নয়াদিল্লি, ১৭ অক্টোবর : পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পী সমন্বয়ে প্রথমবারের মতো ভারতীয় নৃত্যের আন্তর্জাতিক উৎসব আয়োজন করলো সঙ্গীত নাটক আকাদেমি। ১৬ অক্টোবর,২০২৪-এ ছয়দিন ব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করলেন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি ও পর্যটনমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত। নয়াদিল্লির পুসায় এন এ এস সি পরিসরে এ পি শিন্ডে সিম্পোজিয়াম প্রেক্ষাগৃহে আয়োজিত উৎসব দক্ষ কৃতি শিল্পী এবং ছাত্র ছাত্রীদের সামনে বৈচিত্র্যময় সমৃদ্ধ ভারতীয় নৃত্যের অনুসন্ধানমূলক উদযাপনের সমবেত অবকাশ এনে দিয়েছে।
ভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে নৃত্যের তাৎপর্য এবং দেশের পরম্পরার সঙ্গে যুব অংশকে যুক্ত করার ক্ষেত্রে এই শিল্প ধারার ভূমিকা নিয়ে উৎসব উপলক্ষে বিশেষ বার্তা বিনিময় করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এতে তিনি সঙ্গীত নাটক আকাদেমি এবং সংস্কৃতি মন্ত্রকের প্রতি এরকম আয়োজনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী জানান,এই আয়োজন সবার জন্য স্মরণীয় এবং এ এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শিল্পীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এতে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের অবকাশ তৈরী হয়েছে। সঙ্গীত এবং নৃত্য়ের ভাষা অসীমান্তিক এবং তা সবার বোধগম্য বলে জানালেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি এই শিল্প ধারাকে ভারতীয় সাংস্কৃতিক পরিচিতির অভিন্ন অঙ্গ হিসেবে আখ্যায়িত করে নবীন প্রজন্মের জন্য নৃত্যের তাৎপর্যের ওপর আলোকপাত করেন। ভারতে ভরত মুনিই প্রায়োগিক শিল্পকলাকে উৎসর্গ করে প্রথম লিখিত শাস্ত্র রচনা করেন। এই ঐতিহ্য বহন করে চলা গর্ব এবং দায়বদ্ধতার উৎস বলে জানান তিনি। এই ধরনের উৎসব দেশের যুবঅংশকে শেকড়ের সঙ্গে যুক্ত করার পাশাপাশি দেশ গঠনে তাঁদের ভূমিকাকেও শক্তিশালী করে বলেই এর সঙ্গে নবীন প্রজন্মের সংযুক্তির ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।
উদ্বোধক হিসেবে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত বলেন, এই উৎসব ভারতীয় নৃত্যের মহান ঐতিহ্য উদযাপনের মাধ্যমে আমাদের সাংস্কৃতিক পরম্পরাকে সম্মান জানাতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের দক্ষ কৃতি শিল্পী এবং শিক্ষার্থীদের একত্রিত করেছে। চির প্রবাহিনী গঙ্গার মতো, এই ঐতিহ্য বিভিন্ন প্রজন্মের অনবদ্য অবদানে বিকাশ লাভ করে| বৈচিত্র্যের মধ্যেও এক গভীর একতায় আমাদের সংযুক্ত করে। তিনি বলেন তাঁর শেকড় রাজস্থানের মরু অঞ্চল| সেখানে অভাবেও শিল্প বিকাশ লাভ করে। সঙ্গীত এবং নৃত্য যে জীবনে আনন্দ এবং অর্থ নিয়ে আসে সে ব্যাপারে নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন শ্রী শেখাওয়াত। মীরাবাইয়ের ভক্তিমূলক গানও একসময় সেরকম ভূমিকা নিয়েছিল বলে জানান তিনি। আজকের সংঘাতময় পৃথিবীতে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নৈতিক অবক্ষয়ের মাঝে ভারত নিজের প্রাচীন প্রজ্ঞা, শিল্পকলা এবং মূল্যবোধের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক দিশানির্দেশকের ভূমিকা পালন করে চলেছে| যোগব্যায়াম থেকে আয়ুর্বেদ, এদেশের বিভিন্ন চর্চার বিষয় গোটা পৃথিবীতে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে চলেছে। এই উত্তরাধিকার এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব বলেও তিনি বলেন। সমুদ্র মন্থনে যেমন অমৃতের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিলো, একইভাবে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা ও দিশানির্দেশের মাধ্যমে এই উৎসব ভাবনা বিনিময়ের একটি মঞ্চ হিসেবে ভারত এবং বিশ্বকে ক্ষমতায়িত করতে চলেছে বলে উল্লেখ করেন শ্রী শেখাওয়াত।
কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের যুগ্মসচিব উমা নান্দুরি, এই অতুলনীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যায় তরুণ অংশগ্রহণকারীকে একত্রিত করার জন্য সঙ্গীত নাটক আকাদেমিকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান৷ তিনি বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সাংস্কৃতিক, শৈল্পিক এবং নৃত্য শিল্পকলার অনুসারীদের কল্যাণ ও সম বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করছে। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে আগামী বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নিশ্চিত করার ব্যাপারে মন্ত্রকের প্রতিশ্রুতিও পুনরায় উল্লেখ করেন তিনি।
প্রখ্যাত নৃত্য কিংবদন্তী ডক্টর সোনাল মানসিং সাংবাদিকদের জানান, “কঠিন আন্দোলন বার বার নাচের মাধ্যমে পরিপূর্ণতা পেয়েছে। নটরাজের ধারণা বর্তমান সময়েও অনেক বেশি তাৎপর্যবাহী। এখন মানুষ বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং আরও অনেক কিছু নিয়ে কথা বলছেন, এতে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হয়ত একদিন এমন একটি দৃশ্যের দিকে নিয়ে যেতে পারে যেখানে সোনাল মানসিংহ এআই-এর সাহায্যে নাচবেন। যথার্থতা, ভারসাম্য এবং সৃজনশীলতার উপলব্ধিতে এই সমস্ত বিষয়কে সমবেত করে এগিয়ে যাওয়ার ওপরও তিনি জোর দেন।
সঙ্গীত নাটক আকাদেমির চেয়ারপার্সন ডঃ সন্ধ্যা পুরেচা ভারত জুড়ে প্রায়োগিক শিল্পের বিস্তারিত পরিসরের অভিজ্ঞতার নিরিখে স্বাভাবিকভাবেই এদেশের সমস্ত সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময় নৃত্য ঐতিহ্যকে এক ছাদের নিচে একত্রিত করার পরিকল্পনা তুলে ধরেন। ভারতীয় নৃত্যের বহুমাত্রিক সংক্ষিপ্ত অন্বেষণের লক্ষ্যেই এই প্রয়াস বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বার্তা অনুসরণ করে তিনি বলেন, এরকম সমৃদ্ধ উত্তরাধিকারের সংরক্ষণ ও অগ্রগতিতে ভূমিকা পালন গৌরবের পাশাপাশি দায়িত্বেরও বিষয় বটে।
উৎসব প্রেক্ষাপট: –
সঙ্গীত নাটক আকাদেমি আয়োজিত ভারতীয় নৃত্যের আন্তর্জাতিক উৎসব, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দক্ষ কৃতি শিল্পী, নৃত্য সমালোচক এবং অভিনয়শিল্পীদের একত্রিত করছে। ষোলই অক্টোবর,২০২৪ থেকে এই উৎসব শুরু হয়েছে। ভারতীয় নৃত্যের ঐতিহাসিক ও সমসাময়িক বিবর্তন, নৃত্য শিক্ষা, গবেষণা পদ্ধতি এবং শিল্পকলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব সহ বিভিন্ন ভাবনার বিষয়ে অনুসন্ধানমূলক তিরিশটি আলোচনার পর্ব এতে অন্তর্ভূক্ত থাকবে। আলোচনাগুলি সংস্থাগত সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএস আর) তহবিল এবং অভিনয়কারীদের জন্য সুস্থায়ী জীবিকার বিষয়কেও আওতাভূক্ত করার প্রয়াস নেবে।
প্রতি সন্ধ্যায়, কামানি প্রেক্ষাগৃহে ডক্টর সোনাল মানসিংহ এবং রামলি ইব্রাহিম সহ বিখ্যাত শিল্পীদের সুদক্ষ উপস্থাপনার পাশাপাশি ভারত এবং বিদেশের একক এবং সমবেত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকবে। একইসঙ্গে, গতকাল দু’টি প্রদর্শনীরও সূচনা হয়। ললিত কলা আকাদেমিতে সঙ্গীত নাটক আকাদেমির ইতিহাস সমৃদ্ধ একটি প্রদর্শনী ছাড়াও এপি শিন্ডে সিম্পোজিয়াম প্রেক্ষাগৃহেই অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের কৃতিত্বের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে অপর প্রদর্শনীতে৷ উৎসবের লক্ষ্য হল শিল্পকলায় সুস্থায়ী ভবিষ্যৎ গঠন নিয়ে আলোচনা করা এবং ভারতীয় নৃত্যের পক্ষে প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থন, সহযোগিতা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের জন্য একটি মঞ্চ তৈরি করা।