নয়াদিল্লি, ১৫ জুলাই : ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে আত্মনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সদর দপ্তর ইন্টিগ্রেটেড ডিফেন্স স্টাফ এবং সেন্টার ফর জয়েন্ট ওয়ারফেয়ার স্টাডিজ যৌথভাবে আগামী ১৬ জুলাই, ২০২৫ দিল্লির ম্যানেকশ শ সেন্টারে একটি উচ্চপর্যায়ের কর্মশালা ও প্রদর্শনী আয়োজন করতে চলেছে। কর্মশালার বিষয়—“ইউএভি ও কাউন্টার ইউএএস-এ ব্যবহৃত অত্যাবশ্যক আমদানিকৃত উপাদানসমূহের স্বদেশীকরণ”।
এই কর্মশালাটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন ভারত সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সীমানা উত্তেজনা ও ‘অপারেশন সিন্দূর’-এর মতো বাস্তব সামরিক প্রেক্ষাপটে ইউএভি ও কাউন্টার ইউএএস প্রযুক্তির কার্যকারিতা অনুধাবন করেছে। ওই অভিযানে ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার শুধু যে অপারেশনাল সাফল্য এনেছে, তাই নয়—মানবসন্তানের জীবন রক্ষা, সঠিক টার্গেট চিহ্নিতকরণ ও কৌশলগত তথ্য আহরণের দিক থেকেও তা অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। এই প্রেক্ষাপটে দেশীয় প্রযুক্তির পরিপক্বতা এবং নির্ভরযোগ্যতা আরও একবার সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বর্তমানে ভারতের সামরিক ইউএভি ও কাউন্টার ইউএএস ব্যবস্থার অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বিদেশি মূল যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারক সংস্থার উপর নির্ভরশীল। এই নির্ভরতাকে কমিয়ে সম্পূর্ণ স্বদেশী প্রযুক্তি-নির্ভর ইউএভি ও কাউন্টার ইউএএস সিস্টেম তৈরির কৌশলগত রোডম্যাপ তৈরি করাই এই কর্মশালার মুখ্য উদ্দেশ্য। কর্মশালাটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম হবে যেখানে দেশের শীর্ষ প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ, নীতিনির্ধারক, সামরিক আধিকারিক, বিজ্ঞানী এবং বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ একত্রে অংশগ্রহণ করবেন। তারা মেধা, অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের সংমিশ্রণে একটি সুসংহত স্বদেশীকরণ কৌশল নির্মাণে সহায়তা করবেন।
এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান, যিনি কর্মশালার উদ্বোধন করবেন এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির আত্মনির্ভর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেবেন। দিনব্যাপী বিভিন্ন অধিবেশন শেষে সমাপ্তি বক্তব্য প্রদান করবেন ইনটিগ্রেটেড ডিফেন্স স্টাফের প্রধান এয়ার মার্শাল অশ্বতোষ দীক্ষিত। তিনি কর্মশালার মূল আলোচনার সারাংশ তুলে ধরবেন এবং ইউএভি ও কাউন্টার ইউএএস-এর জন্য স্বদেশীকরণের উপর ভিত্তি করে একটি ‘কৌশলগত নীতিনির্ধারণী নথি ’ উপস্থাপন করবেন।
এই কর্মশালার অন্যতম আকর্ষণ হবে স্বদেশী প্রযুক্তির লাইভ ডেমোনস্ট্রেশন, যেখানে দেশীয় সংস্থা ও স্টার্টআপগুলো তাদের উদ্ভাবিত ইউএভি ও কাউন্টার ইউএএস সমাধান প্রদর্শন করবে। এছাড়া, কর্মশালায় আলোচনা হবে কীভাবে প্রযুক্তিগত, আর্থিক ও নীতিগত বাধা দূর করে ইউএভি ও সি-ইউএএস প্রযুক্তির সম্পূর্ণ দেশীয় উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণের পরিকাঠামো গড়ে তোলা যায়।
এই উদ্যোগ ভারতের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয়েছে। শুধু প্রতিরক্ষা খাতেই নয়, এটি ভারতের বৈশ্বিক প্রযুক্তিগত নেতৃত্ব অর্জনের স্বপ্নপূরণেও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে চলেছে। ভারত যাতে ভবিষ্যতে ইউএভি ও কাউন্টার ইউএস প্রযুক্তির একটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়, সে লক্ষ্যে এই কর্মশালায় নির্ধারিত হবে একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা।
অতএব, এই কর্মশালা শুধু একটি পলিসি আলোচনার মঞ্চ নয়—বরং এটি ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদন ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ রূপরেখা স্থির করতে চলেছে। এর মাধ্যমে আত্মনির্ভরতার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে ভারত।

