দশ দিনের মধ্যে হারাঙ্গাজাওয়ের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের ক্ষতিপূরণ প্রদান না করলে মহাসড়কের কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি

হাফলং (অসম), ১৩ জুন (হি.স.) : শিলচর-সৌরাষ্ট্র ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরের নির্মাণকাজের জন্য ডিমা হাসাও জেলার হারাঙ্গাজাও এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা আগামী দশ দিনের মধ্যে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ মিটিয়ে না দিলে জাতীয় সড়কে অবরোধ গড়ে তুলে মহাসড়কের কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন হারাঙ্গাজাও এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলির বাসিন্দারা।

আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে শিলচর-সৌরাষ্ট্র ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে বলে মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা ঘোষণা করলেও এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সমস্যায় মহাসড়কের কাজে বারবার বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে, ডিমা হাসাও জেলার মধ্য দিয়ে চলমান মহাসড়কের কাজ দীর্ঘদিন থেকে ক্ষতিপূরণের গেরোয় আটকে রয়েছে।

কিছুদিন পর-পরই ক্ষতিপূরণ না পেয়ে গ্রামের বাসিন্দারা জাতীয় সড়ক অবরোধ সহ কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি প্রদান করে কাজে বাধার সৃষ্টি করেন। তার পরও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ওই সব ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের ক্ষতিপূরণের টাকা মিটিয়ে দিচ্ছে না নানা টাল বাহানা করে।

আজ বৃহস্পতিবার হারাঙ্গাজাও এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীরা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের হাফলং কার্যালয়ে প্রকল্প সঞ্চালকের সাথে সাক্ষাৎ করতে আসেন। কিন্তু প্রকল্প সঞ্চালককে না পেয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, ক্ষতিপূরণের ইস্যু নিয়ে তাঁরা যখনই জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের হাফলং কার্যালয়ে আসেন, তখনই প্রকল্প সঞ্চালকের সঙ্গে তাঁদের কোনও না-কোনও কারণে সাক্ষাৎ হয় না। তিনি কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। এই অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসীরা।

তাঁরা বলেন, আজ হাফলঙে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে এসে প্রকল্প সঞ্চালকের খোঁজ করেন। তিনি কোথায় জানতে চাইলে কার্যালয়ের কর্মচারীরা কিছুই বলতে পারেননি।

গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তাঁদের জানানো হয়েছিল, আগামী এক সপ্তাহ বা দশ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ সমস্যার সমাধান করে বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এভাবে দশ দিনের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ গ্রামবাসীদের ক্ষতিপূরণের টাকা মিটিয়ে দেননি।

তাই আজ গ্রামবাসীরা ক্ষতিপূরণের দাবিতে পুনরায় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের হাফলং কার্যালয়ে এসে প্রকল্প সঞ্চালককে না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়ার জন্য জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে দশ দিনের সময়সীমা বেঁধে হুমকি দিয়ে বলেন, আগামী দশ দিনের মধ্যে যদি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ গ্রামবাসীদের ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে না দেন, তা-হলে তাঁরা জাতীয় সড়ক অবরোধ করার পাশাপাশি মহাসড়কের কাজ বন্ধ করে দেবেন।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, মহাসড়কের কাজ অতি নিম্নমানের হচ্ছে। তাছাড়া সম্প্রতি লাগাতার বৃষ্টির জেরে হারাঙ্গাজাওয়ে জাতীয় সড়কের যে বৃহৎ অংশ জাটিঙ্গা নদীর জলে ভেঙে গিয়েছে, ওই অংশকে মেরামত করে তোলার ক্ষেত্রেও কোনও ব্যবস্থা নেননি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। বরং হারাঙ্গাজাওয়ের স্থানীয় পরিষদ সদস্য আমেন্দু হোজাই নিজের উদ্যোগে জাতীয় সড়ক সচল করে তুলেছেন।

তাঁদের প্রশ্ন, তা-হলে এখানে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাজ কী ? গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, মহাসড়কের কাজ করতে গিয়ে হারাঙ্গাজাও এলাকার দলাইডিসা, নারায়ণপুর এলাকার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দাদের বাসগৃহ, ক্ষেতের জমি নষ্ট হয়ে গেছে। গত দু-বছর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামের বাসিন্দারা ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ গ্রামবাসীদের ক্ষতিপূরণের টাকা মিটিয়ে দিতে কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না। তাই তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আগামী দশ দিনের মধ্যে যদি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা মিটিয়ে না দেয়, তা-হলে জাতীয় সড়ক অবরোধের পাশাপাশি মহাসড়কের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *