আগরতলা, ২৪ জুলাই: ত্রিপুরা মৎস্যজীবী ইউনিয়নের উদ্যোগে আজ ১৩ দফা দাবির ভিত্তিতে রাজভবন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়। প্যারাডাইস চৌমুহনি থেকে এই মিছিলটি শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে রাজভবনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলে সার্কিট হাউস এলাকায় গিয়ে তাদের আটকে দেওয়া হয়। সেখানে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইউনিয়নের এক প্রতিনিধি দল রাজভবনে রাজ্যপালের উদ্দেশ্যে তাদের ১৩ দফা দাবি সনদ তুলে দিয়েছেন।
এদিনের এই অভিযানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, বিরোধী দলনেতা তথা পলিটব্যুরো সদস্য জীতেন্দ্র চৌধুরী, তপশিলি জাতি সমন্বয় সমিতির রাজ্য সম্পাদক বাম নেতা সুধন দাস, প্রাক্তন মন্ত্রী রতন ভৌমিক সহ অন্যান্য বামপন্থী কর্মী সমর্থকেরা।
এদিনের এই সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এই ১৩ দফা দাবির যৌক্তিকতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, বর্তমান সময়োপযোগী জনগণের স্বার্থ সম্বলিত এই দাবিগুলি নিয়ে রাজ্যপাল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন, এই আশাতেই এদিন স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয়েছে। বাম আমলে মৎস্য চাষের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাম আমলে মৎস্য চাষ এবং রাজ্যের মৎস্য চাষীদের সমৃদ্ধ করতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। বিগত সরকার উপলব্ধি করেছিল রাজ্যে মাছ, ডিম এবং মাংস যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু উৎপন্ন হচ্ছে না। যার ফলে বহিরাজ্য থেকে এই সামগ্রীগুলি আমদানি করতে হচ্ছে। কিন্তু বাম সরকার উপলব্ধি করেছিল রাজ্যের চাহিদা রাজ্যেই মেটানো সম্ভব। যার ফলে রাজ্যের জলাশয় গুলিকে ব্যবহার করে মৎস্য চাষীদের সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে রাজ্যে মাছের চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এর সুফলও পেয়েছিলেন মৎস্যচাষিরা।
কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মৎস্য চাষকে বেসরকারি যাতে তুলে দিয়েছে। যার ফলে মৎস্য চাষিরা ফের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এদিন বর্তমান সরকারের তীব্র বিরোধিতা করেছেন তিনি।
এদিনের সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, সরকারি জলাশয়গুলোকে মৎস্যজীবিদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিল বাম সরকার। ডম্বুর জলাশয় কেও সেক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে সেই সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে এই সরকার। নেই মৎস্য জীবি দের সমবায়ের হাতে কোনো ক্ষমতা।
বাম আমলে যেসকল প্রকল্পগুলি তার সবটাই বন্ধ করে দিয়ে বেসরকারিভাবে উগোটা পরিষেবা সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। তার ফলে মৎস্য চাষিরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
এদিন তপশিলি জাতি সমন্বয় সমিতির রাজ্য সম্পাদক সুধন দাস বলেন, রাজ্য সরকার মৎস্যজীবীদের জন্য যে সমস্ত প্রকল্প চালু করেছে তার সুবিধা পাচ্ছেন না মৎস্যজীবিরা। উল্টে মৎস্যজীবীদের জীবিকায় কুঠারাঘাত বসাচ্ছে রাজ্যের বর্তমান জনবিরোধী সরকার।
তিনি অভিযোগ করেন, মৎস্যজীবীদের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমকে বেসরকারিকরণ করার উদ্যোগ নিয়েছে এই সরকার। দেশে ২ কোটির ও বেশি মৎস্যজীবী রয়েছেন। কেন্দ্র সরকারের দৌলতে তারা আজ সঙ্কটাপন্ন। দেশীয় মৎস্যজীবীদের পেটে লাথি মেরেছে বিদেশী মৎস্য রপ্তানি কারীরা। আর তাতে সর্বতোভাবে মদত দিচ্ছে কেন্দ্র সরকার।
তিনি আরো বলেন, সরকারি জলাশয়গুলোকে মৎস্যজীবিদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিল বাম সরকার। ডম্বুর জলাশয় কেও সেক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে সেই সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে এই সরকার। নেই মৎস্য জীবি দের সমবায়ের হাতে কোনো ক্ষমতা। বিজেপি সরকারের আমলে তাদের পেশীর শক্তি বেশি সব তাদের দখলে যাচ্ছে। ডম্বুর জলাশয়, রাজ্যের সব চাইতে বড় জলাশয় যা মৎস্যজীবী দের জীবিকায় একটা অনন্য ভূমিকা পালন করতো। তাকে তুলে দেওয়া হয়েছে বেসরকারি সংস্থার হাতে। গোটা দেশ যেভাবে বেসরকারি করণের দিকে হাটছে তার প্রভাব পড়েছে ত্রিপুরা রাজ্যের ছোট ছোট জলাশয় গুলিতেও। ডম্বুর এর পর রুদ্রসাগর কে বেসরকারি করণ করতেও পরিকল্পনা নিচ্ছে এই সরকার। যা সম্পূর্ণ ভাবে মৎসজীবী দের স্বার্থ বিরোধী। এই সমস্ত কিছুর বিরুদ্ধে এদিন মিছিল থেকে এক রাশ ক্ষোভ উজার করে দিলেন বাম নেতৃত্বরা।
এছাড়াও জনসাধারণের নিত্যদিন নানা সমস্যা নিয়েও এদিন সরব হতে দেখা যায় বাম নেতৃত্বদের। বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ১০৩২৩ এর চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া সবকটি দাবি উঠে আসে এই ১৩ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকে। এদিন সার্কিট হাউসের সামনে সভার মাধ্যমেই রাজভবন অভিযান কর্মসুচি সম্পন্ন হয়েছে। এক প্রতিনিধি দল রাজভবনে রাজ্যপালের উদ্দেশ্যে স্মারক লিপি প্রদান করেছেন।

