নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৬ সেপ্টেম্বর: বন্যায় গোটা রাজ্যব্যাপী ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সাধারণ মানুষ। অতি থেকে অতি ভারী এবং অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে বিধ্বংসী বন্যায় রাজ্যের জনজীবনে এক নজিরবিহীন বিপর্যয় নেমে এসেছে। জল নেমে যাবার পরে চারিদিকে শুধুমাত্র ধ্বংসের ছবি। ভূমিধ্বসে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। দুজন এখনো নিখোঁজ। আহত বেশ কয়েকজন। সরকারি তালিকায় অমরপুর দেববাড়ি এডিসি ভিলেজের গুরুতরভাবে আহত উজ্জ্বল কুমার জমাতিয়ার নাম নেই। শুক্রবার সংবাদিক সম্মেলনে সিপিআই (এম এল) রাজ্য কমিটি এই প্রতিটি মৃত্যুর জন্য শোক জানায়।
সাংবাদিক সম্মেলনে নেতৃত্বরা বলেন, কৃষি ফসল, মৎস্য সম্পদ, গবাদি পশু এবং ঘরবাড়ির বিপুল ক্ষতি হয়েছে। এখনো পর্যন্ত সরকারি তথ্য বলছে নজিরবিহীনভাবে বন্যায় ১৮ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ভূমিধ্বস ২০৩২ স্থানে। ১৯৫২ টি রাস্তা ভেঙেছে। ৫ হাজার হেক্টর কৃষি জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ১ লক্ষ ৫ হাজার ১০১ হেক্টর আমন ধানের ফসল নষ্ট হয়েছে। উদ্যান চাষে ৫,৬১৪ হেক্টর আংশিক বা সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। কৃষিতে মোট ক্ষতি ১ হাজার ১৮ কোটি টাকা। মৎস্য চাষে ক্ষতি ১৪৮২ কোটি। প্রাণীসম্পদে ক্ষতি ২৩ কোটি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষক ও শ্রমিকদের। ২’৫ লক্ষ কৃষক পরিবারের প্রায় ২ লক্ষ মানুষ শিবিরে ও টিলা ভূমিতে বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
নেতৃত্বরা আরো বলেন, ৭৫%-৮০% কৃষকের কৃষি জমি নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যায় প্লাবিত এলাকায় পানীয় জলের সংকট সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সর্বদলীয় মিটিং এর পরে বলেছেন প্রাথমিক হিসাবে ক্ষতি ১৫ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার অতি ভারী বৃষ্টিপাত সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা জারি করতে এবং মানুষজনকে সময় থাকতে সরিয়ে আনতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এদিকে কেন্দ্র রাজ্যকে দিয়েছে মাত্র ৪০ কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে সবমিলিয়ে ১০০ কোটি টাকাও নেই। তাই ত্রাণের কাজেও যথেষ্ট ঘাটতি। খাদ্য, জল ও ঔষধের অভাব উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ত্রাণসামগ্রী ও খাদ্যবস্তুর সরবরাহ যথেষ্ট নয়। ব্যক্তিগত ও সামাজিক উদ্যোগে খাদ্য, চিকিৎসা ও ঔষধপত্র দেওয়া হচ্ছে। মৃতদের পরিবার এখনো ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি। ই শ্রম কার্ড ভুক্ত শ্রমিকদের ব্যাংক একাউন্টে কোনো টাকা দেওয়া হয়নি। কৃষি জমি চাষের উপযোগী করতে কৃষকেরা কোনও সহায়তা পায়নি। সহায়তা না পেয়ে কৃষকেরা এখন নিজেরাই উদ্যোগী হতে শুরু করেছেন। কিন্তু তা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। শ্রমিকদের কাজ নেই। বাজারে জিনিসপত্র অগ্নি মূল্য।
তাই এদিনের সাংবাদিক সম্মেলন থেকে নেতৃত্বরা দাবি জানান, অবিলম্বে রাজ্যকে জাতীয় বিপর্যয় এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা, রাজস্ব দপ্তরের উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়ন করা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ফান্ড থেকে ১৫ হাজার ভোটে টাকা প্রদান করা, মৃতদের পরিবারকে ৫০ লক্ষ টাকা ও একটি করে সরকারি চাকরি প্রদান করা, আহতদের কুড়ি লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানায়।