BRAKING NEWS

নয়া ফৌজদারি আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয়েছে : রাষ্ট্রপতি

নয়াদিল্লি, ১৪ আগস্ট : নয়া ফৌজদারি আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয়েছে। ৭৮তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক-সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু জাতির উদ্দেশে ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের এভাবেই স্মরণ করেছেন। তিনি গভীর দুঃখের সাথে বলেন, ১৪ আগস্ট আমাদের দেশ দেশভাগের বিভীষিকাময় স্মৃতি স্মরণ করছে। এদিন রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশ্যে বলেন, দেশের ৭৮তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য গোটা দেশের প্রস্তুতি দেখে আমি আনন্দিত। স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লাই হোক, রাজ্যগুলোর রাজধানীতেই হোক বা আমাদের আশেপাশের নানা জায়গাতেই হোক, সব ক্ষেত্রেই ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকার উত্তোলনের সাক্ষী হওয়া সবসময়ই আমাদের হৃদয়কে রোমাঞ্চিত করে। এটা হচ্ছে ১৪০ কোটির বেশি ভারতবাসীর সঙ্গে মিলে আমাদের মহান দেশের অংশ হওয়ার আনন্দের অভিব্যক্তি। যেভাবে আমরা আমাদের পরিবারের সঙ্গে বিভিন্ন উৎসব উদযাপন করে থাকি, তেমনি স্বাধীনতা দিবস ও সাধারণতন্ত্র দিবসের উদযাপনে আমরা আমাদের দেশবাসীদের নিয়ে গঠিত পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করি।তিনি বলেন, ১৫ আগস্টে দেশের সর্বত্র এবং বিদেশেও ভারতীয়রা পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়, দেশাত্মবোধক গান গায় এবং মিষ্টি বিতরণ করে। ছোট শিশুরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। আমরা যখন শিশুদেরকে আমাদের মহান দেশ এবং ভারতীয় হওয়ার গর্ব নিয়ে কথা বলতে শুনি, তখন আমরা তাদের বিস্ময়ের মধ্যে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অনুভূতির প্রতিধ্বনি শুনতে পাই। আমরা অনুভব করি যে, আমরা এমন এক ঐতিহ্যের অংশ, যা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বপ্ন এবং সেইসব ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে একত্রিত করে, যে প্রজন্ম আগামী দিনগুলিতে আমাদের দেশকে তার পূর্ণ গৌরব ফিরে পেতে দেখবে।

তাঁর কথায়, ইতিহাসের এই ধারাবাহিকতায় একটি যোগসূত্র হওয়ার উপলব্ধি আমাদের মধ্যে নম্রতার সঞ্চার করে। এই উপলব্ধি আমাদেরকে সেই দিনগুলির কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন আমাদের দেশ বিদেশি শাসনের অধীনে ছিল। দেশপ্রেম ও বীরত্বে অনুপ্রাণিত দেশপ্রেমিকরা অনেক ঝুঁকি নিয়েছিলেন এবং সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন। আমরা তাঁদের পবিত্র স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তাঁদের অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলা জড়ত্ব থেকে ভারতের আত্মা জেগে উঠেছিল। আমাদের অন্তর্লীন প্রবাহে সদা-বিদ্যমান বিভিন্ন ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে নতুন অভিব্যক্তি প্রদান করেছেন। আমাদের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী ধ্রুবতারার মতো স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন ঐতিহ্য এবং তাদের বৈচিত্র্যময় প্রকাশকে একত্রিত করেছিলেন।তাঁর বক্তব্য, একইসঙ্গে সর্দার প্যাটেল, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু এবং বাবাসাহেব আম্বেদকরসহ ভগৎ সিং ও চন্দ্রশেখর আজাদের মতো অনেক মহান জননায়কও সক্রিয় ছিলেন। এটি একটি দেশব্যাপী আন্দোলন ছিল, যেখানে সমস্ত সম্প্রদায় অংশগ্রহণ করেছিল। আদিবাসীদের মধ্যে তিলকা মাঝি, বিরসা মুন্ডা, লক্ষ্মণ নায়েক এবং ফুলো-ঝানোর মতো আরও অনেকে ছিলেন, যাদের আত্মত্যাগ এখন প্রশংসিত হচ্ছে। আমরা ভগবান বিরসা মুন্ডার জন্মবার্ষিকী জাতীয় গৌরব দিবস হিসাবে উদযাপন করতে শুরু করেছি। আগামী বছর তাঁর ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় নবজাগরণের ক্ষেত্রে তাঁর অবদানকে আরও গভীরভাবে সম্মান জানানোর একটি উপলক্ষ হবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, আজ ১৪ আগস্ট আমাদের দেশ দেশভাগের বিভীষিকাময় স্মৃতি স্মরণ করছে। এই দিনটি দেশভাগের ভয়াবহতাকে স্মরণ করার দিন। যখন আমাদের মহান দেশ বিভক্ত হয়েছিল, তখন লক্ষ লক্ষ মানুষ পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের একদিন আগে, আমরা সেই অভূতপূর্ব মানব-ট্র্যাজেডির কথা স্মরণ করি এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া সেই পরিবারগুলির সাথে সংহতি প্রকাশ করি।তিনি বলেন, আমরা আমাদের সংবিধানের ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপন করছি। আমাদের সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশের যাত্রাপথে গুরুতর নানা বাধা এসে দাঁড়িয়েছিল। ন্যায়বিচার, সমতা, স্বাধীনতা এবং ভ্রাতৃত্বের সাংবিধানিক আদর্শের উপর দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আমরা বিশ্ব মঞ্চে ভারত যাতে তার ন্যায্য স্থান ফিরে পায়, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এখন এগিয়ে চলেছি।

তাঁর বক্তব্য, এ বছর আমাদের দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মোট ভোটার সংখ্যা ছিল প্রায় ৯৭ কোটি, যা একটি ঐতিহাসিক রেকর্ড। বিশ্ববাসী ইতিহাসের বৃহত্তম নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ করেছে। এই ধরনের বিশাল অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ও ত্রুটিমুক্তভাবে পরিচালনার জন্য ভারতের নির্বাচন কমিশন অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য। তীব্র গরমের মধ্যেও যাঁরা ভোটারদের সাহায্য করেছেন, সেই সমস্ত কর্মী ও নিরাপত্তা কর্মীদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এত বিপুল সংখ্যক মানুষের দ্বারা ভোটাধিকার প্রয়োগ প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রের মতাদর্শের প্রতি দৃঢ় সমর্থন। ভারতের সফল নির্বাচন সারা বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতায়িত করে।তিনি প্রত্যয়ের সুরে বলেন, ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৮% অর্জন করে, ভারত দ্রুততম ক্রমবর্ধমান বৃহৎ অর্থনীতিগুলোর মধ্যে একটি হয়েছে। এর ফলে শুধুমাত্র দেশবাসীর হাতে আরও বেশি অর্থ আসেনি, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যাও ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। যাঁরা এখনও দারিদ্র্যে ভুগছেন, তাঁদের সাহায্য করার পাশাপাশি তাঁদেরকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। যেমন কোভিড-নাইন্টিনের প্রাথমিক পর্যায়ে চালু হওয়া পিএম গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার আওতায় প্রায় ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হচ্ছে| যা থেকে এটা সুনিশ্চিত করা হচ্ছে যে, যারা সম্প্রতি দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছেন, তাদেরকে যাতে দারিদ্র্যের মধ্যে ফিরে যাওয়া থেকে বিরত রাখা যায়।তাঁর মতে, এটা আমাদের সকলের জন্য গর্বের বিষয় যে, ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে এবং আমরা শীঘ্রই বিশ্বের শীর্ষ তিনটি অর্থনীতির মধ্যে পরিণত হতে চলেছি। কৃষক ও শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, নীতিনির্ধারক ও উদ্যোক্তাদের দূরদর্শী চিন্তাভাবনা এবং দেশের দূরদর্শী নেতৃত্বের শক্তিতেই এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে।রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের অন্নদাতা কৃষকরা প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কৃষি উৎপাদন সুনিশ্চিত করেছেন। এইভাবে তাঁরা ভারতকে কৃষিতে স্বনির্ভর করে তুলতে এবং দেশবাসীর খাদ্য সরবরাহে অমূল্য অবদান রেখেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পরিকাঠামো ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। চিন্তাশীল পরিকল্পনা এবং কার্যকর বাস্তবায়ন সড়ক ও মহাসড়ক, রেল ও বন্দরগুলির একটি নেটওয়ার্ক স্থাপনে সহায়তা করেছে। ভবিষ্যতের প্রযুক্তির বিস্ময়কর সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে, সরকার সেমি-কন্ডাক্টর এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো অনেক ক্ষেত্রের প্রচারের পাশাপাশি স্টার্ট-আপগুলির জন্য একটি আদর্শ বাস্তুতন্ত্র তৈরির উপর বিশেষ জোর দিয়েছে, যা তাদের বিকাশকে ত্বরান্বিত করবে। এর ফলে ভারতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ বেড়েছে। স্বচ্ছতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যাঙ্কিং ও আর্থিক ক্ষেত্রের দক্ষতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সমস্ত পরিবর্তনগুলি পরবর্তী পর্যায়ের অর্থনৈতিক সংস্কার এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মঞ্চ তৈরি করেছে, যেখান থেকে ভারত উন্নত দেশগুলির তালিকায় যোগ দেবে।

তিনি বলেন, দ্রুতগতির ন্যায়বিচার-ভিত্তিক অগ্রগতির শক্তিতে বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ভারতের মর্যাদা বেড়েছে। জি-টুয়েন্টির সভাপতিত্ব সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর, গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হিসাবে ভারত তার ভূমিকাকে সুসংহত করেছে। ভারত তার প্রভাবশালী অবস্থানকে বিশ্ব শান্তি ও সমৃদ্ধির সম্প্রসারণে ব্যবহার করতে চায়।রাষ্ট্রপতির কথায়, সংবিধানের স্থপতি ডঃ বি আর আম্বেদকরের কথা আমাদের সবসময় মনে রাখা উচিত। তিনি ঠিকই বলেছিলেন, এবং আমি তাকে উদ্ধৃত করছি, “আমাদের অবশ্যই আমাদের রাজনৈতিক গণতন্ত্রকে একটি সামাজিক গণতন্ত্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সামাজিক গণতন্ত্রের ভিত্তি না থাকলে রাজনৈতিক গণতন্ত্র টিকে থাকতে পারে না|”তাঁর মতে, রাজনৈতিক গণতন্ত্রের অবিচ্ছিন্ন অগ্রগতি থেকে সামাজিক গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার অগ্রগতি সুনিশ্চিত হয়। আমাদের সামাজিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তির মনোভাব দৃশ্যমান। আমাদের বৈচিত্র্য এবং বহুত্বের সঙ্গে, আমরা একটি জাতি হিসাবে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে এগিয়ে চলেছি। অন্তর্ভুক্তির মাধ্যম হিসেবে ইতিবাচক পদক্ষেপগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, ভারতের মতো বিশাল দেশে, তথাকথিত সামাজিক বিভিন্ন স্তরের ভিত্তিতে বিভেদকে উৎসাহিত করে, এমন প্রবণতাগুলিকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে।

তাঁর দাবি, সামাজিক ন্যায়বিচার সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। সরকার তফশিলি জাতি, তফসিলি জনজাতি এবং সমাজের অন্যান্য প্রান্তিক অংশের কল্যাণে বেশ কয়েকটি অভূতপূর্ব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রধানমন্ত্রী সামাজিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান ভিত্তিক জনকল্যাণ, অর্থাৎ পিএম-সুরজ-এর লক্ষ্য প্রান্তিক অংশের জনগণকে সরাসরি আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। প্রধানমন্ত্রী জনজাতি আদিবাসী ন্যায় মহা-অভিযান অর্থাৎ পিএম-জনমন একটি গণ অভিযানের রূপ নিয়েছে। এর আওতায় বিশেষত পিছিয়ে পড়া জনপজাতি গোষ্ঠীগুলির অর্থাৎ পিভিটিজি’র আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতির জন্য সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ন্যাশনাল অ্যাকশন ফর মেকানাইজড স্যানিটেশন ইকো-সিস্টেম অর্থাৎ নমস্তে প্রকল্পের আওতায় কোনও স্যানিটেশন কর্মীকে কোনো সরঞ্জাম ছাড়া খালি হাতে যাতে নর্দমা এবং সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করার ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে না হয়, তা সুনিশ্চিত করা হবে। ‘ন্যায়বিচার’ শব্দের ব্যাপক অর্থের মধ্যে অনেক ধরনের সামাজিক দিক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে| এর মধ্যে দুটির ওপর আমি বিশেষ জোর দিতে চাই। এই মাত্রাগুলি হল, পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে ন্যায়পূর্ণ সমানতা এবং জলবায়ু ন্যায়বিচার।তাঁর মতে, আমাদের সমাজে নারীদের কেবল সমতার মর্যাদাই দেওয়া হয় না, সমতার ঊর্ধ্বেও রাখা হয়। যদিও তাদেরকে পরম্পরাগত বিভিন্ন সংস্কারেরও শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু, আমি এটা জেনে আনন্দিত যে, সরকার নারী-কল্যাণ ও নারীর ক্ষমতায়নে সমান গুরুত্ব দিয়েছে। গত এক দশকে এই উদ্দেশ্যে বাজেটের বরাদ্দ তিনগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্রমশক্তিতে তাদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। এই প্রসঙ্গে, জন্মের সময় কন্যা সন্তানের অনুপাতের উল্লেখযোগ্য উন্নতিটিকে সবচেয়ে উৎসাহব্যঞ্জক উন্নয়ন বলা যেতে পারে। মহিলাদেরকে মূল উদ্দেশ্য করে সরকার অনেক বিশেষ প্রকল্পও বাস্তবায়ন করেছে। ‘নারী শক্তি বন্দনা আইনে’র লক্ষ্য হচ্ছে, মহিলাদের প্রকৃত ক্ষমতায়ন সুনিশ্চিত করা।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এখন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য তাদের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা আরও বেশি প্রতিকূল হয়ে পড়েছে। তবুও আমরা সেই দিকে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি অগ্রগতি অর্জন করেছি। বিশ্ব উষ্ণায়নের সবচেয়ে গুরুতর কুপ্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য মানব সম্প্রদায়ের সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পেরে ভারত গর্বিত। আমি আপনাদের সকলকে নিজেদের জীবনযাত্রায় ছোট কিন্তু কার্যকর পরিবর্তন আনতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজের উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে অনুরোধ করছি।সাথে তিনি যোগ করেন, ন্যায়বিচারের প্রসঙ্গে আমি আরও উল্লেখ করতে চাই যে, চলতি বছরের জুলাই থেকে ভারতীয় দণ্ডবিধি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা ঔপনিবেশিক যুগের আরেকটি চিহ্ন সরিয়ে ফেলেছি। নতুন আইনের উদ্দেশ্য হল, কেবল শাস্তির পরিবর্তে অপরাধের শিকারদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। আমি এই পরিবর্তনকে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে দেখছি।তিনি বলেন, আমাদের স্বাধীনতার শতবর্ষের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আর যে এক শতাব্দীর এক-চতুর্থাংশ সময় রয়েছে, যাকে বলা হচ্ছে ‘অমৃতকাল’, এই সময়টাকে আজকের যুবসমাজই রূপ দিতে চলেছে। তাঁদের শক্তি ও উৎসাহের জোরেই আমাদের দেশ নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে। যুবসমাজের মনের বিকাশ এবং ঐতিহ্য ও সমসাময়িক জ্ঞানের সর্বোত্তম মাত্রা আত্মস্থ করে এমন একটি নতুন মানসিকতা তৈরি করা আমাদের অগ্রাধিকার। এই প্রেক্ষিতে ২০২০ সাল থেকে বাস্তবায়িত জাতীয় শিক্ষানীতির ফল পাওয়া যাচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, তরুণ প্রতিভাদের কাজে লাগানোর জন্য সরকার দক্ষতা, কর্মসংস্থান এবং অন্যান্য সুযোগের সুবিধার্থে উদ্যোগ নিয়েছে। কর্মসংস্থান ও দক্ষতার জন্য প্রধানমন্ত্রীর পাঁচটি প্রকল্প আগামী পাঁচ বছরে ৪ কোটি ১০ লক্ষ যুবক-যুবতীকে উপকৃত করবে। সরকারের এক নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে এক কোটি যুবক-যুবতী শীর্ষস্থানীয় সংস্থাগুলিতে ইন্টার্নশিপ করবেন। এই সমস্ত পদক্ষেপগুলি বিকশিত ভারত গঠনে মৌলিক অবদান রাখবে।

তাঁর কথায়, ভারতে আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি মানবতাপূর্ণ অগ্রগতির মাধ্যম হিসাবে দেখি। উদাহরণস্বরূপ, ডিজিটাল অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রে আমাদের অর্জনগুলি অন্যান্য দেশে টেমপ্লেট বা মানদণ্ড হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারত মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে। আপনাদের সকলের সঙ্গে আমি আগামী বছর ‘গগনযান মিশন”-এর সূচনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। এই মিশনের আওতায় ভারতীয় মহাকাশ দলকে ভারতের প্রথম মানব মহাকাশ যাত্রায় মহাকাশে নিয়ে যাওয়া হবে।তাঁর দাবি, ক্রীড়াক্ষেত্রও এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে আমাদের দেশ গত দশকে অনেক উন্নতি করেছে। সরকার ক্রীড়া পরিকাঠামোর উন্নয়নে যথাযথ অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং ফলাফল দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি সমাপ্ত প্যারিস অলিম্পিক গেমসে ভারতীয় দল দুর্দান্ত প্রচেষ্টা চালিয়েছে। আমি খেলোয়াড়দের নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রমের প্রশংসা করি। এই খেলোয়াড়রা তরুণদের অনুপ্রাণিত করেছেন। ক্রিকেটে, ভারত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে, যা বিপুল সংখ্যক ক্রিকেট-প্রেমীদের জন্য আনন্দ নিয়ে এসেছে। দাবায় অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী তরুণ খেলোয়াড়রা দেশকে গর্বিত করেছেন। এটিকে দাবায় ভারতীয় যুগের সূচনা বলে মনে করা হচ্ছে। ব্যাডমিন্টন, টেনিস এবং অন্যান্য খেলায় আমাদের তরুণ খেলোয়াড়রা বিশ্বমঞ্চে নিজেদের পরিচয় তৈরি করছেন। তাঁর সাফল্য পরবর্তী প্রজন্মকেও অনুপ্রাণিত করছে।তিনি বলেন, স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে গোটা দেশ। এই আনন্দময় উপলক্ষ্যে আমি আরও একবার আপনাদের সকলকে অভিনন্দন জানাই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের স্বাধীনতার রক্ষা করা সশস্ত্র বাহিনীর সাহসী জওয়ানদের আমি বিশেষভাবে অভিনন্দন জানাই। সারা দেশে নজরদারি বজায় রাখা পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীদের আমি অভিনন্দন জানাই। আমি বিচার বিভাগ এবং সিভিল সার্ভিসের সদস্যদের পাশাপাশি বিদেশে নিযুক্ত আমাদের দূতাবাসের কর্মীদের শুভেচ্ছা জানাই। আমাদের প্রবাসীদেরও আমার শুভেচ্ছা! আপনারা সবাই আমাদের পরিবারের অংশ, আপনারা আপনাদের সাফল্যের মধ্য দিয়ে আমাদেরকে গর্বিত করেছেন। আপনারা সবাই গর্বের সঙ্গে বিদেশের ভূমিতে ভারতের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। তিনি সবাইকে স্বাধীনতা দিবসের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *