আপডেট : জম্মু ও কাশ্মীরের কিস্তওয়ারে ভয়াবহ মেঘবৃষ্টিতে আকস্মিক বন্যায় দুই সিআইএসএফ জওয়ান সহ মৃত ৪০, নিখোঁজ ২২০-র বেশি

কিস্তওয়ার, ১৪ আগস্ট : জম্মু ও কাশ্মীরের কিস্তওয়ার জেলার চোশিটি গ্রামে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটে গেল এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রবল মেঘভাঙ্গা বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় এখনও পর্যন্ত ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দু’জন সিআইএসএফ জওয়ান রয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১২০ জন এবং নিখোঁজ রয়েছেন ২২০ জনেরও বেশি।

বিপর্যয়টি ঘটে হিমালয়ের মাচাইল মাতা যাত্রাপথে মাতাচণ্ডীর মন্দিরে তীর্থযাত্রার ঠিক প্রারম্ভিক বিন্দুতে। মেঘভাঙ্গা বৃষ্টির পর দ্রুত জলস্রোত নেমে এসে যাত্রাপথের বিস্তীর্ণ এলাকা ভাসিয়ে দেয়। ভেঙে পড়ে বহু অবকাঠামো, ভেসে যায় লঙ্গর ও আশ্রয়স্থল।

দুর্যোগের খবর পেয়ে উদ্ধারকারী দল সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। সেনাবাহিনী, এনডিআরএফ, এসডিআরএফ এবং পুলিশ বাহিনীর যৌথ উদ্যোগে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে। দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল এবং ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্যে জীবিতদের খোঁজে চলছে অভিযান।

প্রত্যক্ষদর্শীদের শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা গেছে, তীর্থযাত্রীদের দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অপর একটি ক্লিপে দেখা যায়, বিশাল জলের তোড়ে ভেসে যাচ্ছে স্থাপনা, আর উদ্ধারকারীরা নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য চিৎকার করে সতর্ক করছেন সবাইকে।

জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ জানান, তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-কে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে নিশ্চিত তথ্য আসতে কিছুটা সময় লাগছে। তবে জম্মু-কাশ্মীরের ভেতর ও বাইরে থেকে সমস্ত সম্ভাব্য উৎস থেকে উদ্ধার তৎপরতায় সহায়তা আনা হচ্ছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, তিনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনও মন্তব্য করবেন না এবং সরকারই প্রয়োজনে তথ্য জানাবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওই মর্মান্তিক ঘটনায় গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন। তিনি এক্স-এ লেখেন, জম্মু ও কাশ্মীরের কিস্তওয়ারে মেঘভাঙ্গা বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যার ফলে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমার সমবেদনা। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চলছে। পরিস্থিতির উপর নিবিড় নজর রাখা হচ্ছে। সমস্ত ধরনের সাহায্য প্রদান করা হবে।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং বলেন, চোশিটি গ্রামের এই ঘটনা বড় মাপের প্রাণহানির কারণ হতে পারে। তিনি জানান, স্থানীয় ডেপুটি কমিশনার পঙ্কজ কুমার শর্মা এবং বিধায়ক সুনীল কুমার শর্মা-র কাছ থেকে অবহিত হয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রশাসন সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হয়েছে। উদ্ধারকারী দল রওনা হয়েছে। চিকিৎসা ও ত্রাণের ব্যবস্থা দ্রুত করা হচ্ছে।

জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা বলেন, চোশিটিতে মেঘভাঙ্গায় বৃষ্টিতে প্রাণহানিতে আমি শোকাহত। মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। আমি সিভিল প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী, এনডিআরএফ ও এসডিআরএফ-কে উদ্ধার কার্যক্রম আরও জোরদার করতে নির্দেশ দিয়েছি।

পাহাড়ি এলাকায় টানা বৃষ্টির ফলে আরও ধস ও প্লাবনের আশঙ্কা রয়েছে। নিখোঁজদের সন্ধানে ও ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে দিনরাত কাজ করছে প্রশাসন। এদিকে, ভারতজুড়ে বর্ষায় পাহাড়ি অঞ্চলে প্রবল প্রভাব পড়েছে। উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন এলাকায়ও মেঘভাঙ্গা বৃষ্টি, ভূমিধস ও বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চামোলি জেলার নন্দপ্রয়াগে ভূমিধসের ফলে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সন্দীপ তিওয়ারি জানান, রাস্তা খোলার কাজ চলছে। এছাড়া উত্তরকাশীর হরসিল ও ধরালি গ্রামে ৫ আগস্টের মেঘভাঙ্গা বৃষ্টির পর পুনর্গঠনের কাজ চলছে। হরসিল ব্রিজ নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে উদ্ধার ও ত্রাণ সামগ্রী সহজে পৌঁছানো যায়।