আগরতলা, ৪ সেপ্টেম্বর : রাজ্যে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত রাজ্যের ১১৬৩টি বিদ্যালয়ে, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ১৩৩টি বিদ্যালয়ে, নবম-দশম শ্রেণীতে ১১৫টি বিদ্যালয়ে এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে ৬৫টি বিদ্যালয়ে ককবরক অন্যতম বিষয় হিসেবে পড়ানো হচ্ছে। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আরও ২০টি স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে ককবরক ভাষা বিষয় হিসেবে চালু করা হয়েছে। আজ বিধানসভা অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে বিধায়ক রামপদ জমাতিয়ার একটি লিখিত প্রশ্নের উত্তরে ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা উন্নয়ন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী টিস্কু রায় একথা জানান। বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া, বিরোধী দলনেতা জীতেন্দ্র চৌধুরী, বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ, বিধায়ক চিত্তরঞ্জন দেববর্মার অতিরিক্ত প্রশ্নের জবাবে সংসদীয় মন্ত্রী রতনলাল নাথ বলেন, বর্তমান সরকার আসার পর থেকে ককবরক ভাষাকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। জনজাতিদের ভাষা, সংস্কৃতির উন্নয়ন ছাড়া এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে তোলা সম্ভব হবেনা।
ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা উন্নয়ন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী টিস্কু রায় বলেন, রাজ্য সরকার ককবরক ভাষার উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা দপ্তর ত্রিপুরা রাজ্যের সমস্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি ভাষা ম্যাপিং (ভূচিত্র) করার জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করবে। এই ম্যাপিংয়ের মূল বিষয় হবে ত্রিপুরা রাজ্যের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের মাতৃভাষার সঠিক ভাষা বৃত্তান্ত চিহ্নিত করা। এই অনুশীলনটি স্কুলে ভর্তি হওয়া যেসব শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষা হিসাবে ককবরক রয়েছে তাদের সঠিক অবস্থা এবং সেই স্কুলগুলিতে ককবরক ভাষা-জানা শিক্ষকদের সঠিক চিত্র সনাক্ত করতে সহায়তা করবে। অককবরক ভাষাভাষী রাজ্য সরকারি এবং রাজ্যের অককবরক ভাষী সাধারণ মানুষকে প্রয়োজনীয় ককবরক ভাষার দক্ষতা শেখানোর জন্য, ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা দপ্তর রাজ্যজুড়ে ককবরক লার্নিং কোর্স চালু করবে। উল্লেখিত ককবরক লার্নিং কোর্সটি ত্রিপুরার ২৩টি মহকুমা এবং ৫৮টি ব্লকে চালু করা হবে। মন্ত্রী শ্রীরায় জানান, ককবরক ভাষা এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা, যথা- চাকমা, হালাম, মণিপুরি, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি, মগ, কুকি-মিজো ও গারো ভাষার প্রচার ও বিকাশের জন্য ১৪ আগস্ট, ২০১২ সালে ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষার দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিটি ভাষার একটি স্বতন্ত্র উপদেষ্টা কমিটি রয়েছে যা সময়ে সময়ে দপ্তরকে পরামর্শ দেয় এবং তাদের ভাষার সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের প্রস্তাব দেয়। ২০১২ সালে ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা দপ্তর প্রতিষ্ঠার পরে, এই দপ্তর নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য ককবরক পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ শুরু করে।
এই দপ্তর প্রতিষ্ঠার পর থেকে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা দপ্তর কর্তৃক বিদ্যালয়গুলিতে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। বর্তমানে ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা দপ্তর দ্বারা প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণীর জন্য ককবরক পাঠ্যপুস্তক প্রস্তুত করা হচ্ছে এবং এসসিইআরটি দ্বারা ককবরক পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিনামূল্যে স্কুলগুলিতে বিতরণ করা হচ্ছে। ককবরক ভাষার প্রখ্যাত লেখক/ শিক্ষাবিদদের বিভিন্ন সাহিত্য গ্রন্থ ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা দপ্তর দ্বারা প্রকাশ করে থাকে। ককবরকের সাহিত্য গ্রন্থের মোট ৫৭টি বই এই দপ্তর থেকে প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ককবরকের সাহিত্য গ্রন্থের ২৪টি বই এই দপ্তর থেকে প্রকাশিত হয়েছে। ককবরক ভাষা শিক্ষকদের সুবিধার্থে ২০২২ সালে ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা দপ্তর তৃতীয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ককবরক ভাষার জন্য ‘শিক্ষক সারপুস্তিকা (হ্যান্ডবুক)’ প্রকাশ করেছে।
মন্ত্রী শ্রীরায় জানান, ককবরক ভাষার সার্বিক উন্নয়নের জন্য ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা দপ্তর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন কর্মশালা, সেমিনার, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ককবরক ভাষার ১৫টি কর্মশালা, সেমিনার, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ২০১২ সালে দপ্তর প্রতিষ্ঠার পর থেকে এপর্যন্ত ককবরক ভাষার মোট ৩৩টি কর্মশালা, সেমিনার, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এখানে উল্লেখ্য যে, ককবরক উপভাষা শব্দ কোষাগারকে/ অভিধানকে (ডাইলেক্টিকাল থিসরাসকে) উন্নীতকরণ (আপগ্রেড) করার জন্য ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা
দপ্তরের উদ্যোগে বিগত ১০ থেকে ১২ জুলাই, ২০২৪ ৩দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা দপ্তরের উদ্যোগে নতুন ককবরক উপভাষা শব্দ কোষাগার/ অভিধান প্রকাশ করা হবে। বিধানসভায় মন্ত্রী শ্রীরায় আরও বলেন, ককবরক ভাষার সাহিত্য পত্রিকা, যথা- খুমপুই ও ইমাংনি খুম্বার নিয়মিত দপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত হচ্ছে। ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছর ককবরক দিবস উদযাপন উপলক্ষে এই দপ্তর থেকে নিমিতভাবে য়াকপাই সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশিত হয়ে আসছে। ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষার দপ্তর প্রতি বছর ১৯ জানুয়ারি রাজ্যস্তরের ককবরক সাল (দিবস) অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এই বছরের রাজ্যস্তরের ছেচল্লিশতম ককবরক দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের সময় ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ রবীন্দ্রভবন, আগরতলায় ৫-জন ককবরক শিক্ষককে ককবরক ভাষা শিক্ষাদান ও ককবরক ভাষার বিকাশে তাদের অবদানের জন্য প্রত্যেককে ১৫,০০০ টাকা নগদ পুরস্কার এবং রিত্রাক, স্মৃতিচিহ্ন এবং স্যুভেনির দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে।