ওয়াশিংটন, ১৮ আগস্ট — ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার সাম্প্রতিক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে খারকিভ ও জাপোরিঝিয়ায় চালানো রুশ হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ডজনখানেক মানুষ।
জেলেনস্কি বলেন, “এটি একটি প্রদর্শনমূলক ও নিষ্ঠুর রুশ হামলা।” তিনি আরও বলেন, এই হামলা ছিল একটি স্পষ্ট বার্তা — শান্তি আলোচনাকে ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে।
খারকিভ শহরের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একটি আবাসিক ভবনের ছাদ ও উপরের তলা পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। আগুন নেভাতে কাজ করছে দমকল বাহিনী। শহরটির মেয়রের বরাতে জানানো হয়েছে, সেখানে সাতজন নিহত এবং প্রায় ২০ জন আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, জাপোরিঝিয়ায় পৃথক এক হামলায় নিহত হয়েছেন তিনজন এবং আহত হয়েছেন আরও প্রায় ২০ জন। রুশ পক্ষ থেকে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের চিফ অফ স্টাফ আন্দ্রিয়ি ইয়ারমাক বলেন, “পুতিন যুদ্ধবিরতি চান না। তিনি শান্তিপূর্ণ শহরগুলোর ওপর বোমা ফেলতে পছন্দ করেন, অথচ মুখে বলেন যুদ্ধ শেষ করতে চান।”
হামলার সময় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে একটি সম্ভাব্য শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে অবস্থান করছিলেন। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলছেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাশিয়া তাদের বিমান হামলার মাত্রা কিছুটা কমিয়েছিল, যা অনেকে দেখছেন মার্কিন রাজনীতিতে ট্রাম্পের সঙ্গে সখ্য বজায় রাখতে চেষ্টার অংশ হিসেবে।
কিন্তু গত মাসে মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার আলোচনার সময় রুশ ড্রোন হামলার মাত্রা বেড়ে গেলে ট্রাম্প ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “রকেট যখন একটি নার্সিং হোমে আঘাত করে, অথবা একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে হামলা চালিয়ে রাস্তায় লাশ পড়ে থাকে, তখন তা সহ্য করা যায় না।”
এরই মধ্যে ইউক্রেন পাল্টা চাপ সৃষ্টি করতে রুশ তেল পরিশোধনাগুলোর ওপর হামলা বাড়িয়েছে। কৌশলগতভাবে এই পদক্ষেপ মস্কোর রাজস্বের প্রধান উৎসে আঘাত করতে পারে।
জাতিসংঘের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়ে ইউক্রেন ও রুশ-অধিকৃত এলাকায় প্রায় ১,০০০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৭ শতাংশ বেশি।
জাতিসংঘ মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ মিশনের প্রধান ড্যানিয়েল বেল বলেন, “চার বছর ধরে চলা এই যুদ্ধ এখন বেসামরিক মানুষের জন্য আরও প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে।”
এদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সঙ্গে ফোনালাপে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাদের ‘আলাস্কা সম্মেলনের’ ফলাফল তুলে ধরেছেন বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। রামাফোসা ইউক্রেন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রিই সিবিহা হামলার ভিডিও শেয়ার করে বলেন, “রাশিয়া একটি হত্যাকারী যুদ্ধযন্ত্র। একে থামাতে হলে ট্রান্সআটলান্টিক ঐক্য ও চাপ প্রয়োজন।”

