আগরতলা, ১১ জুলাই: প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সভা ঘিরে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে বিলোনিয়ায়। বাদল শীলের শহীদান দিবস উপলক্ষে আজ বিলোনিয়ায় এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভাতেই বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার সহ অন্যান্য নেতৃত্বরা। সভা চলাকালীন সভাস্থলের বাইরে মানিক সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান তুলতে থাকেন বিজেপির সমর্থকগণ। ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুহূর্তের মধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে উঠে এলাকা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়ন করা হয় বিশাল পুলিশবাহিনী। যদিও এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার।
উল্লেখ্য, বিলোনিয়া চোত্তাখলায় গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দুষ্কৃতীদের আক্রমণে খুন হয়েছিলেন বাম প্রার্থী বাদল শীল। আজ তাঁর প্রথম শহীদান দিবস পালন করা হয়েছে সিপিআইএম বিলোনিয়া মহকুমা কমিটির উদ্যোগে।
এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার জানিয়েছেন, চোখের জলকে প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধের বারুদে জ্বালিয়ে তুলতে হবে। রাজ্যে গণতন্ত্র হত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। শহীদ বাদল শীলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষকে জাগিয়ে তোলার কাজ তিনি করেছিলেন। এই এলাকায় গণতন্ত্র সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে এক শক্তিশালী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বাদল শীল। রাজ্যের সরকারে যে দলটি রয়েছে তারা নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের লড়াইয়ে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের বাছাই করে হত্যা করার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। যার মাধ্যমে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য, মানুষের ন্যায্য অধিকার রক্ষার জন্য যারা লড়াই করছেন তাদেরকে শেষ করে দিয়ে ক্ষমতা নিজেদের হাতে রাখা যায়। বাদল শীলের নেতৃত্বে সাধারণ মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছিলেন, প্রতিবাদে রাস্তায় নামতে শুরু করেছিলেন, তাই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে এই প্রতিবাদ রুখতে বাদল শীলকে খুন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, লুটের রাজত্ব যারা চালাচ্ছেন তারা মনে করেন, বাদল শীলের মতো নেতৃত্বরা যারা প্রথম সারির নেতা, অন্যায় শোষণের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে, সংঘটিত করে তাদের সরিয়ে দিলে বোধহয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে রুখে দেওয়া যাবে। কিন্তু এটি শাসকদলের শক্তির পরিচয় নয়, এটি দুর্বলতার পরিচয়। নিজেদের শক্তিকে টিকিয়ে রাখতে শাসকদল ভীত সন্তস্ত্র, এই ঘটনাগুলি তারই প্রমাণ।
তাঁর কথায়, বিজেপি সরকার তাদের সমর্থন হারাচ্ছেন। গত ৯ জুলাইয়ের দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট এর জ্যান্ত প্রমাণ। দেশব্যাপী সাধারণ মানুষ বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন। রাজ্যেও একই অবস্থা। টুয়েপের কাজ, রেগার কাজ প্রায় নেই বললেই চলে। অনাহারে অর্ধাহারে সাধারণ মানুষ জীবন অতিবাহিত করছেন। যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষকের অভাব, স্বাস্থ্য পরিষেবা ভেঙে পড়েছে। গোটা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তলানিতে ঠেকেছে। রাজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হচ্ছে এই সরকার। এডিসি এলাকার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, তিপ্রা মথা দল এডিসি এলাকার ক্ষমতা হাতে তুলে নিয়ে বসে আছে। কিন্তু এডিসি এলাকাতে কোন উন্নয়ন হচ্ছে। এ ডি সি এলাকার জনজাতি অংশের জনগণ কাজের অভাবে খাদ্যের অভাবে ভুগছে। এদিকে এডিসি নেতৃত্ব টাকা নিয়ে লন্ডনে যাচ্ছেন ফুর্তি করতে। এর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। তিনি বলেন বাদল শীল এর মত নেতৃত্বদের বিরুদ্ধে সঠিক শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আন্দোলন সংঘটিত করতে হবে। বাদল শীলের মতো নেতৃত্বরা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্নকে সফল করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তবে বাদল শীলের মতো নেতৃত্বদের প্রতি সঠিক শ্রদ্ধা জানানো হবে।

