দুর্গাপুর, ২৯ জুলাই (হি.স) : সকাল থেকে রাত পঁচা দুর্গন্ধ। আর তার জেরে অতিষ্ট আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা। অ্যালকোহল তৈরির কারখানার দুর্গন্ধে নাজেহাল স্কুল পড়ুয়া থেকে সাধারন মানুষ। লাটে উঠেছে দূষন নিয়ন্ত্রন। অভিযোগ জানিয়ে জুতোর শুকতলা খুইয়েছে আক্রান্ত বাসিন্দারা। ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙতেই রাস্তায় নামল ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। সোমবার পানাগড় মোরগ্রাম রাজ্য সড়ক অবরোধ করল স্কুল পড়ুয়া ও বাসিন্দারা। ঘটনাকে ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়াল কাঁকসার মিনিবাজারে। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামল বিশাল পুলিশবাহিনী। প্রায় তিন ঘন্টা পর প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ ওঠে। উল্লেখ্য, পানাগড় শিল্পতালুকে আরও দুটি অ্যালকোহল তৈরির কারখানা হয়েছে। গত কয়েক মাস যাবৎ উৎপাদন শুরু করেছে। জানা গেছে, অ্যলোকগ্রীন ডিস্টিলার্স নামে ওই কারখানাটিতে ৬৬০ কিলোলিটার অ্যালকোহল উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, মূলত চালের খুদ থেকে ইথানল তৈরি হচ্ছে। ওই ইথানাল রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থায় যোগান হচ্ছে। আর তাতেই দুর্গন্ধে নাজেহাল আশপাশের ঝিনুকগড়ে, কাঁকসার মনোজপল্লী, ২ নং ও ৩ নং কলোনির বাসিন্দারা। গত কয়েকমাস ধরে বাসিন্দারা পচা দুর্গন্ধের বিষয়টি প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে। কয়েক দিন আগে পরিদর্শনে যাওয়া প্রশাসনিক আধিকারিকদের কারখানা এলাকায় ঘেরাও করে বিক্ষোোভ দেখায়। তাতেও সুরাহা না হওয়ায় সোমবার পানাগড়- মোরগ্রাম রাজ্য সড়কের ওপর মিনিবাজার মোড়ে অবরোধ করে বাসিন্দারা।স্কুল পড়ুয়ারা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তার ওপর বসে পড়ে। পড়ুয়াদের করুন অর্তি ‘বিশুদ্ধ বাতাসে সুস্থভাবে বাঁচতে চাই।’ অবরোধকারী মহিলারা বলেন,” যখন তখন দুর্গন্ধ আসে। দুর্গন্ধে মাথা ঘুরোয়। বমি হয় বাচ্চা দের। ঘরে বাইরে টেকা দায় হয়ে পড়ে। তাই এই দুর্গন্ধ বন্ধ করা হোক। বিশুদ্ধ বায়ুতে বাঁচতে চাই। অনেক বয়স্ক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে।” কারখানা লাগোয়ায় ঝিনুকগড়ে গ্রামের অঙ্গনবাড়ি কর্মী সুমি মাড্ডি বলেন,” ভোরের দিকে দুর্গন্ধ আসে। দুপুর পর্যন্ত অতিষ্ট হয়ে যায় ছেলে মেয়েরা। দমবন্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়। আবার সন্ধ্যার পর বাড়িতে ছেলে মেয়েরা থাকতে পারে না। পড়াশোনা করতে পারে না।” গ্রামবাসীদের অভিযোগ,” কারখানাটি চালুর পর থেকে আমাদের স্বাভাবিক পরিবেশ বিপন্ন।” স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন,” দুর্গন্ধ জনমানসে প্রভাব পড়ছে। এলাকার জলে প্রভাব পড়ছে। স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। জীব বৈচিত্র প্রভাব পড়ছে। এধরনের কারখানা জনবসতি এলাকায় করা উচিত হয়নি।” বিজেপি বিধায়ক লক্ষন ঘড়ুই বলেন,” বাম জামানায় পশ্চিমি দেশ গুলির বাতিল করা স্পঞ্জ আয়রন কারখানা করে রাজ্যবাসীকে শিল্পায়নের স্বপ্ন দেখিয়েছিল। তৃণমূলের জামানায় দূষণ সৃষ্টিকারী অ্যালকোহল তৈরির কারখানা গড়ে সাধারন মানুষকে তার থেকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। দূষণে নিয়ন্ত্রন পর্ষদ উদাসীন। তার মাশুল দিতে হচ্ছে সাধারন মানুষকে।” তৃণমূল কংগ্রেসের কাঁকসা পঞ্চাায়েত সমিতি প্রক্তন কর্মাধ্যক্ষ (বিদ্যুৎ ও শিল্প) অজয় মজুমদার বলেন,” এই শিল্প মানুষ চায়নি। তাই আজ মানুষ পথে নেমেছে। এলাকাবাসীর দমবন্ধ হয়ে আসছে। তাদের ছেলে মেয়েরা কোন কাজ পায়নি এসব শিল্পকারখানায়। বাইরের লোক কাজ পাচ্ছে। আর দূষণের শিকার হচ্ছে কারখানার আশপাশের বাসিন্দারা। গ্রামবাসীদের অভিযোগ ন্যায়সঙ্গত। এই দুর্গন্ধ বন্ধ হোক।” যদিও এবিষয়ে দুর্গাপুর দূষণ নিয়ন্ত্রন পর্ষদের আধিকারিকরা কোন মন্তব্য করতে চায়নি। এদিকে অবরোধের জেরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ওই রাজ্য সড়কটি। ঘন্টা তিনেক পর কাঁকসা ব্লক প্রশাসন ও পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেয় বাসিন্দারা।