নয়াদিল্লি, ২১ জুলাই : সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরুতেই উত্তপ্ত হয়ে উঠল। জম্মু ও কাশ্মীরর পহেলগামের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলা এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করার বারবার দাবির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে বিরোধীরা, বিশেষ করে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে, কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছেন। খাড়গে সরকারের কাছে পহেলগাম হামলার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এবং ট্রাম্পের দাবির বিষয়ে তাদের স্পষ্ট অবস্থান জানতে চেয়েছেন।
মল্লিকার্জুন খাড়গে সোমবার রাজ্যসভায় রুল ২৬৭ এর অধীনে পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলা এবং ‘অপারেশন সিন্দুর’ নিয়ে নোটিশ দেন। তিনি বলেন, “আজ পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের ধরা বা নির্মূল করা যায়নি। আমরা (বিরোধীরা) সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়েছি। সরকারের উচিত আমাদের জানানো যে কী ঘটেছে।” উল্লেখ্য, ২২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে জম্মু ও কাশ্মীরর পহেলগামের বৈসারান উপত্যকায় একটি সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিরপরাধ মানুষ নিহত হন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন পর্যটক। এই হামলার পর ভারত সরকার ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে পাকিস্তানে একটি সামরিক অভিযান চালায়, যেখানে একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এই অভিযানের নামকরণের তাৎপর্য নিয়েও বিতর্ক রয়েছে, কারণ এটি হিন্দু বিবাহিত নারীদের সিঁদুর থেকে অনুপ্রাণিত, যা সন্ত্রাসীদের দ্বারা বিধবা হওয়া নারীদের দুর্দশার প্রতীক।
খাড়গের আক্রমণের মূল বিষয় ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বারবার দাবি যে তিনিই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি করিয়েছেন। খাড়গে বলেন, “এছাড়াও, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিবৃতি নিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করা উচিত, কারণ তিনি একবার নয়, ২৪ বার দাবি করেছেন যে তিনি যুদ্ধবিরতি করিয়েছেন। এটি দেশের জন্য অপমানজনক।” ট্রাম্পের এই ধরনের দাবি এমন এক সময়ে এসেছে যখন ভারত বরাবরই পাকিস্তানর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং কাশ্মীর ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে আসছে। ট্রাম্পের দাবি যদি সত্য হয়, তবে এটি ভারতের দীর্ঘদিনের পররাষ্ট্রনীতিতে একটি বড় পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
খাড়গের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জেপি নাড্ডা জানান যে কেন্দ্রীয় সরকার অপারেশন সিন্দুর নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। তবে, অধিবেশন কক্ষে গোলযোগের কারণে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সভার কাজ মুলতবি করে দেওয়া হয়।
সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন, যা ২১ জুলাই থেকে ২১ আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত চলার কথা, শুরু থেকেই বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের আক্রমণের মুখে পড়েছে। লোকসভায় কংগ্রেসের উপনেতা গৌরব গগৈও পহেলগাম হামলা এবং এর ফলে সৃষ্ট নিরাপত্তা ত্রুটিকে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে তুলে ধরেছেন। তিনি অভিযোগ করেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিবৃতিগুলি কোনো না কোনোভাবে ভারতের মর্যাদা এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর বীরত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে সরকার পহেলগাম হামলার বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা এবং ট্রাম্পের দাবির বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার না করলে সংসদের এই অধিবেশন আরও উত্তাল হতে পারে। বিরোধী দলগুলি সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে এই স্পর্শকাতর বিষয়গুলি নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনার দাবি জানাচ্ছে।

