তাইওয়ানের চারপাশে চীনের সামরিক তৎপরতা অব্যাহত, বরিস জনসনের আহ্বান: “তাইওয়ানের পাশে দাঁড়াক পশ্চিমা বিশ্ব”

তাইপেই, ১৮ আগস্ট : তাইওয়ানের চারপাশে চীনা সামরিক তৎপরতা আবারও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা পর্যন্ত তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে যে, তারা ছয়টি চীনা সামরিক বিমান এবং পাঁচটি নৌযান নিজেদের আকাশ ও সমুদ্রসীমার আশপাশে সক্রিয় অবস্থায় শনাক্ত করেছে। মন্ত্রকের মতে, এই ছয়টি বিমানের মধ্যে তিনটি মধ্যবর্তী রেখা অতিক্রম করে তাইওয়ানের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিম এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন-এ প্রবেশ করে। এক্স-এ প্রকাশিত একটি পোস্টে এমএনডি জানিয়েছে, “৬টি পিএলএ বিমানের উড্ডয়ন ও ৫টি পিএলএএন নৌযান তাইওয়ানের চারপাশে সক্রিয় অবস্থায় ছিল আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত। এর মধ্যে ৩টি বিমান মধ্যরেখা অতিক্রম করে আমাদের উত্তর এডিআইজেড-এ প্রবেশ করে। আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং যথাযথভাবে সাড়া দিচ্ছি।” চীনের এমন ঘন ঘন আকাশ ও সমুদ্রসীমা লঙ্ঘনের ঘটনা তাইওয়ান ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। উল্লেখ্য, রবিবারেও একই ধরণের তৎপরতা দেখা গিয়েছিল, যেখানে ছয়টি চীনা যুদ্ধবিমানের মধ্যে দুটি মধ্যরেখা অতিক্রম করেছিল এবং তাইওয়ানের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিম এডিআইজেড-এ প্রবেশ করেছিল। তাইওয়ানের পক্ষ থেকে এই ধরনের আচরণকে আন্তর্জাতিক নীতিমালার লঙ্ঘন ও তাইওয়ানের নিরাপত্তার প্রতি সরাসরি হুমকি বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

এদিকে, পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়ে তাইওয়ানের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। গত সপ্তাহে তাইপেইতে অনুষ্ঠিত ৯ম কেটাগালান ফোরাম ২০২৫ ইন্দো-প্যাসিফিক সিকিউরিটি ডায়ালগ-এ বক্তৃতা দিতে গিয়ে জনসন বলেন, পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে আমেরিকা, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় দেশগুলির উচিত তাইওয়ানের গণতন্ত্র, উদ্ভাবন এবং স্বাধীনতার পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানো। তিনি বলেন, “তাইওয়ান একটি গণতান্ত্রিক দেশ, উদ্ভাবনের মডেল, এবং এটি কারও জন্য হুমকি নয়। তাহলে কেন বেইজিংয়ের এত আগ্রহ এই দ্বীপটিকে দখল করার? আমরা তাইওয়ানের পাশে আছি। আমি এখানে এসেছি পশ্চিমা সংহতির বার্তা দিতে।” বরিস জনসন আরও বলেন, “যখন চীন চাপ সৃষ্টি করছে, তখন আমাদের দরকার সাহস। দরকার তাইওয়ানের পাশে দাঁড়ানোর মনোভাব। বেইজিংয়ের প্রতি নম্র হতে গিয়ে আমাদের যেন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুত না হতে হয়। আমাদের উচিত তাইওয়ানের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব আরও গভীর করা।”

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীনের এই সামরিক তৎপরতা শুধু তাইওয়ানের ভৌগোলিক অখণ্ডতাকেই চ্যালেঞ্জ করছে না, বরং সমগ্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের স্থিতিশীলতাও বিপন্ন করছে। চীন দীর্ঘদিন ধরেই তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি করে আসছে, যদিও তাইওয়ান নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখে এবং আন্তর্জাতিক মহলের স্বীকৃতির জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পিএলএ-র এই অনুপ্রবেশ মূলত চীনের তরফে শক্তি প্রদর্শন এবং পশ্চিমা দেশগুলিকে কূটনৈতিক বার্তা পাঠানোর একটি কৌশল বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রতিবারের মতো এবারও তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা বাহিনী পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং সম্ভাব্য যেকোনও বিপদের মোকাবিলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে বরিস জনসনের বক্তব্যকে তাইওয়ানের কূটনৈতিক জয় হিসেবেই দেখছে বিশ্লেষকরা, কারণ এর মাধ্যমে পশ্চিমা রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে তাইওয়ান ইস্যুতে ঐক্যের বার্তা স্পষ্ট হয়েছে। চীন-তাইওয়ান সম্পর্কের এই টানাপোড়েন এখন শুধু দ্বিপাক্ষিক নয়, বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। চীনের পক্ষ থেকে এ ধরনের সামরিক কার্যকলাপ যত বাড়বে, ততই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগও বাড়বে। তাই পরিস্থিতি কতটা স্থিতিশীল থাকবে তা এখন আন্তর্জাতিক কূটনীতির পরবর্তী পদক্ষেপের উপর নির্ভর করছে।