নয়াদিল্লি, ১৯ আগস্ট: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৯৯ শতাংশ হিমবাহ প্রতি বছর ০.০২ মিমি থেকে ২.৬৮ মিমি পর্যন্ত গলছে, যা প্রায় একটি ক্রেডিট কার্ডের প্রস্থের সমান। তবে হিমালয়ের হিমবাহগুলোর দ্রুত গলন বিশেষ চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় ধ্রুবীয় ও মহাসাগর গবেষণা কেন্দ্র-এর জুন ২০২৪-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিম হিমালয়ের সুত্রী ঢাকা হিমবাহে বরফের গভীরতা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে এবং মাউন্ট এভারেস্টের উপরের অংশে বরফের স্তর ১৫০ মিটার পর্যন্ত সঙ্কুচিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, ক্রমবর্ধমান উষ্ণতা, ব্ল্যাক কার্বন, মাইক্রোপ্লাস্টিক ও অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের ফলে এই গলনের গতি আরও বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে ভবিষ্যতে ধ্বংসাত্মক আকস্মিক বন্যা, পানির উৎসে মারাত্মক ঘাটতি এবং হিমালয় অঞ্চলের পরিবেশ ব্যবস্থায় গভীর প্রভাব পড়তে পারে।
বিশ্বজুড়ে হিমবাহ গলন নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। পাহাড়ি এলাকায় হিমবাহ গলে কৃত্রিম হ্রদের সৃষ্টি ও হঠাৎ বন্যার সম্ভাবনা বেড়েই চলেছে। ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় -এর গবেষকদের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, পৃথিবীর প্রায় ১.৮ লক্ষেরও বেশি হিমবাহ এখন দ্রুত গলে পড়ছে। গবেষণায় মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির সাহায্যে এই হিমবাহগুলোর ভবিষ্যৎ ক্ষয় ও গলনের গতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
তারা জানিয়েছেন, ৯৯ শতাংশ হিমবাহ প্রতি বছর গড়ে ০.০২ মিমি থেকে ২.৬৮ মিমি পর্যন্ত গলছে এবং ভবিষ্যতে এই হার আরও বাড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমবাহের এই দ্রুত ক্ষয় বিশ্বব্যাপী পানিসম্পদ এবং পরিবেশ ব্যবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
বিশেষ করে ভারতের হিমালয় অঞ্চল এই প্রভাবের শিকার হতে পারে। হিমবাহভিত্তিক নদীগুলির উপর নির্ভরশীল যে কোটি কোটি মানুষ, তারা ভবিষ্যতে জলের তীব্র সংকটের মুখোমুখি হতে পারেন। এনসিপিওআর-এর গবেষণায় হিমবাহের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, স্যাটেলাইট চিত্রের ভিত্তিতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে হিমবাহের আয়তন ও বরফের ঘনত্ব দিন দিন কমে আসছে।
সবমিলিয়ে, হিমালয়ের হিমবাহগুলির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যতের প্রভাব আমাদের জন্য এক গুরুতর সতর্কবার্তা। এখনই কার্যকর জলবায়ু নীতি ও পরিবেশ সংরক্ষণমূলক পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন।

