নয়াদিল্লি, ১৩ সেপ্টেম্বর : পাহালগামে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক সন্ত্রাসবাদী হামলার পর, আসন্ন ভারত-পাকিস্তান এশিয়া কাপ ম্যাচ ঘিরে দেশজুড়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। একদিকে যখন একাধিক রাজনৈতিক দল এই ম্যাচ বয়কটের দাবি তুলেছে, তখন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, ভারতের আপত্তি বরাবরই দ্বিপাক্ষিক সিরিজ নিয়ে, বহুপাক্ষিক টুর্নামেন্ট নিয়ে নয়।
শনিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে ওমর আবদুল্লাহ বলেন, “আমাদের সমস্যা সবসময় ছিল দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে। আমার মনে হয় না যে আমরা কখনও বহুপাক্ষিক টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলার বিরোধিতা করেছি। আপনি বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে পারেন না।”
তিনি আরও বলেন, “আমার রাজ্য সরাসরি এর শিকার হয়েছে। আমরা সবাই পাহালগামে কী ঘটেছে, তা দেখেছি। এগুলো বাস্তব আশঙ্কা।”
২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পাহালগামে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলায় ২৬ জন প্রাণ হারান। হামলায় নিহতদের অধিকাংশই পর্যটক ছিলেন। এই ঘটনার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আরও তলানিতে গিয়ে ঠেকে, এবং এই প্রেক্ষিতেই এশিয়া কাপে দুই দেশের মধ্যকার ম্যাচ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক।
কেন্দ্রীয় সরকারের ক্রীড়ানীতি অনুযায়ী, ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলবে না। তবে বহুপাক্ষিক টুর্নামেন্ট যেমন এশিয়া কাপ ও আইসিসি ইভেন্টে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ অনিবার্য বলেই বিবেচিত হচ্ছে।
এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হওয়াকে কেন্দ্র করে কেন্দ্র সরকার এবং বিসিসিআই-এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে একাধিক বিরোধী দল।
শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী) প্রধান উদ্ধব ঠাকরে জানিয়েছেন, “এই ম্যাচ বয়কট করাই সঠিক বার্তা দিতে পারে যে ভারত সন্ত্রাসবাদকে কোনোভাবেই সমর্থন করে না। আমরা রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ করব।”
দলের সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী বলেন, “পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো সম্পর্ক রাখব না বলেছিলাম। কিন্তু এখন আবার সেই দেশের সঙ্গে ক্রিকেট খেলা হচ্ছে।”
আম আদমি পার্টি-র দিল্লি ইউনিটের প্রধান সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, “পাহালগাম হামলায় যারা স্বামী হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি এই সিদ্ধান্ত চরম অসম্মান। এই ম্যাচ দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করছে।”
তিনি আরও জানান, AAP কর্মীরা ক্লাব, রেস্তোরাঁ ও পাবগুলিতে ম্যাচ দেখানো হলে সেগুলিকে “এক্সপোজ” করবেন, যাতে মানুষ সেখানে না যায়।
এদিন বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর জানান, “ACC এবং ICC-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া বাধ্যতামূলক। দ্বিপাক্ষিক ম্যাচ আমরা বন্ধ রেখেছি এবং তা চলবে যতদিন না পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করে।”
১৪ সেপ্টেম্বর রবিবার অনুষ্ঠিত হতে চলা ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে উত্তেজনার পারদ চড়ছে। একদিকে নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থ, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া নীতি—এই দ্বন্দ্বের মাঝেই ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার পথে এগোচ্ছে। সরকার ও ক্রীড়া প্রশাসন কী অবস্থান নেয়, এখন সেদিকেই নজর দেশবাসীর।

