তুরা (মেঘালয়), ১৬ জানুয়ারি (হি.স.) : ২০৪৭ সালের মধ্যে দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন অপরিহার্য। আজ মেঘালয়ের পশ্চিম গারোপাহাড়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা সদস্যগণ, ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগী এবং কৃষকদের উপস্থিতিতে আয়োজিত সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে এই মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
আজ মঙ্গলবার রাজ্য সফরের দ্বিতীয় দিন পশ্চিম গারোপাহাড় জেলার অন্তৰ্গত জেনজালের বালজেকে মেঘালয়ের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা সদস্যবৃন্দ, ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগী এবং বিভিন্ন অংশের কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ছিলেন রাজ্যপাল ফাগু চৌহান, মুখ্যমন্ত্রী কনরাড কে সাংমা, বিদ্যুৎমন্ত্রী এটি মণ্ডল এবং শিক্ষামন্ত্রী রাক্কাম সাংমা।
এখানে তিনি সমবেত উপস্থিতদের সামনে বক্তব্য পেশ করেছেন। প্ৰদত্ত বক্তব্যে তৃণমূলস্তরের মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং জনগোষ্ঠীয় উন্নয়নে সরকার গৃহীত বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেছেন রাষ্ট্রপতি মুর্মু। রাজ্যে মহিলাদের নেতৃত্বে পরিচালিত স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে উন্নীত করার জন্য রাজ্য সরকারের গৃহীত প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, একটা সময় ছিল যখন মহিলাদের সভা-সমাবেশে খুব কম দেখা যেত। কিন্তু আজ ভারত এগিয়ে যাচ্ছে। তাই মহিলারা ভারতের উন্নয়নের অন্যতম অংশ হিসেবে প্রতিভাত হচ্ছেন।
জোরের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, ভারতের মহিলারা প্রতিরক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, খেলাধুলা, শিক্ষা, উদ্যোগ, কৃষি বা অন্য যে কোনও ক্ষেত্রে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দেশের উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করছেন। তবে এ ক্ষেত্রে তাঁদের আরও উৎসাহ দিতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, নারীর নেতৃত্বে উন্নয়নের ধারণা তখনই বাস্তবায়িত হতে পারে যখন তাঁরা তাঁদের পছন্দমতো এগিয়ে যাওয়ার স্বাধীনতা পাবেন। অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি এটা কিছুটা হলেও বাস্তবে পরিণত হয়েছে। অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা মহিলাদের মধ্যে একটি বৃহত্তর আত্মবিশ্বাস নিয়ে আসে, বলেন তিনি।
দ্রৌপদী বলেন, ভারত সরকার দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে এবং বিপুল পরিমাণে নারীর অবদান নিশ্চিত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, কর্মশক্তিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সরকার শুধু নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নয়, তাঁদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেও বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে নারীর ক্ষমতায়নের পথে এখনও অনেক পথ যেতে হবে, বলেন রাষ্ট্রপতি।
দেশ তথা রাজ্যের জনগণকে তাঁদের আশপাশের মহিলাদের মূল্য ও গুণাবলী শানাক্ত করে তাঁদের সমর্থন করার আহ্বান জানান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য মহিলাদের হাত ধরে তাঁদের এগিয়ে নিয়ে যেতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদেরও আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, এটা তাঁদের একা নয়, আমাদের দেশের বিপুল সংখ্যক নারীর যাত্রা, যাঁরা এখনও তাঁদের বাড়ির চার দেয়ালের বাইরে বিদ্যমান সুযোগ অন্বেষণ করতে পারেননি। তবে তাঁরা অবশ্যই একদিন তাঁদের অঞ্চল ও দেশের অন্যান্য মহিলাদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবেন, আশা ব্যক্ত করেছেন রাষ্ট্রপতি।
ভাষণের পর সমাবেশে সমবেত মহিলাদের সাথে দেখা করেন রাষ্ট্রপতি। প্রায় ৩০ মিনিট তাঁদের সঙ্গে আলাপচারিতার পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ও হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্য-সামগ্রীর স্টল পরিদর্শন করেন তিনি।