গ্রেটার নয়ডা, ২৮ আগস্ট: নিকি ভাটির (২৮) রহস্যময় মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় চলছে উত্তরপ্রদেশের গ্রেটার নয়ডার সিরসা এলাকায়। প্রথমে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণে আগুন লেগে তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হলেও, পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে একটি খালি থিনারের বোতল এবং একটি লাইটার উদ্ধার করা হয়েছে, যা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত অগ্নিদগ্ধের ঘটনা।
ঘটনাটি ঘটে ২১ আগস্ট, যখন অভিযোগ অনুযায়ী নিকিকে তার স্বামী বিপিন ভাটি এবং শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা আগুন লাগিয়ে হত্যা করে। নিকি গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হলেও শেষপর্যন্ত তার মৃত্যু হয়। পুলিশ জানায়, নিকি প্রথমে হাসপাতালের কর্মীদের জানিয়েছিলেন যে একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে তদন্তে উঠে আসে, সিলিন্ডার সম্পূর্ণ অক্ষত ছিল এবং রান্নাঘরেও কোনো ধরনের বিস্ফোরণের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
কাসনা থানার এসএইচও ধর্মেন্দ্র শুক্লা বলেন, “নিকি সম্ভবত ইচ্ছাকৃতভাবে সত্য গোপন করেছিলেন যাতে কেউ জেলে না যায়। বিশেষ করে, তিনি তার বোন কাঞ্চনকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন, যিনি একই পরিবারের অন্য ভাই রোহিত ভাটির স্ত্রী।” উল্লেখ্য, নিকি এবং কাঞ্চন ২০১৬ সালে ভাটি পরিবারের দুই ভাই বিপিন ও রোহিতের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
নতুন প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে নিকির বোন কাঞ্চনের মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও, যেখানে তাকে আগুনে দগ্ধ নিকিকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়। কাঞ্চন পুলিশকে জানান, তিনি চিৎকার শুনে দৌড়ে আসেন এবং দেখেন নিকি সিঁড়ির ধারে আগুনে পুড়ছেন এবং বিপিন কাছেই দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণের পাশাপাশি পানি ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পরে তিনি মূর্ছা যান এবং নিকিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিকভাবে নিকির পরিবার ময়নাতদন্তে অনিচ্ছা প্রকাশ করলেও পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে রাজি হন। নিকির ভাই ভিকি পাইল বলেন, “আমরা তার মৃতদেহে আর কোনো ক্ষতি হোক চাইনি, তাই প্রথমে ময়নাতদন্ত চাইনি। তবে পরে আলোচনা করে রাজি হই।”
এই ঘটনায় অভিযুক্ত বিপিন ভাটি, তার মা দয়া, বাবা সতবীর এবং ভাই রোহিত ভাটিকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার সামনে আসে একটি সিসিটিভি ফুটেজ, যেটি ঘটনার সময় ভাটি পরিবারের বাড়ির কাছে এক দোকানের বাইরে একজন পুরুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। পুলিশ বলছে, ফুটেজে থাকা ব্যক্তি সম্ভবত বিপিন ভাটি।
তদন্তকারীদের মতে, নিকি নিজের শেষ কথায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কথা বলে শ্বশুরবাড়ির কাউকে সরাসরি দোষ না দিয়ে হয়তো তার বোনের ভবিষ্যতের কথা ভেবে চুপ ছিলেন। তবে থিনার বোতল, লাইটার এবং ঘটনাস্থলের প্রমাণাদি পুরো বিষয়টিকে একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে প্রমাণ করছে।
এই ঘটনাটি এখন শুধু একটি গার্হস্থ্য সহিংসতা নয়, বরং প্রমাণ লোপাট, আত্মীয়রক্ষা এবং ন্যায়বিচার প্রশ্নে এক জটিল ও চাঞ্চল্যকর মামলায় পরিণত হয়েছে। তদন্ত এখনও চলছে এবং পুলিশের তরফ থেকে আরও তথ্য সামনে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

