নয়াদিল্লি, ১৪ মে: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা তথা সংসদ সদস্য জয়রাম রমেশ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের কাছে প্রশ্ন তুলেছেন—”যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ভারত কি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে বাধ্য হয়েছে?”
এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ একটি পোস্টে জয়রাম রমেশ লেখেন, “কয়েকদিন আগে আমরা যুদ্ধবিরতির কথা প্রথম জানতে পারি মার্কিন প্রেসিডেন্টের মুখে। সৌদি আরবে এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি ভারতকে নিষেধাজ্ঞা ও বাণিজ্য চুক্তির ‘মুলা’ দেখিয়ে এই যুদ্ধবিরতিতে রাজি করান।”
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন—“আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রী কি আমেরিকার চাপের সামনে ভারতের নিরাপত্তার স্বার্থকে বন্ধক রেখেছেন?”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে আমরা একটি ঐতিহাসিক যুদ্ধবিরতি করিয়েছি। আমি বাণিজ্যকে কাজে লাগিয়ে এই কাজ করেছি। বলেছি, ‘আসুন, পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নয়, আপনারা যেসব পণ্য তৈরি করেন, সেগুলোর বাণিজ্য করি।’ দু’দেশেই শক্তিশালী, বুদ্ধিমান নেতৃত্ব রয়েছে। সবকিছু থেমে গেছে। আমি চাই, এটা যেন স্থায়ী হয়।”
তবে ট্রাম্পের এই বক্তব্যে ভারত দ্ব্যর্থহীন ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘অপারেশন সিন্ধুর’ পুরোপুরি ছিল প্রচলিত সামরিক কৌশলের অংশ এবং এতে কোনও বহিরাগত মধ্যস্থতার প্রসঙ্গ নেই।
গত সপ্তাহে ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলিতে হামলা চালায়। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ড্রোন ও অন্যান্য অস্ত্র দিয়ে ভারতের সামরিক ঘাঁটি ও বেসামরিক এলাকায় আঘাত হানে। জবাবে ভারত অত্যন্ত নিখুঁত স্ট্রাইকে পাকিস্তানের একাধিক বিমান ঘাঁটিতে মারাত্মক ক্ষতি করে।
ভারত দাবি করেছে, এই অভিযানে ১০০-রও বেশি সন্ত্রাসবাদী নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান বলেছে, তাদের ১১ জন সেনা নিহত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “অপারেশন সিন্ধুর আমাদের সন্ত্রাসের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বিরুদ্ধে এক কঠোর বার্তা। এটা ভারতের নতুন স্বাভাবিক—সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমরা আর নরম থাকব না।”
এই প্রেক্ষাপটে কংগ্রেসের অভিযোগ এবং ট্রাম্পের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মোদী ও জয়শঙ্করের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা চেয়েছে বিরোধী দল। আপাতত ভারতীয় সরকার বলছে, কোনও বাহ্যিক চাপ বা মধ্যস্থতা ছাড়াই যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত হয়েছে দুই দেশের ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস-এর পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে। তবে রাজনীতির ময়দানে এ নিয়ে বিতর্ক ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে।

