BRAKING NEWS

২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ অর্জনের জন্য একটি নির্ধারিত টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে : প্রহ্লাদ যোশী

নয়াদিল্লি, ১৭ নভেম্বর : নবীন ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী জানিয়েছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট বিদ্যুতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সমস্ত অংশীদারদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নবীন ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিমন্ত্রক (এম.এন.আর.ই.)এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রকের যৌথ প্রচেষ্টায় একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ওড়িশার ভূবনেশ্বরে মন্ত্রকের উদ্যোগে আয়োজিত দু’দিনের চিন্তন শিবিরে শুক্রবার সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ভাষণ দিচ্ছিলেন।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তাঁর ভাষণে আগামী ছয় বছরে ২৮৮ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্র স্থাপন করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন, যার জন্য ট্রান্সমিশন বা পরিবহন পরিকাঠামো সহ ৪২ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার প্রয়োজন। তিনি বলেন, একে সফল করতে হলে এই ক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যাতে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ক্ষেত্রের বিভিন্ন প্রতিকূলতা সমাধান করা যায়।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যোশী বলেন, এই অনুষ্ঠানে ১১৭ জন শিল্পপতি এবং বিভিন্ন সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থেকে ৬৭ জন প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন| দেশের প্রধান পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনকারী ১২টি রাজ্যও এতে অংশগ্রহণ করেছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘোষিত “পঞ্চামৃত” লক্ষ্যের প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন, যেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। 

মন্ত্রী আরও বলেন যে, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ক্ষেত্রে স্টার্টআপদের জন্য হ্যাকাথনের আয়োজন করবে মন্ত্রক, যেখানে দেশীয় প্রযুক্তি এবং সমাধানের ব্যবস্থা উন্নয়নকে উৎসাহিত করতে নিশ্চিত বাজার প্রদানের উল্লেখ করা হবে। পুনর্নবীকরণযোগ্য বিদ্যুতের ক্ষেত্রে উদ্ভাবনা এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে উৎসাহিত করার জন্য বিদ্যুৎ মন্ত্রকের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য একটি নতুন বিশেষজ্ঞ গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রকল্পগুলির সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে পাওয়ার পারচেস অ্যাগ্রিমেন্ট (পিপিএ) দ্রুত চূড়ান্ত করার এবং রিনিউএবল পারচেজ অবলিগেশন (আরপিও) কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

শ্রী যোশী ওড়িশার দীর্ঘ উপকূলরেখা এবং বন্দর পরিকাঠামোর জন্য ওড়িশার পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির বিশাল সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন, যেখানে ১৪০ গিগাওয়াট সৌরশক্তি ক্ষমতার বিদ্যুত উৎপাদন এবং সবুজ হাইড্রোজেনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ওড়িশাকে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির একটি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েছে এবং সেখানে সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদনের সম্ভাবনাও অনুসন্ধান করবে। তিনি আরও বলেছেন যে, ওড়িশায় ভাসমান সৌর প্যানেলের সম্ভাবনাও অনুসন্ধান করা হবে। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ওড়িশার ধেনকানাল জেলায় ৬,০০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সোলার মডিউল, সোলার সেল এবং ইনগট-ওয়াফার উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করছে একটি সংস্থা, যার জন্য আনুমানিক বিনিয়োগ ৯,০০০ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয়মন্ত্রী জানান, আরেকটি সংস্থা ওড়িশার ভূবনেশ্বরের খোরদায় ইনফোভ্যালি-২-তে সৌর মডিউল ও সেল উৎপাদনের জন্য ১,০০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার কেন্দ্র স্থাপন করছে, যার প্রত্যাশিত বিনিয়োগ প্রায় ৭৩০ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয়মন্ত্রী যোশী আরও উল্লেখ করেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী সূর্য ঘর যোজনায় ২০২৪-এর নভেম্বরের শেষের মধ্যে ৫ লাখেরও বেশি ইনস্টলেশন সম্পন্ন করা হবে। তিনি জানান, সৌর মডিউল এবং সেল-এর দেশীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে উৎপাদন সংযুক্ত উৎসাহদান (পিএলআই) প্রকল্পগুলোর সম্প্রসারণের প্রস্তাবগুলি বিবেচনা করা হচ্ছে।

ভাষণের সমাপ্তিতে মন্ত্রী বলেন, “আমরা এই শিবিরের সমাপ্তি ঘোষণা করছি শুধুমাত্র শক্তিশালী উদ্দেশ্যের বোধ নিয়ে নয়, বরং দু’দিন আগে আমরা যেখানে ছিলাম, তার চেয়ে আরও পরিশীলিত এবং কৌশলগত পরিকল্পনা সঙ্গে নিয়ে এই শিবির শেষ করছি।”

ওড়িশার উপমুখ্যমন্ত্রী কনক বর্ধন সিংহ দেব বলেছেন, ওড়িশা সরকার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্ধারিত ‘পঞ্চামৃত’ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে।

এমএনআরই’র সচিব প্রশান্ত কুমার সিং বলেছেন, চিন্তন শিবিরটি সফলভাবে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ধারণার আদান-প্রদানে সক্ষম করেছে| তিনি বলেন এই ক্ষেত্রের বিভিন্ন প্রতিকূলতার মোকাবিলায় একটা শক্তিশালী আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের জন্য নবীন ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিমন্ত্রক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ওড়িশার বিদ্যুত দফতরের প্রধান সচিব শ্রী বিশাল কুমার দেবও এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। অতিরিক্ত সচিব সুদীপ জৈন এই আলোচনায় অংশগ্রহণকারী সমস্ত অংশীদারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

দুই দিনের এই চিন্তন শিবির ১৪ নভেম্বর  ওড়িশার ভূবনেশ্বরে শুরু হয়| যেখানে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছিলেন, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এই শিবিরে ১৭টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সৌর ও বায়ু শক্তির কেন্দ্র স্থাপন, গ্রিন হাইড্রোজেন, এনার্জি স্টোরেজ, ভূমি উদ্ধার এবং ট্রান্সমিশন পরিকল্পনা, নীতিগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়| যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট ‘অজৈব জ্বালানিবিহীন’ (নন-ফসিল) শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা। এই অধিবেশনগুলোতে শীর্ষস্থানীয় নীতি নির্ধারকরা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, শিল্পপতি, সিইও এবং কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন, যারা ভারতের পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের অভিযাত্রায় অবিচ্ছেদ্য অংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *