গুজরাটের ভাবনগরে জলাবদ্ধতা, ৭১ বছরের বৃদ্ধের প্রাণ বাঁচাল ছেলের সাহসিকতা, রাজ্যে টানা বৃষ্টিতে বিপর্যয়

ভাবনগর, ১৮ জুন : গুজরাটের ভাবনগরে টানা দু’দিনের ভারী বর্ষণে বেশ কয়েকটি গ্রামীণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শহরের আশেপাশের বেশ কয়েকটি বাঁধ উপচে জল ছাড়তে শুরু করেছে, যার ফলে বহু অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতির মাঝেই একটি হৃদয়বিদারক ও সাহসিকতায় ভরা ঘটনা সামনে এসেছে—এক ৭১ বছরের বৃদ্ধের প্রাণ বাঁচালেন তাঁরই ছেলে।

ঘটনাটি ঘটেছে ভাবনগরের রাণীওয়াড়া গ্রামের। গ্রামের বাসিন্দা ৭১ বছরের রামভাই চিবাভাই ধাপা নামক এক ব্যক্তি বৃষ্টির মধ্যে নিজের খেত থেকে বাড়ি ফেরার সময় একটি ছোট নদীতে প্রবাহমান নালা পার করতে গিয়েছিলেন। হঠাৎ প্রবল বৃষ্টিতে নালার জলস্তর বেড়ে যায় এবং জলপ্রবাহ এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে বৃদ্ধ সেই স্রোতে ভেসে যান। কয়েক সেকেন্ড তাঁকে জলে হাঁটতে দেখা গেলেও পরক্ষণেই তিনি ১৫ ফুট গভীর জলে তলিয়ে যান।

তবে ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তাঁর ছেলে বিষয়টি নজরে আসতেই সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকেন। হঠাৎ দেখা যায়, প্রবল স্রোতে ভেসে যেতে যেতে বৃদ্ধের হাত একটি গাছের ডাল ধরে ফেলেন। এরপর স্থানীয়দের সহায়তায় তাঁর ছেলে একটি দড়ির মাধ্যমে তাঁকে নিরাপদে তীরে তুলে আনেন। এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এবং মানুষজন ছেলের সাহসিকতার প্রশংসা করছেন।

ভাবনগরে চলমান ভারী বৃষ্টির কারণে জেলার বিভিন্ন অংশে জনজীবন বিপর্যস্ত। জেলার তলাজা, পলীতানা, সিহোর, বলবিপুর, জেসর এবং মহুয়ার মতো এলাকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সমস্ত স্কুল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জেলার আশেপাশের ১২টি ড্যামের মধ্যে ৪টি ড্যামের জল উপচে যাচ্ছে।

ভাবনগর শহর থেকে মাত্র ১০ কিমি দূরের কালুপার ড্যাম থেকে বেরিয়ে আসা জলে প্রায় ৩০ জন স্থানীয় আটকে পড়েছেন, যাঁদের উদ্ধারের জন্য ত্রাণকার্য চলছে। তবে শহরের চারপাশে গড়ে ওঠা নোনতা চাষের মাটি বাঁধের কারণে জল দ্রুত বেরোতে পারছে না, যার ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।

অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকার দুর্যোগ মোকাবিলায় একাধিক রাজ্যকে বড়সড় অর্থসাহায্যের ঘোষণা করেছে। হিমাচল প্রদেশে ২০২৩ সালের বন্যা ও ভূমিধসের ক্ষয়ক্ষতি পুনর্গঠনে ২০০৬.৪০ কোটি টাকার প্যাকেজ অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫০৪.৮০ কোটি টাকা জাতীয় দুর্যোগ ত্রাণ তহবিল থেকে প্রদান করা হবে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে গঠিত হাই লেভেল কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের তরফে জানানো হয়েছে যে, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে এসডিআরএফ-এর অধীনে ২৮টি রাজ্যকে ২০,২৬৪.৪০ কোটি টাকা এবং ১৯টি রাজ্যকে এনডিআরএফ -এর আওতায় ৫,১৬০.৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

হিমাচল ছাড়াও উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠ দুর্যোগের জন্য ১,৬৫৮.১৭ কোটি এবং সিকিমের গ্লেসিয়াল লেক আউটব্রাস্ট দুর্ঘটনার জন্য ৫৫৫.২৭ কোটি টাকার পুনর্গঠন পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়েছে। শহুরে বন্যা, ভূমিধস, বন্যারগ্নি, বজ্রপাত ও খরার মতো বিপদের মোকাবিলায় কেন্দ্র সরকার ইতিমধ্যেই ৭,২৫৩.৫১ কোটি টাকার উপশমন প্রকল্প শুরু করেছে।