গত সাত বছরে দুবাই, ওমান ও কাতারে ৭৩.১৫ মেট্রিক টন আনারস রপ্তানি, সিদল শুকনো মাছ ও সাবরি কলার জন্য জিআই ট্যাগ পাওয়ার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার : রতন লাল নাথ

আগরতলা, ১২ জুলাই : গত সাত বছরে রাজ্য থেকে ৭৩.১৫ মেট্রিক টন আনারস দুবাই, ওমান এবং কাতারে রপ্তানি করা হয়েছে। পাশাপাশি, জিআই ট্যাগ পাওয়ার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার সিদল শুকনো মাছ, সাবরি কলা এবং অন্যান্য বেশ কিছু স্থানীয় পণ্যের জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে। শুক্রবার উত্তর জেলার কুমারঘাটের গীতাঞ্জলি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত আনারস উৎসবে এই তথ্য জানান কৃষি ও কৃষক কল্যাণমন্ত্রী রতন লাল নাথ। সাথে তিনি যোগ করেন, পান চাষিদের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দফতর নলকাটায় পিপিপি মডেলে (সরকার-বেসরকারি অংশীদারিত্ব) একটি নতুন ফল প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রীর দাবি, আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপতির হাত ধরে আনারসকে ত্রিপুরার রাজ্যিক ফল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, রাজ্যে মূলত কিউ ও ক্যুইন দুই ভ্যারাইটির আনারস উৎপাদন হয়। যা স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। এই উৎসবের উদ্দেশ্য হল আনারসের প্রসার ও জনপ্রিয় করা। কুইন আনারস ইতিমধ্যে জিআই ট্যাগ পেয়েছে, ফলে এটি অন্য কেউ অনুকরণ করতে পারবে না। আমরা এই আনারসের উৎপাদন এবং বাজার সম্প্রসারণে জোর দিচ্ছি। তিনি জানান, রাজ্যে মোট ৩.৬৫ লক্ষ কানিতে ফলের চাষ হয়, যার মধ্যে ৭৪,০০০ কানিতে আনারস চাষ হয়। ধলাই, উনকোটি ও উত্তর জেলায় ৫৩,৭০০ কানিতে কিউ জাতের এবং ২২,০০০ কানিতে কুইন জাতের আনারস উৎপাদিত হয়।

তিনি আরও বলেন, রাজ্যের অর্গানিক ফসলের উপর গত ৯ জুলাই আগরতলায় একটি ক্রেতা-বিক্রেতা মিট হয়েছে। এই মিটের মাধ্যমে রাজ্য সরকার চাইছে রাজ্যের বাইরের ক্রেতারা যাতে এখানকার কৃষকদের উৎপাদিত ফসল কিনে নিতে পারে। এতে কৃষকদের আয় আরও বাড়বে।

তাঁর কথায়, ২০১৮ সালে আমাদের সরকার আসার সময় আনারসের দাম ছিল কেজি প্রতি ৮ থেকে ৯ টাকা। বর্তমানে এটি বেড়ে গড়ে ৪০ টাকা বা তারও বেশি হয়েছে। কৃষকদের আয় বাড়ানোই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। কুইন আনারসকে বিশ্ববাজারে জনপ্রিয় করতে কেন্দ্রের ডোনার মন্ত্রক কাজ করছে। আমরা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার সঙ্গে দু’বার বৈঠক করেছি এবং ১৩২ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা চলছে।

এদিন মন্ত্রী আরও জানান, ২০১৮ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ৭৩.১৫ মেট্রিক টন আনারস রপ্তানির পাশাপাশি, ৪.৪০ মেট্রিক টন কাঁঠাল আমেরিকায়, ৩০ মেট্রিক টন আদা এবং ১৭ মেট্রিক টন পান বাংলাদেশে রপ্তানি করা হয়েছে। তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ের সুরে বলেন, আমাদের লক্ষ্য রাজ্যের কৃষকদের আর্থিকভাবে শক্তিশালী করা, যাতে রাজ্যের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়। এই দিন মন্ত্রী কুমারঘাটের একটি আনারস প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রও পরিদর্শন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক ভগবান দাস, পশুসম্পদ উন্নয়ন ও মৎস্য মন্ত্রী সুধাংশু দাসসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তপশিলিজাতি কল্যাণ মন্ত্রী সুধাংশু দাস বলেন, রাজ্যের আনারসের শুধু ত্রিপুরা বা বর্হিরাজ্যে নয় বিদেশেও কদর রয়েছে। কৃষকদের কল্যাণে এগ্রি অ্যালায়েড সেক্টরে উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে সরকার। গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে এগ্রি অ্যালায়েড সেক্টর বিশেষ ভূমিকা রাখে। তিনি বলেন, এখানকার আনারস শুধু বিদেশেই যাচ্ছে না গ্রামীণ অর্থনীতিরও বিকাশ ঘটাচ্ছে। আমরা চাই আরও বেশি মাত্রায় আনারস উৎপাদনের পাশাপাশি তার প্রক্রিয়াকরণ করে মুলাযুক্ত করা যাতে তার সাথে যুক্ত কৃষকদের আয়কে আরও বৃদ্ধি করা যায়।

অনুষ্ঠানে এছাড়া বক্তব্য রাখেন বিধায়ক ভগবান চন্দ্র দাস, ভারত সরকারের ডোনার মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব অংশুমান দে, কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভূমি সংরক্ষণ ও উদ্যান পালন দপ্তরের অধিকর্তা দীপক কুমার দাস। উপস্থিত ছিলেন ঊনকোটি জিলা পরিষদের সভাধিপতি অমলেন্দু দাস, সহকারি সভাধিপতি সন্তোষ ধর, প্ল্যানিং দপ্তরের সচিব এল টি ডার্লিং, ঊনকোটি জেলার জেলাশাসক ড. তমাল মজুমদার, ইয়ং ডার্লং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এইচ ডার্লং প্রমুখ। আনারস উৎসবের অঙ্গ হিসেবে ইয়ং ডার্লং অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে এদিন একটি রক্তদান শিবিরেরও আয়োজন করা হয়। কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী রতনলাল নাথ রক্তদাতাদের উৎসাহিত করেন। শিবিরে মোট ৩১ জন স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন।