ভারতের একমাত্র সরবরাহ শৃঙ্খল বা বাজারের উপর নির্ভরশীলতা থেকে বিরত থাকার আহ্ববান এস জয়শঙ্করের

নয়াদিল্লি, ২৫ আগস্ট : পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সম্প্রতি ইটি ওয়ার্ল্ড লিডার্স ফোরামে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে ভারত শিখেছে যে একমাত্র সরবরাহ শৃঙ্খল বা বাজারের উপর নির্ভরতা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই তিনি দেশের শিল্পমহলকে সরবরাহ ও বাজার বৈচিত্র্যকরণকে কৌশলগত সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহণ করার পরামর্শ দেন। তাঁর মতে, চীনের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা এবং আমেরিকার উচ্চ শুল্ক আরোপ ভারতীয় ব্যবসাগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

জয়শঙ্কর মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সাম্প্রতিক ধারা নিয়েও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে শুরু হওয়া পররাষ্ট্রনীতির পদ্ধতি ঐতিহাসিকভাবে এক বড় প্রস্থান। তিনি উল্লেখ করেন, আগে কখনো কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট এতটা প্রকাশ্যে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করেননি। শুল্কের ব্যবহার, বিশেষ করে অ-বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে, একেবারে নতুন রীতি বলে মন্তব্য করেন তিনি। ট্রাম্প প্রশাসনের আচরণ যে ভারতের ক্ষেত্রেই আলাদা, তা নয় বলেও তিনি স্পষ্ট করেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে রুশ তেল আমদানি নিয়ে পশ্চিমা সমালোচনারও জবাব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ইউরোপ এবং চীন যখন রাশিয়ার কাছ থেকে বিশাল পরিমাণে জ্বালানি আমদানি করছে, তখন শুধু ভারতের দিকেই আঙুল তোলা কতটা যৌক্তিক। তিনি বলেন, “যদি কারও ভারত থেকে তেল বা পরিশোধিত পণ্য কেনা নিয়ে সমস্যা থাকে, তারা না কিনলেই পারেন। কেউ তো জোর করছে না।” তিনি আরও বলেন, “প্রো-বিজনেস আমেরিকান প্রশাসনের কর্মকর্তারা যদি অন্যদের ব্যবসা নিয়ে অভিযোগ তোলেন, সেটা তো বেশ মজার ব্যাপার।”

ভারত-মার্কিন বাণিজ্য আলোচনা নিয়েও বক্তব্য রাখেন জয়শঙ্কর। যদিও মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের এই সপ্তাহের সফর স্থগিত হয়েছে, তবুও আলোচনার পথ খোলা রয়েছে বলেই জানান তিনি। তাঁর ভাষায়, “আমাদের কিছু স্পষ্ট ‘লাল দাগ’ আছে—বিশেষ করে আমাদের কৃষক এবং ক্ষুদ্র উৎপাদকদের স্বার্থ রক্ষায় আমরা আপস করব না। এটা আমাদের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের অংশ।”

ভারত-মার্কিন সম্পর্কের সামগ্রিক মূল্যায়নে জয়শঙ্কর বলেন, সম্পর্কের মধ্যে চ্যালেঞ্জ থাকলেও, বৃহৎ চিত্রটি ইতিবাচক। তিনি ২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের ভারত সফর এবং ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরকে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, “সম্পর্কে কিছু সমস্যা থাকলেও, সামগ্রিকভাবে এটি এগিয়েছে ইতিবাচক গতিপথেই।”