BRAKING NEWS

এইচআইভি/এইডস-র মারণ থাবার বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সংবাদ মাধ্যমকে নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি

আগরতলা, ৫ জুলাই : এইচআইভি/এইডস-র মারণ থাবায় আজ নবীণ প্রজন্মকে কাবু হয়ে যাচ্ছে। ফলে এই মারণব্যাধির বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি অতি আবশ্যিক হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যমের গুরুত্ব অপরিসীম, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তাই, আজ আগরতলায় সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি আয়োজন হয়েছে। ত্রিপুরা এইডস কন্ট্রোল সোসাইটি, ত্রিপুরা জার্নালিস্ট ইউনিয়ন এবং ত্রিপুরা ওয়েব মিডিয়া ফোরামের যৌথ উদ্যোগে সমস্বরে আওয়াজ উঠেছে, ওই মারণব্যাধিকে প্রতিহত করতেই হবে। 

এদিন এই সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা: সঞ্জিব দেববর্মা বলেন, শিরাপথে মাদক গ্রহণ এইচআইভি/এইডস সংক্রমনের অন্যতম কারণ। ফলে, এই রোগ থেকে রক্ষা পেতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এই রোগ দেশের আগামী প্রজন্মকে একপ্রকার পঙ্গু করে দিতে পারে। এইডস রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধে তিনি সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত সকলকে এইডস নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা গড়ে তুলতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

তাঁর কথায়, এইচআইভি/এইডস সংক্রামক ব্যাধী নয়। এটি একটি ভাইরাস। সুস্থ দেহে ওই সংক্রমণে আক্রান্তের রক্ত সঞ্চালনে, সংক্রমিতের ব্যবহৃত সূঁচ কিংবা সিরিঞ্জ ব্যবহারে, আক্রান্তের অঙ্গ প্রতিস্থাপনে এবং সংক্রমিতের সাথে অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্কের ফলে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া, ওই সংক্রমণে আক্রান্ত মা-র দেহ  থেকে সদ্যোজাত সন্তানের দেহেও ওই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। তাই, এই সমস্ত ঝুঁকি এড়িয়ে নিজেকে সুস্থ এবং সুরক্ষিত রাখতে জনগণকে সচেতন থাকতে হবে, দৃঢ়তার সাথে বলেন তিনি। 

এদিন স্বাস্থ্য অধিকর্তা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, শিরাপথে মাদক গ্রহণে বহু মানুষ এইচআইভি/এইডস রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই ব্যাধি মানুষের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। ফলে যারা এই রোগে আক্রান্ত হন তাদের পরিণতি ভয়াবহ হয়। তাই এই রোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে সচেতন থাকতে হবে। সাথে তিনি যোগ করেন, এইচআইভি/এইডস সংক্রমণ থেকে শিশুদের রক্ষা করার তাগিদে মায়েদের বিশেষভাবে সচেতন করতে হবে। 

পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধক দফতরের অধিকর্তা ডা: অঞ্জন দাসও বলেন, রাজ্যে এইচআইভি/এইডস সংক্রমণ রোধে জনগণকে সচেতন হতে হবে। তাঁর বক্তব্য, ওই সংক্রমন রোধে স্বাস্থ্য দপ্তর এবং এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে। স্বাস্থ্য দপ্তরের অধীনে সংক্রমন রোধে ইতিমধ্যে একাধিক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তিনি এই সংক্রমনের অন্যতম কারণ হিসেবে শিরাপথে মাদক গ্রহণকেই দায়ী করেছেন। তাঁর উদ্বেগ, সিরিঞ্জ দিয়ে ড্রাগস গ্রহণের মাধ্যমে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি জানিয়েছেন, এই রোগের লক্ষণগুলি হল, জ্বর, ফ্যারিঞ্জাইটিস, ফুসকুড়ি, মায়ালজিয়া, অস্বস্তি, মুখ এবং খাদ্যনালীতে ঘা, মাথাব্যথা, বমি ভাব এবং বমি, ক্লান্তি, বর্ধিত লিভার, ওজন বৃদ্ধি, থ্রাশ, রাতের ঘাম এবং ডায়রিয়া। তিনি বলেন, এইচআইভি/এইডস সংক্রমণের বিষয়ে জানতে হলে ১০৯৭ টোল ফ্রি নম্বর দেওয়া আছে। জনগণ সেখানে যোগাযোগ করতে পারেন। 

এদিন তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা বিম্বিসার ভট্টাচার্য বলেন, রাজ্যে সচেতনতার অভাবে দিনে দিনেই এইচআইভি/এইডস সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারা দেশে এই সংক্রমণের লিঙ্গ বৈষম্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে। তাই এই মারণব্যাধি মোকাবিলায় আদর্শ টিকাকরণ হিসেবে শিক্ষাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, এইচআইভি/এইডস সংক্রমণ প্রতিরোধে সংবাদ মাধ্যমের বিকল্প নেই। 

এদিন এই সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা জার্নালিস্ট ইউনিয়নের সভাপতি প্রণব সরকার, ত্রিপুরা ওয়েব মিডিয়া ফোরামের সম্পাদক অভিষেক দে, এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির প্রজেক্ট ডিরেক্টর ডা: সমর্পিতা দত্ত সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিকগণ। 

এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন  জার্নালিস্ট ইউনিয়নের সভাপতি প্রণব সরকার, এজিএমসি ডেপুটি সুপারিনটেন্ড ডা. কণক চৌধুরী, ত্রিপুরা রাজ্য এইডস নিয়ন্ত্রণ সোসাইটির যুগ্ম অধিকর্তা শুভ্রজিৎ ভট্টাচার্য, ত্রিপুরা টাইমস এর এক্সিকিউটিভ এডিটর মানস পাল, ত্রিপুরা ওয়েব মিডিয়া ফোরামের সচিব অভিষেক দে প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে রাজ্যের শিল্পীদের নিয়ে তৈরী বিরাট রায় চৌধুরীর এইডসের উপর এক সংবেদনশীল তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে এইডসের বিরুদ্ধে লড়াই করে বর্তমানে স্বাধীন ও স্বনির্ভর ভাবে জীবনযাপন করা পপি সিনহা ও বিরাট রায় চৌধুরীকে সম্বর্ধনা জানানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *