শ্রীনগর,১১ জুলাই : অমরনাথ যাত্রা শুরুর পর আট দিনের মধ্যে পবিত্র গুহামন্দিরে দর্শন করেছেন ১.৪৫ লক্ষেরও বেশি তীর্থযাত্রী। শুক্রবার আরও এক ব্যাচে ৬,৪৮২ যাত্রী জম্মুর ভাগবতী নগর যাত্রী নিবাস থেকে কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৩ জুলাই যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১.৪৫ লক্ষেরও বেশি ভক্ত অমরনাথ গুহার ‘দর্শন’ সম্পন্ন করেছেন। আজ সকালে দুটি সুরক্ষিত কনভয়ে মোট ৬,৪৮২ জন তীর্থযাত্রী যাত্রা শুরু করেন। প্রথম কনভয়ে ১০৭টি গাড়িতে ২,৩৫৩ জন ভক্ত সকাল ৩টা ২০ মিনিটে বালতাল বেস ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। দ্বিতীয় কনভয়ে ১৬১টি গাড়িতে ৪,১২৯ জন ভক্ত সকাল ৪টা ০৪ মিনিটে নুনওয়ান (পহেলগাম) বেস ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
বৃহস্পতিবার পহেলগামে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘ছাড়ি মুবারক’-এর ভূমি পূজন। অমরনাথ যাত্রার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আচার এই ছাড়ি মুবারক বা পবিত্র গদা যাত্রা। ছাড়ি মুবারককে শ্রীনগরের দশনামি আখড়া ভবন থেকে পহেলগামে নিয়ে যান সাধুদের একটি দল, যার নেতৃত্ব দেন মহন্ত স্বামী দীপেন্দ্র গিরি। সেখানে গৌরী শঙ্কর মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হয় এবং পরে ছাড়ি মুবারককে মার্তণ্ড সূর্য মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে একটি পবিত্র ঝর্ণায় স্নান করানো হয়।
এই ছাড়ি মুবারক আগামী ৯ আগস্ট পবিত্র গুহামন্দিরে পৌঁছাবে এবং সেদিনই যাত্রার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হবে।
এছাড়া অনেক ভক্ত সরাসরি বালতাল ও নুনওয়ান ক্যাম্পে গিয়ে অন-স্পট রেজিস্ট্রেশন করাচ্ছেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিক থেকেও এই বছরের যাত্রা অত্যন্ত কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সম্পন্ন হচ্ছে। কারণ গত ২২ এপ্রিল পহেলগামের বাইসরান উপত্যকায় পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদীরা এক নির্মম হামলায় ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে বেছে নিয়ে ২৬ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে।
এই বছর অতিরিক্ত ১৮০টি সিআরপিএফ, বিএসএফ, এসএসবি ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোম্পানি মোতায়েন করা হয়েছে। জম্মুর ভাগবতী নগর থেকে গুহামন্দির পর্যন্ত যাত্রাপথে থাকা প্রতিটি ট্রানজিট ক্যাম্প কঠোর নিরাপত্তায় সুরক্ষিত রাখা হয়েছে।
এই বছর যাত্রা শুরু হয়েছে ৩ জুলাই এবং শেষ হবে ৯ আগস্ট, শ্রাবণ পূর্ণিমা ও রাখি পূর্ণিমার দিন।
তীর্থযাত্রীরা গুহামন্দিরে পৌঁছান দুটি রুট ধরে—একটি ঐতিহ্যবাহী পহেলগাম রুট (৪৬ কিমি, ৪ দিন ধরে পদযাত্রা) এবং অন্যটি ছোট কিন্তু খাড়া বালতাল রুট (১৪ কিমি, একদিনে যাত্রা সম্পন্ন)। নিরাপত্তাজনিত কারণে এই বছর কোনও হেলিকপ্টার পরিষেবা নেই।
অমরনাথ গুহামন্দিরে একটি প্রাকৃতিক বরফ-স্তম্ভ বা ‘আইস লিঙ্গ’ থাকে, যা চন্দ্রের কলার সঙ্গে সঙ্গে আকারে ছোট-বড় হয়। হিন্দুদের বিশ্বাস, এটি শিবের অলৌকিক শক্তির প্রতীক এবং এই গুহাতে দেবাদিদেব মহাদেব স্বয়ং পার্বতীকে অমরত্বের রহস্য বলেছিলেন। এই কারণেই অমরনাথ যাত্রা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য এক অন্যতম পবিত্র তীর্থযাত্রা।

