মুম্বই, ১০ মে (হি.স.) : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী, শুক্রবার মহারাষ্ট্রের নন্দুরবারে আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দেওয়ার সময়, ভগবান শ্রী রামের ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য কংগ্রেসকে কঠোরভাবে আক্রমণ করেন। এছাড়াও, তিনি দেশবিরোধী মানসিকতা এবং নেতিবাচক রাজনীতির জন্য ইন্ডি জোটেকে একহাত নেন। অনুষ্ঠান চলাকালীন, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী একনাথ শিন্ডে, উপ-মুখ্যমন্ত্রী শ্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীস এবং নন্দুরবারের লোকসভা প্রার্থী শ্রীমতি হিনা বিজয় গাভিত এবং অন্যান্য নেতারা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত ও আদিবাসীদের সেবা করা, আমার পরিবারের সদস্যদের সেবা করার মতো। মোদী কংগ্রেসের শাহী পরিবারের মতো কোন বড় পরিবারের সন্তান নন, কিন্তু দারিদ্রতার মধ্যে বড় হয়েছেন এমন একজন ব্যক্তি। স্বাধীনতার ৬০ বছর পরেও এই অঞ্চলের গ্রামে বিদ্যুত ছিল না, তাই মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে প্রত্যেক দরিদ্র্য ও আদিবাসীকে বাড়ি, জল এবং বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা। এনডিএ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে নন্দুরবারের প্রায় ১.২৫ লক্ষ দরিদ্র মানুষকে স্থায়ী বাড়ি দিয়েছেন এবং যারা এখনও বিজেপি সরকারের প্রকল্পের সুবিধা পাননি তারা মোদীর তৃতীয় মেয়াদে সমস্ত প্রকল্পের সুবিধা পাবেন, এটাই মোদীর গ্যারান্টি । গত ১০ বছরে, বিজেপি ৪ কোটি পাকা বাড়ি দিয়েছে এবং তৃতীয় মেয়াদে ৩ কোটি নতুন বাড়ি তৈরি করা হবে। এনডিএ সরকার মহারাষ্ট্রের ২০ হাজারেরও বেশি গ্রামে কলের জল সরবরাহ করেছে, যার মধ্যে নন্দুরবারের ১১১টি গ্রামও রয়েছে। এই মুহূর্তে এটি একটি ট্রেলার, মোদীর এখনও অনেক কিছু করার আছে। একদিকে বিজেপির প্রচেষ্টা এবং অন্যদিকে কংগ্রেস রয়েছে যারা কখনও আদিবাসীদের কথা চিন্তা করেনি। উপজাতীয় এলাকায় সিকেল সেল অ্যানিমিয়া একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু কংগ্রেস কখনও এই রোগের দিকে মনোযোগ দেয়নি। শুধুমাত্র বিজেপিই সিকেল সেল অ্যানিমিয়া নির্মূল করার জন্য প্রচার শুরু করেছে।
শ্রী মোদী বলেন যে এনডিএ এই বিষয়টি নিয়েও উদ্বিগ্ন যে কোনও দরিদ্র যেন অপুষ্টির শিকার না হয়। এখন নন্দুরবারের ১২ লক্ষেরও বেশি মানুষ বিনামূল্যে রেশন পাচ্ছেন। উন্নয়নে কংগ্রেস কখনোই মোদীর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে না। তাই এই নির্বাচনে কংগ্রেস মিথ্যার কারখানা খুলেছে এবং মিথ্যে প্রচার করে ভোট পেতে চায়। সংরক্ষণ নিয়ে কংগ্রেসের অবস্থা খুবই উদ্বেগজনক। ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ বাবা সাহেবের চেতনা ও সংবিধানের পরিপন্থী। কিন্তু কংগ্রেসের এজেন্ডা হল দলিত, অনগ্রসর শ্রেণী ও আদিবাসীদের সংরক্ষণ কেড়ে নিয়ে তাদের ভোটব্যাঙ্কে দেওয়া। কখনও কংগ্রেস সংরক্ষণ নিয়ে মিথ্যা বলে আবার কখনও সংবিধান নিয়ে। কংগ্রেস কর্ণাটকের মুসলিম সম্প্রদায়কে রাতারাতি ওবিসি বানিয়ে ধর্মের ভিত্তিতে রিজার্ভেশন দিয়েছে, যার কারণে তারা ওবিসি রিজার্ভেশনের সবচেয়ে বড় অংশ লুট করেছে এবং কংগ্রেস সারা দেশে কর্ণাটকের একই মডেল বাস্তবায়ন করতে চায়। এই আঘাড়িরা সংরক্ষণ কেড়ে নেওয়ার অভিযান করছে। আর এসসি, এসটি ও ওবিসিদের সংরক্ষণ অটুট রাখতে মোদী সংরক্ষণের মহাযজ্ঞ করছেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমি যে গত ১৭ দিন ধরে কংগ্রেসকে চ্যালেঞ্জ করে আসছি যে তারা লিখিতভাবে জানাক এসসি, এসটি এবং ওবিসি-দের থেকে সংরক্ষণ কেড়ে নিয়ে ধর্মের ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণিকে সংরক্ষণ তারা দেবে না। কিন্তু কংগ্রেস এই চ্যালেঞ্জের কোনও উত্তর দিচ্ছে না। এর অর্থ হল কংগ্রেস তার গোপন এজেন্ডা নিয়ে এসসি, এসটি এবং ওবিসিদের সংরক্ষণ কেড়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। কংগ্রেসের এই নীরবতা স্পষ্টই বোঝায় যে এই ঘটনায় অন্যায় কিছু আছে। কংগ্রেস যতই চেষ্টা করুক না কেন, দেশবিরোধী শক্তির সঙ্গে মিলে যতই মিথ্যা প্রচার করুক না কেন, জনগণের কাছে মোদীর ভরসা আছে। যতদিন মোদী বেঁচে থাকবেন, ততদিন এসসি, এসটি এবং ওবিসিদের সংরক্ষণ কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। মোদী বঞ্চিত মানুষদের জন্য লড়েন। মোদীর মতো প্রহরী থাকলে বঞ্চিতদের অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। বিজেপি মাতা শবরীর পূজা করে কিন্তু কংগ্রেস কখনোই জনজাতি সমাজকে সম্মান দেয়নি। স্বাধীনতা সংগ্রামে আদিবাসী বিপ্লবীরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। কিন্তু কংগ্রেস সেই ত্যাগকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত নয় এবং কংগ্রেস স্বাধীনতার পুরো কৃতিত্ব একটি মাত্র পরিবারকে দিয়ে আসছে। কিন্তু বিজেপি সারা দেশে জনজাতি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে জাদুঘর তৈরি করছে যাতে আগামী প্রজন্ম জানতে পারে যে আদিবাসী পূর্বপুরুষরা দেশের জন্য বিশাল ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন।
মাননীয় মোদী বলেছেন যে এনডিএ প্রথমবারের মতো একজন আদিবাসী মহিলাকে রাষ্ট্রপতি করেছে। কিন্তু কংগ্রেস দিনরাত চেষ্টা করে গেছে শ্রীমতি দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পরাজিত করার জন্য। এর আসল কারণ সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে। আমেরিকায় বসবাসকারী রাহুল গান্ধীর উপদেষ্টা স্যাম পিত্রোদা ভারতীয়দের বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য করেছেন। যাদের গায়ের রং ভগবান কৃষ্ণের মতো কংগ্রেস তাদের আফ্রিকান বলে মনে করে, তাই কংগ্রেস চায়নি যে শ্রীমতি দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি হন। আদিবাসী সমাজকে অপমান করতে গিয়ে কংগ্রেস এখন বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য করছে। স্যাম পিত্রোদা কংগ্রেসের গোপন এজেন্ডা ফাঁস করে দিয়েছেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন যে স্যাম পিত্রোদা বলেছিলেন যে রাম মন্দির নির্মাণ এবং রাম নবমী উদযাপন ভারতীয় সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। তিনি মোদীর মন্দিরে যাওয়া পছন্দ করেন না। কংগ্রেসও আমার মন্দিরে যাওয়াকে ভারতবিরোধী বলে অভিহিত করেছে। ইন্ডি জোটের এই আক্রমণ মোদীর ওপর নয়, ১৪০ কোটি দেশবাসীর বিশ্বাসের ওপর। কংগ্রেস দেশ থেকে হিন্দু ধর্মকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে। ভগবান শ্রী রাম হলেন জীবনের সর্বোচ্চ আদর্শ, সর্বশ্রেষ্ঠ গুণাবলী এবং সবচেয়ে সুন্দর মূল্যবোধের মহান সঙ্গম। ভারতের অস্তিত্বের ভিত্তি ভগবান শ্রী রামের সাথে নিহিত এবং ভারতের ভবিষ্যতের অনুপ্রেরণাও ভগবান শ্রী রাম। এই মহারাষ্ট্রের মাটিতেই এই আওয়াজ উঠেছিল যে “বিশ্বছা বিশ্রাম রে, স্বামী মাঝা রাম রে” অর্থাৎ আমার রাম সমগ্র বিশ্বের আশ্রয়। ভগবান শ্রী রামের শিক্ষা হল “পরিত সারিস ধর্ম নাহি ভাই, পরপিদা সাম নাহি আধামাই” অর্থাৎ অন্যের সেবা ও দান করার চেয়ে বড় কোনো ধর্ম নেই এবং কাউকে কষ্ট দেওয়া সবচেয়ে বড় পাপ। আমাদের রাম স্বয়ং বলেছেন, “কোমল চিত তিন পর দিয়া, মন ওয়াচ ক্রাম মম ভক্তি অমায়া” অর্থাৎ যে গরীবের কষ্ট জানে সে আমার ভক্ত। ভগবান রামের শিক্ষা হল “ধর্ম না দুসার সত্য সমানা, আগম নিগম পুরাণ বখান” অর্থাৎ সত্যের সমান অন্য কোন ধর্ম নেই। তিনিই রাম যিনি সমস্ত দরিদ্র ও নিঃস্বকে আলিঙ্গন করেন এবং তাদের কাছে বসিয়ে বলেন “সহজ সানেহ বিবাস রঘুরাই, পুঞ্চি কুসল নিক্ত বৈতাই”। আমাদের রাম যখন আদিবাসী সম্প্রদায়ের সাথে দেখা করেন, তখন বলা হয় “পুরজন করি জোহারু ঘর আয়ে” অর্থাৎ রাম জোহর করার সময় আদিবাসীদের এবং তাদের সংস্কৃতির সাথে দেখা করেন। আমাদের ভগবান শ্রী রাম আমাদের শিখিয়েছেন যে “অপি স্বর্ণময়ী লঙ্কা, না মে লক্ষ্মণ রোচে। জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গড়িয়াসী” মানে আমাদের মাতৃভূমি স্বর্গের চেয়েও বড় অর্থাৎ জাতি সবার আগে। কংগ্রেস নেতারা এমন ভগবান রামকে ভারতের ঐতিহ্য বিরোধী বলে মনে করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কংগ্রেস নেতারা এতই অহংকারী যে, তাদের কাছে গরীবদের কোনও দাম নেই। কংগ্রেস যখন ক্ষমতায় থাকে তখন গরিবদের কষ্ট দেয়, লাঞ্ছনা করে। কিন্তু আজ গরিবের ছেলে, জনগণের সেবক হয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করছে, তাই গরিববিরোধী মানসিকতার এই শাহীপরিবারের এটা সহ্য হচ্ছে না। এই নকল শিবসেনা গরিবদের কতটা ঘৃণা করে তা তারা আবারও প্রকাশ্যে এসেছে। এই নকল শিবসেনার লোকেরা মোদীকে জীবন্ত কবর দেওয়ার কথা বলছে। একদিকে কংগ্রেস মোদীর কবর খোঁড়ার কথা বলছে। অন্যদিকে এই নকল শিবসেনা আমাকে জীবন্ত কবর দেওয়ার কথা বলছে। আমাকে কটাক্ষ করলেও, এই লোকেরা যাদের তোষণ করে তাদের ভালভাবে খেয়াল রাখে। বালাসাহেব ঠাকরে এসব দেখে দুঃখ পেতেন। এখন এই নকল শিবসেনার লোকেরা প্রচারের জন্য তাদের সাথে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো সন্ত্রাসবাদীদের নিয়ে যাচ্ছে এবং পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে জড়িত লালু যাদবকে কাঁধে নিজেদের কাঁধে বসিয়েছে। এসব মানুষ জনগণের আস্থা ও সমর্থন হারিয়েছে। কিন্তু এই লোকেরা জানে না যে আমার কাছে মায়ের আশীর্বাদ আছে। তারা চাইলেও আমাকে কবর দিতে পারবে না, জীবিত অবস্থায়ও নয়, এমনকি মৃত্যুর পরেও নয়।
শ্রী মোদী বলেন যে মহারাষ্ট্রের একজন প্রবীণ নেতা, যিনি ৪০-৫০ বছর ধরে রাজনীতি করছেন, তিনি মনে করেন যে ৪ জুনের পরে রাজনৈতিক জীবন টিকিয়ে রাখতে ছোট রাজনৈতিক দলগুলিকে কংগ্রেসের সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এর মানে হল ভুয়ো এনসিপি এবং নকল শিবসেনা কংগ্রেসের সাথে মিশে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। ১৩ মে জনগণের ভোটেই কংগ্রেস এবং ইন্ডি জোট জবাব পাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী জি স্থানীয় লোকসভা প্রার্থীকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সাথে বিজয়ী করার জন্য উপস্থিত জনতার কাছে আবেদন করেন এবং দেশে বিজেপি সরকার গঠনের আবেদন জানিয়েছেন।