নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, আগরতলা, ১৯ সেপ্টেম্বর: রাজ্যের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করছে বর্তমান সরকার। এরই ফলস্বরূপ গত কয়েক বছরে রাজ্যে পর্যটকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ বিগত সরকারের আমলে পর্যটন ক্ষেত্রের উন্নয়নে কোন নজরই দেওয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার ধলাই জেলার কমলপুর মহকুমার সানাইয়া রিয়াং পাড়ায় সুলমা ডোঙ্গুর তুইসোই ওয়াটারফল পর্যটন কেন্দ্রে নতুন সুবিধার উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
পর্যটন সমৃদ্ধ ত্রিপুরায় দেশ ও বিদেশের পর্যটকদের আকর্ষিত করতে কমলপুর মহকুমায় অবস্থিত এই মনোমুগ্ধকর পর্যটন কেন্দ্রে মুখ্যমন্ত্রী ও পর্যটন মন্ত্রীর হাত ধরে উদ্বোধন হয় নতুন সুবিধা।
উদ্বোধকের বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, এখানে না আসলে বোঝা যেত না যে এত সুন্দর একটা ঝর্ণা রয়েছে। চাক্ষুষ করলে বোঝা যায়। দূর থেকে অনেক সময় অনেক রকম মনে হয়।
অনুষ্ঠানে ছোট ছোট মেয়েদের ব্যাম্বো ড্যান্স ও গান পরিবেশন খুবই ভালো লেগেছে। সত্যিকার অর্থে তারাই আজকের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করলো। আর এটাকে কাজে লাগিয়ে আগামীদিনে পর্যটকরা যখন এখানে আসবেন তখন ঝর্ণার দৃশ্য উপভোগ করার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও উপভোগ করতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবসময় বলেন আত্মনির্ভর ভারত, আত্মনির্ভর ত্রিপুরা। এখান থেকেও উপার্জনের সুযোগ হতে পারে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগরতলা থেকে এই ঝর্ণার দূরত্ব প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। ত্রিপুরা সম্পর্কে অনেকের ধারণা নেই। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলিকে আমরা পর্যটন ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করেছি। তিনি রাজ্যে এসে অনেক জায়গায় গিয়েছেন এবং শুটিং করেছেন। টিভি এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পর্যটনের প্রচার হচ্ছে। এতে অনেক পর্যটক আসছেন।
আমাদেরও উচিত পর্যটন শিল্পের বিকাশে এগিয়ে আসা। কারণ হাতের কাছেই এখন মোবাইল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে আমরা যদি সারা পৃথিবীকে জানান দিই যে এখানে এমন একটি সুন্দর ঝর্ণা রয়েছে। তাতে সাড়া দিয়ে মানুষ অবশ্য আসবে এখানে। অনেকে এসে বলেন যে ত্রিপুরায় এত কিছু আছে, কিন্তু অনেক মানুষ সেটা জানেন না। তাই রাজ্যের পর্যটন শিল্পের অগ্রগতির জন্য আমাদের সকলকে মিলিতভাবে প্রয়াস নিতে হবে। মানুষকে আরো জানাতে হবে। উত্তর পূর্ব জোনে থাকা সিকিম, দার্জিলিং, মেঘালয় সহ বিভিন্ন জায়গায় যান পর্যটকরা।
সেই জায়গায় ত্রিপুরায় কেন আসবে না মানুষ? বিগত সময়ে যারা রাজ্য শাসন করেছেন তাদের মধ্যে এবিষয়ে কোন চিন্তাভাবনা ছিল না। শুধু কেন্দ্র দেয় না, কেন্দ্র দেয় না – এসবই বলতো। নিজেদের যে এত রত্নভান্ডার রয়েছে তাতে কোন আমল দেয়নি তারা। আর ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনের পর পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বারবার বলছেন নিজেদের কাছে যা কিছু রয়েছে তার সদ্ব্যবহার করা। এতে আর্থ সামাজিক ব্যবস্থারও উন্নয়ন হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ত্রিপুরায় পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য ‘ত্রিপুরা পর্যটন নীতি’ চালু করা হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হচ্ছেন। বিদেশ থেকেও বিনিয়োগকারীরা আসছেন। স্বদেশ দর্শন প্রকল্পে সিপাহীজলা, উদয়পুর, ছবিমুড়া, নীরমহল, উজ্জ্বয়ন্ত প্রাসাদ, ডম্বুর লেক, জম্পুইহিল, উনকোটিতে পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হচ্ছে। আগামীদিনে এডিবি ফান্ড থেকে এসব ক্ষেত্রে আরো উন্নয়ন ঘটানো হবে। এর পাশাপাশি পরিবেশ বান্ধব প্রায় ৪১টি লগহাট নির্মাণ করা হয়েছে। আরো ১০টি চালু হওয়ার পথে রয়েছে। উজ্জ্বয়ন্ত প্রাসাদে পর্যটকদের জন্য লাইট এন্ড শো’য়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ত্রিপুরার রাজ বংশের ইতিহাস সেখানে তুলে ধরার ব্যবস্থা হয়েছে। বাইরে থেকেও মানুষ আসছেন। এখানে বসার সুবিধা, খাবারের ব্যবস্থাও রয়েছে। পর্যটকদের সঙ্গে সবসময় ভালো ব্যবহার করতে হবে। সেই সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। কোন ধরণের অঘটন বা উশৃঙ্খলতা থেকে বিরত থাকতে হবে। পর্যটকদের ভালোভাবে আদর আপ্যায়ন করতে হবে। এরপর তারাই ফিরে গিয়ে ত্রিপুরার প্রশংসা করবেন। এতে ত্রিপুরার জাতি জনজাতির মধ্যেকার সুদীর্ঘ ঐতিহ্য বজায় থাকবে।
ডাঃ সাহা বলেন, প্রসাদ প্রকল্পে মাতা ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন কাজও প্রায় শেষের পথে। নির্মাণ সংস্থাকে দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। তারা আশ্বাস দিয়েছেন যত দ্রুত সম্ভব কাজ সম্পন্ন করার। পরিকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে মানুষ আরো বেশি করে সেখানে যাবেন। পর্যটন দপ্তর থেকে এডভেঞ্চার ট্যুরিজম শুরু করা হয়েছে। ডুম্বুর লেক, ছবিমুড়া, জম্পুই হিলে এডভেঞ্চার ট্যুরিজম চালু করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০২৩ – ২৪ অর্থ বছরে ৪ লক্ষ ৭০ হাজার দেশীয় পর্যটক এবং ৭৫ হাজারের অধিক বিদেশী পর্যটক ত্রিপুরা ভ্রমণ করেছিলেন। রাজ্যে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে এবং আরো বাড়তে থাকবে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, বিধায়ক মনোজ কান্তি দেব, বিধায়ক স্বপ্না দাস পাল, ধলাই জিলা পরিষদের সভাধিপতি সুস্মিতা দাস, সালেমা পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারপার্সন বীণা দাস, কমলপুর নগর পঞ্চায়েতের চেয়ারপার্সন প্রশান্ত সিনহা, দুর্গা চৌমুহনী পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারপার্সন ভানু প্রতাপ লোধি, পর্যটন দপ্তরের অধিকর্তা প্রশান্ত বাদল নেগি, ধলাই জেলার জেলাশাসক সাজু ভাহিদ এ, পুলিশ সুপার অবিনাশ রাই সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।