ভারতীয় রপ্তানির ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর, বাণিজ্য দ্বন্দ্ব ও ভূরাজনৈতিক চাপের ইঙ্গিত

ওয়াশিংটন, ২৮ আগস্ট: ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করেছে, যা বুধবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রয়োগ হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ৬ আগস্ট জারি করা নির্বাহী আদেশ ১৪৩২৯-এর অধীনে এই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়, যেখানে আগের শুল্কের সঙ্গে আরও ২৫ শতাংশ যুক্ত করে মোট শুল্ক হার ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে। মার্কিন শুল্ক ও সীমান্ত সুরক্ষা সংস্থা এই আদেশ কার্যকর করার মাধ্যমে, ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। হোয়াইট হাউস স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র বাণিজ্যঘাটতির জন্য নয়, বরং বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক কৌশলের অংশ। জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের পরিচালক কেভিন হ্যাসেট বলেন, ভারত-মার্কিন সম্পর্ক জটিল হয়ে উঠেছে এবং এর পেছনে রয়েছে দুই দেশের মধ্যে বাজার উন্মুক্তকরণে ভারতীয় অনমনীয়তা ও ভারতের রাশিয়ার তেল আমদানি অব্যাহত রাখা। তিনি বলেন, “আমরা যখন রাশিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করছি যুদ্ধ বন্ধের জন্য, তখন ভারতের ভূমিকা আমাদের কৌশলগত অবস্থানকে দুর্বল করছে। পাশাপাশি, ভারত এখনও মার্কিন পণ্যের জন্য তাদের বাজার যথাযথভাবে উন্মুক্ত করছে না, যা বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষায় বাধা দিচ্ছে।”

হ্যাসেট আরও বলেন, “বাণিজ্য আলোচনা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, যেখানে সময়ে সময়ে ওঠানামা থাকবে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন, যদি ভারত নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” এই মন্তব্যগুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, আগামী দিনে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে আরও চাপ সৃষ্টি হতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ এমন সময়ে এল যখন যুক্তরাষ্ট্র চাইছে, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার উপর আরও কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ বাড়াতে, এবং ভারত যাতে রাশিয়ার সাথে জ্বালানি বাণিজ্যে কিছুটা হলেও সংযম দেখায়।

অন্যদিকে, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে যে, তারা নিজেদের “কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন” এবং “জাতীয় স্বার্থ” থেকে একচুলও সরবে না। ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ভারত তার রপ্তানিভিত্তিক অর্থনীতির উপর খুব বেশি নির্ভরশীল নয়। বর্তমানে ভারতের জিডিপি-র প্রায় ৬০ শতাংশ আসে অভ্যন্তরীণ ভোক্তা ব্যয়ে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি এর মাত্র ২ শতাংশের সমান। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার, তবুও ভারত সরকার মনে করে, এই চাপ সামাল দেওয়ার মতো আর্থিক ভিত্তি ও কৌশল ভারতের আছে। এই শুল্ক বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে, ভারত সরকার দ্রুত অর্থনৈতিক স্থিতি রক্ষার জন্য বেশ কয়েকটি নীতিগত পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মধ্যে জিএসটি পুনর্গঠন, রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যবসায়িক আস্থা ফেরানোর মতো উদ্যোগ রয়েছে। সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, “আমরা ইতিমধ্যেই সম্ভাব্য প্রভাবের একটি বিশ্লেষণ করেছি এবং সেই অনুযায়ী সেক্টরভিত্তিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করছি। ভারতীয় শিল্প ও রপ্তানিকারকদের পাশে থাকবে সরকার।”

এই পরিস্থিতিতে স্পষ্ট যে, ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ক এক নতুন ও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে, যেখানে অর্থনৈতিক চাপের পাশাপাশি ভূরাজনৈতিক চাপও জোরদার হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের মতো উদীয়মান অর্থনীতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি হলেও, দেশীয় স্বার্থ রক্ষায় কোনও আপস না করেই ভারসাম্য রক্ষা করাই হবে ভারতের মূল চ্যালেঞ্জ।