BRAKING NEWS

চিনের গ্র্যান্ড লিসবোয়া হোটেলের আদলে কালীপূজার মণ্ডপ করিমগঞ্জের নবজাগরণ ক্লাবের

।। স্নিগ্ধা দাস ।।করিমগঞ্জ (অসম), ২৬ অক্টোবর (হি.স.) : হাতে আর মাত্র কয়েকদিন, এর পরই কালীপূজা, দীপাবলির আনন্দে মেতে উঠবে আট থেকে ৮০। দুর্গাপুজোর পর মহাশক্তির আরাধনায় মাতবে সীমান্ত শহর করিমগঞ্জ। জেলা সদরে বিগ বাজেটের বেশ কয়েকটি পুজো রয়েছে। মণ্ডপ থেকে থিম, প্রতিমা থেকে আলোকসজ্জা, সবেতেই জোরকদমে চলছে কাজ।

সীমান্ত শহরে দুর্গাপূজা থেকে কালীপুজোর আয়োজন বেশি হয়। এবার প্রায় ১৫টি কালীপুজো বিগ বাজেটের। তার মধ্যে থিম তৈরি করতে গিয়ে বড় অঙ্কের টাকা খরচ করছেন উদ্যোক্তারা। গত কয়েকবছর ধরে কালীপুজোর জন্য করিমগঞ্জ বিখ্যাত হওয়ায় ভিড়ও হয় মারাত্মক। তাই থিম-নির্ভর কালীপুজোয় এখন চলছে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার পালা। তার সঙ্গে আছে আলোকসজ্জার ছড়াছড়ি। এসব দেখতে অন্যান্য জেলা, এমন-কি পার্শ্ববর্তী রাজ্য থেকেও মানুষ ভিড় জমান শহরে।

এ মুহূর্তে পূজা কমিটিগুলির ব্যস্ততা তুঙ্গে। মহাশক্তির আরাধনায় বিগত কয়েক বছরে জেলার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে চরবাজারের নবজাগরণ ক্লাব। গত বছর তাদের তৈরি কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে ভিড় উপচে পড়েছিল দর্শনার্থীদের। ফলস্বরূপ যুগশঙ্খ সুন্দর আলোর উৎসবে জেলার সেরা কালীপূজা কমিটির মধ্যে চরবাজারের নবজাগরণ ক্লাব প্রথম স্থান দখল করতে সক্ষম হয়েছিল। এবার তাদের পুজো ৬১-তম বর্ষে পদার্পণ করছে।

পর পর বেশ কয়েক বছর ক্লাবের চমকে দেওয়া এই থিমের প্যান্ডাল দেখতে জনসমুদ্র নেমেছিল কালীপূজার এক সপ্তাহ। এ বছরও তাদের থিম ঠিক কী হতে চলেছে? সে নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিস্তর আগ্রহ অনেক। কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক সন্দীপ নন্দী জানান, চিনের গ্র্যান্ড লিসবোয়া হোটেলের আদলে পুজো মণ্ডপ সাজিয়ে এবারে চমকে দিতে চাইছে তাঁদের নবজাগরণ ক্লাব।

এবার পুজোর বাজেট ২০ লক্ষ টাকা। প্রায় ৮০ ফুট চওড়া এবং ৭০ ফুট উঁচু মণ্ডপের জন্য রয়েছে ১৫ ফুট উচ্চতার কালীপ্রতিমা তৈরি হচ্ছে। চিনের ম্যাকাও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত ৪৭ তলা গ্র্যান্ড লিসবোয়া হোটেলের অনুকরণে কালীপুজোর মণ্ডপ তৈরি করতে নবদ্বীপ থেকে আগত শিল্পীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে চলছে মণ্ডপসজ্জার কাজ। সমস্ত রকম পরিবেশবান্ধব জিনিস, মূলত বিভিন্ন রঙের কাঁচের টুকরো প্লাইবোর্ড, অ্যালুমিনিয়াম শিট এবং কাঠের ফ্রেম দিয়ে চলছে মণ্ডপ তৈরির কাজ। আর এ নিয়ে মানুষের মনে কৌতূহল তৈরি হয়েছে ইতিমধ্যেই। লেজার লাইটিঙে সাজানো প্যান্ডালটি ঘুরে দেখে চোখ ধাঁধা লাগবে অনেকের।

গতবারের মতো এবারও নবজাগরণ ক্লাবের সুউচ্চ মণ্ডপের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের নবদ্বীপের ঊষা ডেকোরেটার্সকে। স্বত্বাধিকারিকারী জগন্নাথ দেব সহ তাঁর কারিগররা গত এক মাস ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। আলোকসজ্জায় রয়েছেন নবদ্বীপের শিল্পী অসীম মণ্ডল। ক্লাবেই গড়ে তোলা হচ্ছে প্রতিমা। দায়িত্বে রয়েছেন কলকাতার মৃৎশিল্পী।

পুজো কমিটির সভাপতি মুকেশ কুমার সিং, সম্পাদক আশিসজ্যোতি ধর, যুগ্ম-সম্পাদক সন্দীপ নন্দী, কোষাধ্যক্ষ কৌশিক রঞ্জন দেব। আয়োজকদের তরফে জানানো হয়েছে, তিনদিন প্রসাদ বিতরণ করা হবে। পুজোয় থাকবে বিভিন্ন স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ এলাকার দুঃস্থদের বস্ত্র বিতরণ। তাঁদের আশা, দর্শকদের চোখ ধাঁধানো মণ্ডপ উপহার দেওয়া হবে এবারও। তাছাড়া, পুলিশ প্রশাসন সহ প্রায় ৭৫ জনের ওপর ক্লাবের ভলান্টিয়ার থাকবেন।  উদ্যোক্তাদের দাবি, থিমে নতুনত্ব সহ এবার যে রকম আলোকসজ্জা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, তা দর্শনার্থীদের খুব ভালো লাগবে বলেই বিশ্বাস। থাকবে বিশেষ সাউন্ড এফেক্ট সহ সংগীত। যা ৮ থেকে ৮০ প্রত্যেক দর্শনার্থীদের নজর কাড়বে। সবমিলিয়ে এবার নবজাগরণ সংঘের পুজো দর্শকদের মন ছুঁয়ে যাবে বলে ক্লাব কর্তৃপক্ষের বিশ্বাস।

সন্দীপ নন্দী বলেন, বরাবরই করিমগঞ্জের সেরা পুজোর তালিকায় নিজেদের জায়গা করে তাঁদের ক্লাবের শ্যামা পুজো। গত বছরও তাঁদের ক্লাবের পূজা আলোকসজ্জা-প্রতিমা মন কেড়েছে সাধারণ মানুষের। যুগশঙ্খ-এর সুন্দর আলোর পুরস্কার সহ কালীপূজার এক সপ্তাহ খবরের শিরোনামে ছিলেন তাঁরা। এ বছরও তার কোনও ব্যতিক্রম হবে না। এক কথায়, এবার চিনের লুমিনাসের গ্র্যান্ড লিসবোয়া থিম ভুলতে সময় লাগবে দর্শনার্থীদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *