আগরতলা,২৭ আগস্ট,২০২৪ রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মকের যুগ্ম সচিব (ফরেনার্স ডিভিশন) বি সি যোশীর নেতত্বে একটি আন্তঃমণালয় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল (আইএমসিটি) আগামীকাল রাজ্যে আসছে৷ এই দলে কৃষি, ব্যয় মণালয় (অর্থ মণালয়), জলশক্তি (জলসম্পদ মক), গ্রামোন্নয়ন মক এবং সড়ক পরিবহণ ও হাইওয়ে মকের আধিকারিকগণ থাকবেন৷ আজ সন্ধ্যায় আগরতলা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব দপ্তরের সচিব বিজেশ পাণ্ডে এই সংবাদ জানান৷ সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানান, রাজ্য সরকারের অনুরোধে কেন্দ্রীয় সরকার বন্যা দুর্গত এলাকা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে এই প্রতিনিধিদলটি রাজ্যে পাঠাচ্ছে৷
রাজস্ব দপ্তরের সচিব বিজেশ পাণ্ডে সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, এখন পর্যন্ত সমগ্র রাজ্যে ৭২ হাজারেরও বেশি দুর্গত মানুষ ৪৯২টি শিবিরে রয়েছেন৷ এরমধ্যে শুধুমাত্র গোমতী জেলাতেই রয়েছেন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ৷ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই শিবিরগুলিতে খাবার, পানীয়জল, চিকিৎসা ব্যবস্থা সহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী বন্টন করা হচ্ছে৷ করবুক এবং অমরপুর মহকুমায় ৩০০-র বেশি দুর্গত মানুষের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে৷ তিনি জানান, গোমতী এবং সিপাহীজলা জেলায় স্টেট ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্সের ৬টি দল এবং ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্সের ৫টি দল ত্রাণের কাজে নিয়োজিত রয়েছে৷ এছাড়াও সিভিল ডিফেন্স এবং আপদা মিত্রের ৫০০-র মতো স্বেচ্ছাসেবক ত্রাণ বন্টনের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন৷ তিনি জানান, এই বন্যায় আজ পর্যন্ত ৩১ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ২ জন আহত হয়েছেন৷ এছাড়াও ১ জন নিখোঁজ রয়েছেন৷
সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব দপ্তরের সচিব শ্রী পাণ্ডে জানান, উচ্চতর পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে৷ আজ সন্ধ্যায় মুখ্যমী প্রফেসর ডা. মানিক সাহা রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এক পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন৷
বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, পিসিসিএফ, ত্রাণ, পুনর্বাসন ও বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দপ্তরের সচিব সহ সমস্ত দপ্তরের সচিবগণ এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের অধিকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন৷ যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে বৈঠকে মূলত আলোচনা হয়েছে সেগুলির মধ্যে রয়েছে সমস্ত বন্যা দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয়জল সরবরাহ, স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যবিধি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি চালু করা, বিদ্যৎ সংযোগ ব্যবস্থা পুন:স্থাপন করা, সমস্ত দপ্তরগুলির সুুসংহত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পিআরটিসি, পর্ষদের পরীক্ষার প্রয়োজনীয় নথিপত্র, এসসি ও এসটি ওয়েলফেয়ার সার্টিফিকেটের মতো বিভিন্ন নথির ডুপ্লিকেট সার্টিফিকেট প্রদান, বন্যায় মৃত / আহতদের পরিবারবর্গকে অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ সম্বলিত এক্সগ্রেসিয়া প্রদান, ধংস হয়ে যাওয়া বাড়িগুলির বর্তমান অবস্থা পরীক্ষা করে অবিলম্বে ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদান করা৷ এছাড়াও ত্রাণ, পুনর্বাসন ও বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দপ্তরের সচিব আজ সমস্ত জেলাশাসক ও সমাহর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন৷
সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব দপ্তরের সচিব শ্রী পাণ্ডে জানান, আজও সোনামুড়ায় গোমতী নদীর জল বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে৷ তিনি জানান, ৩,২৭৩টি পানীয়জল প্রকল্পের মধ্যে ৯৭৭টি প্রকল্প পুরোপুরিভাবে চালু করা হয়েছে৷ অবশিষ্ট প্রকল্পগুলি দ্রত মেরামত করা হচ্ছে৷ যেখানে যেখানে প্রয়োজন সেখানে ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে নিরাপদ পানীয়জল সরবরাহ করার জন্য জেলাশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ তিনি জানান, এই সময়ে স্বাস্থ্য পরিষেবার দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে৷ চিকিৎসকরা ১,২০৭ বার বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে গিয়ে ৩৫,৯৯৩ জনের চিকিৎসা করেছেন৷ ১,৭৯৯টি স্বাস্থ্য শিবিরে ৪২,৮০০ জনের চিকিৎসা করা হয়েছে৷ এছাড়াও জলবাহিত সহ বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য দপ্তর ২ হাজার ব্যাগ ব্লিচিং পাউডার, ২ লক্ষ ওআরএস প্যাকেট, প্রচুর পরিমাণে হ্যালোজেন ট্যাবলেট, জিংক ট্যাবলেট এবং অন্য ওষুধ কিনবে৷ রাজস্ব দপ্তরের সচিব জানান, বিভিন্ন সংগঠনের ত্রাণ সামগ্রী সংগ্রহ এবং দুর্গতদের মধ্যে তা সরবরাহের লক্ষ্যে পর্যটন দপ্তরের অধিকর্তা প্রশান্ত বাদল নেগির নেতত্বে বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ এই কমিটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করবে৷ তিনি জানান, ত্রাণ, পুনর্বাসন ও বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দপ্তর ৮ জেলার জন্য ৬৯ কোটি টাকা এবং কৃষি ও বিদ্যৎ দপ্তরের জন্য ৫ কোটি টাকা করে অনুমোদন দিয়েছে৷
সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও পূর্ত ও স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে এবং বিদ্যৎ দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং বন্যায় নিজ নিজ দপ্তরের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে এগুলি অবিলম্বে মেরামত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন৷