আগরতলা, ৪ সেপ্টেম্বর : সম্প্রতি রাজ্যে অতিভারী বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যায় ৩১ জনের মৃত্যু এবং কেরালার ওয়ানেড জেলায় প্রবল বর্ষণ ও ভূমিধসে চার শতাধিক মানুষের প্রানহানিতে আজ ত্রিপুরা বিধানসভার অধিবেশনে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন দুটি ঘটনায় পৃথক পৃথকভাবে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন। বিধানসভার সদস্যগণ দুই মিনিট করে দাঁড়িয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
শোক প্রস্তাবে বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন বলেন, “আমি গভীর শোকের সঙ্গে এই সভাকে অবহিত করছি যে, গত ১৯ থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ক্রমাগত অতিভারী বৃষ্টিপাতের ফলে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় ভয়াবহ বন্যার জলে এবং ভূমি ধ্বসে গ্রাম-শহরের বসতি অঞ্চল, কৃষিজমি, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ পরিকাঠামো সহ সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অসংখ্য বিদ্যালয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে একত্রিশ জন এই প্রলয়ঙ্কারী বন্যার জলে ও মাটি চাপায় অকালে প্রাণ হারিয়েছেন। সহস্রাধিক গৃহপালিত পশু বন্যার জলের প্রবল স্রোতে ভেসে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। চার দশক আগে ত্রিপুরা রাজ্যে হয়ে যাওয়া ১৯৮৪ সন বা ১৯৯৩ সনের প্রবল বন্যার থেকেও এবারের বন্যার ভয়াবহতা এতটাই ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছিল যে, রাজ্যের প্রতিটি জেলা প্রশাসন যদি তাৎক্ষনিকভাবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বিপন্নদের উদ্ধার কার্যে নিয়োজিত না হত তাহলে আরও প্রাণহানীর সম্ভাবনা ছিল।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত তথা বিপন্নদের উদ্ধারের কাজে নিয়োজিত এসডিআরএফ, এনডিআরএফ, সিভিল ডিফেন্সের ভলান্টিয়ার্স, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পাশাপাশি রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে অসংখ্য যুবক-যুবতী, ক্লাব, সামাজিক সংস্থা এবং রাজনৈতিক দলের নেতা- কর্মীরা রাত-দিন নিজেদের ঝুঁকির মধ্যে রেখেও বহু জলবন্দী মানুষ এমনকি বেশ কিছু সংখ্যক গৃহপালিত পশুকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে সময়মত উদ্ধার করেছেন। উনাদের এই ভূমিকা খুবই প্রশংসনীয় এবং সামাজিক কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের স্বতস্ফূর্ত এই অবদান আমাদের রাজ্যে আরও একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে সকলের মনে গেঁথে থাকবে। বিপদকালীন সময়ে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বিপন্নদের উদ্ধারের পাশাপাশি জরুরী ভিত্তিতে খোলা ৬৩২টি ত্রাণ শিবিরে প্রায় এক লক্ষ সাতাশ হাজার বিপন্ন মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। ত্রাণ শিবিরে আশ্রিত মানুষগণকে পরিশ্রুত পানীয়জল, আহার, শিশুদের দুগ্ধ সহ ত্রান শিবিরে আশ্রিতদের নিয়মিত চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে নিশ্চিতভাবে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
বন্যা দুর্গতদের সাহায্যের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার থেকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্নভাবে যোগাযোগ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হয়েছে। বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ফলে পরবর্তী পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করতে রাজ্য প্রশাসনের পাশাপাশি রাজ্যের সুনাগরিকগণ আগামীদিনেও সর্বাত্মক সহায়তা করবেন বলে এই সভা দৃঢ়ভাবে আশা ব্যক্ত করছে।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের এই প্রলয়ঙ্কারী বন্যার জলে এবং মাটি চাপায় এই রাজ্যের দুগ্ধপুষ্য শিশু এবং বৃদ্ধ সহ একত্রিশ জন বাসিন্দার অকাল প্রয়াণে এই সভা গভীরভাবে শোকগ্রস্ত। একটানা ভারী বর্ষণের তান্ডবে এই একত্রিশ জনের অকাল প্রয়াণে ত্রিপুরা বিধানসভা গভীর শোক ব্যক্ত করে শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা ব্যক্ত করছে।”
কেরালার ঘটনায় অধ্যক্ষ বলেন, আমি গভীর দুঃখের সঙ্গে এই সভাকে জানাচ্ছি যে, গত ৩১ জুলাই রাত পৌনে দু’টো নাগাদ উত্তর কেরালার ওয়ানেড জেলার পাহাড় ঘেঁষা চুরালমালা এবং মুন্ডাক্কাই এলাকার জনবসতিগুলোতে মেঘ কেটে প্রবল বর্ষণের ফলে এক বিধ্বংসী ভূমিধসের কবলে পড়ে। ভূমিধস কেবল নির্দোষ প্রাণই কেড়ে নেয়নি, অসংখ্য পরিবারকে বাস্তচ্যুত করার পাশাপাশি তাদের ঘরবাড়ি মাটি চাপায় নিশ্চিহ্ন করেছে। পরিবেশ ও অবকাঠামোর অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আজ সেখানকার স্বজনহারাদের আর্তনাদে পরিবেশ ভীষণভাবে ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে।
গত ১৩ আগস্ট ওয়ানেড জেলা প্রশাসন জানিয়েছে যে, ভয়ঙ্কর এই ভূমিধসে চার শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। ১৩০ জনেরও বেশি লোক তখনও নিখোঁজ ছিলেন। ১৭টি পরিবারের অধিকাংশ সদস্য রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় ভূমিধসে মাটি চাপায় মারা গিয়েছেন। এই মর্মবেদনাদায়ক ঘটানায় হতাহতদের বেশিরভাগই চা ও এলাচ বাগানের দরিদ্র অংশের শ্রমিক। ওয়ানাডের ভয়াবহ ভূমিধসে বহু মানুষের প্রাণহানির জন্য ত্রিপুরা বিধানসভা গভীরভাবে শোক ব্যক্ত করে যাঁরা প্রিয়জন হারিয়েছেন তাঁদের পরিবারের প্রতি এই সভা আন্তরিকভাবে সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।