শ্রীনগর, ৭ জুলাই : গত চার দিনে প্রায় ৭০,০০০ ভক্ত অমরনাথ যাত্রা সম্পন্ন করেছেন। সোমবার আরও ৮,৬০৫ জন ভক্ত জম্মুর ভাগবতী নগর যাত্রী নিবাস থেকে কাশ্মীর উপত্যকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন, জানিয়েছেন এক সরকারি কর্মকর্তা।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া চলতি বছরের অমরনাথ যাত্রায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০,০০০ ভক্ত গুহা মন্দিরে দর্শন করেছেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র রবিবারেই ২১,৫১২ জন যাত্রী পবিত্র গুহা মন্দিরে ‘দর্শন’ লাভ করেছেন।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সোমবার ভাগবতী নগর যাত্রী নিবাস থেকে দুইটি নিরাপত্তা পরিবেষ্টিত কনভয়ে মোট ৮,৬০৫ জন যাত্রী কাশ্মীর উপত্যকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। প্রথম কনভয়ে ৩,৪৮৬ জন ভক্ত উত্তর কাশ্মীরের বালতাল বেস ক্যাম্পের দিকে এবং দ্বিতীয় কনভয়ে ৫,১১৯ জন দক্ষিণ কাশ্মীরের নুনওয়ান (পহেলগাম) বেস ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন।
শ্রী অমরনাথজি শ্রাইন বোর্ড (এসএএসবি) জানিয়েছে, জম্মুর ভাগবতী নগর যাত্রী নিবাস ছাড়াও বহু ভক্ত সরাসরি বালতাল ও নুনওয়ান (পহেলগাম) ক্যাম্পে গিয়ে স্পট রেজিস্ট্রেশন করে যাত্রায় অংশ নিচ্ছেন। এ বছর যাত্রা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক কারণে দুইজন তীর্থযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
এপ্রিল মাসে পহেলগামের বৈসরান ময়দানে পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসীদের হামলায় ২৬ জন নিরীহ নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনার পর, এ বছরের অমরনাথ যাত্রায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, বিএসএফ, সিআরপিএফ, এসএসবি ও স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে অতিরিক্ত ১৮০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ভাগবতী নগর থেকে গুহা মন্দির পর্যন্ত প্রতিটি ট্রানজিট ক্যাম্প ও যাত্রাপথে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ বছরও কাশ্মীরের স্থানীয় বাসিন্দারা তীর্থযাত্রীদের প্রতি আন্তরিক সহযোগিতা দেখিয়েছেন। পহেলগাম হামলার পর কাশ্মীরিদের শোক ও সংহতির বার্তা পৌঁছে দিতে স্থানীয়রা প্রথম ব্যাচের যাত্রীদের মালা ও প্ল্যাকার্ড দিয়ে স্বাগত জানিয়েছিলেন। রবিবার উত্তর কাশ্মীরের গন্দেরবালের বালতাল বেস ক্যাম্প থেকে ফেরার পথে স্থানীয়রা তীর্থযাত্রীদের ঠান্ডা পানীয় ও বিশুদ্ধ জল পরিবেশন করেছেন। তীর্থযাত্রীরা কাশ্মীরিদের এই আতিথেয়তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করেছেন।
এ বছর অমরনাথ যাত্রা শুরু হয়েছে ৩ জুলাই, চলবে ৩৮ দিন—৯ আগস্ট শ্রাবণ পূর্ণিমা ও রাখি বন্ধন পর্যন্ত। ৩,৮৮৮ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত অমরনাথ গুহা মন্দিরে পৌঁছাতে ভক্তরা দুইটি রুট ব্যবহার করেন। ঐতিহ্যবাহী পহেলগাম রুট (৪৬ কিমি, চন্দনওয়ারি, শেশনাগ, পঞ্চতার্নি হয়ে) এবং ছোট বালতাল রুট (১৪ কিমি)। পহেলগাম রুটে গুহা পৌঁছাতে চার দিন সময় লাগে, আর বালতাল রুটে একদিনেই যাত্রা ও ফেরত সম্ভব। নিরাপত্তাজনিত কারণে এ বছর কোনো হেলিকপ্টার পরিষেবা নেই।
গুহামন্দিরের ভিতরে রয়েছে একটি প্রাকৃতিক বরফ-লিঙ্গ, যা চন্দ্রের কালচক্র অনুযায়ী ছোট-বড় হয়। ভক্তদের বিশ্বাস, এটি শিবের অলৌকিক শক্তির প্রতীক। পৌরাণিক কথা অনুযায়ী, এই গুহাতেই মহাদেব পার্বতীকে অমরত্বের গোপন কথা বলেছিলেন। কাহিনীতে আরও বলা হয়, সেই সময়ে গুহায় থাকা দুটি কবুতর সেই অমর কথোপকথনের সাক্ষী হয়ে আজও জীবিত রয়েছে। প্রতিবার যাত্রার সময় গুহা থেকে একজোড়া পাহাড়ি কবুতরের উড়ে যাওয়াও দেখা যায়। শ্রী অমরনাথ যাত্রা হিন্দু ভক্তদের কাছে অন্যতম পবিত্র ধর্মীয় তীর্থযাত্রা হিসেবে বিবেচিত।

