্ঠানে মণিপুরের রাজ্যপাল অজয় কুমার ভল্লা এবং অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।