অসমে অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্ত ও বহিষ্কারে বড় সিদ্ধান্ত, ১৯৫০ সালের আইন কার্যকর করতে এসওপি অনুমোদন রাজ্য মন্ত্রিসভায়

দিসপুর, ১০ সেপ্টেম্বর: অসম সরকার রাজ্যে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের দ্রুত সনাক্তকরণ ও বহিষ্কারের জন্য ” অভিবাসী (আসাম থেকে বহিষ্কার) আইন, ১৯৫০” আইনের প্রয়োগে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর অনুমোদন করল। মঙ্গলবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছেন, এবার থেকে এই আইন পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হবে, যাতে অবৈধ বিদেশিদের সহজে চিহ্নিত করে দ্রুত বহিষ্কার করা যায়।

নতুন এসওপি অনুযায়ী, প্রতিটি জেলার ডেপুটি কমিশনার কোনও ব্যক্তিকে বিদেশি বলে সন্দেহ হলে তাঁকে ১০ দিনের একটি নোটিস দেবেন, যার মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যর্থ হলে, ডেপুটি কমিশনার সরাসরি তাঁকে বহিষ্কারের আদেশ জারি করতে পারবেন। পরবর্তীতে ওই ব্যক্তিকে হোল্ডিং সেন্টারে রাখা হবে এবং সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী-এর মাধ্যমে দেশছাড়া করা হবে।

যদি কোনও ব্যক্তিকে রাজ্যে প্রবেশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে শনাক্ত করা যায়, তবে এই ক্ষেত্রে কোনও নোটিস দেওয়ার প্রয়োজন হবে না, সরাসরি বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

যেসব ক্ষেত্রে ডেপুটি কমিশনার নিশ্চিতভাবে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবেন না, সেসব বিষয়ে মামলা ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল-এ পাঠানো হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে রাজ্যে প্রায় ৮২ হাজার মামলা ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে, যা দীর্ঘসূত্রিতা ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সাংবাদিক বৈঠকে জানান, সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে যে, সংবিধানের ধারা ৬এ বহাল রেখেই অসম সরকার ১৯৫০ সালের এই আইন প্রয়োগে সম্পূর্ণ স্বাধীন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই প্রথম রাজ্য মন্ত্রিসভা ১৯৫০ সালের এই আইনকে পূর্ণভাবে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এখন থেকে অসম সরকার স্পষ্টভাবে অবৈধ বিদেশিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারবে এবং রাজ্যের নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করতে পারবে।”

উল্লেখযোগ্য, ভারতীয় সংসদ ১৯৫০ সালে এই আইন প্রণয়ন করে, যা মূলত পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতে প্রণীত হয়েছিল। এই আইনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার অসমে বসবাসকারী সেইসব ব্যক্তিদের দেশছাড়া করতে পারে, যাদের উপস্থিতি জনস্বার্থ কিংবা আদিবাসীদের স্বার্থে ক্ষতিকর বলে বিবেচিত হয়।

রাজ্য সরকারের মতে, নতুন এসওপি কার্যকর হলে রাজ্যে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ সম্ভব হবে। এই পদক্ষেপকে সরকার “জনস্বার্থে প্রয়াস” হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে।