দেড়গাঁও / যোরহাট (অসম), ৩ জানুয়ারি (হি.স.) : অসমের গোলাঘাট জেলার দেড়গাঁওয়ে ভয়ংকর এক সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু-মহিলা সহ ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ৩৫ জন। তাঁদের মধ্যে প্রায় সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে দুজনের শারীরিক অবস্থা অতি সংকটজনক। হতাহতদের মধ্যে অধিকাংশ একই পরিবারের সদস্য বলে জানা গেছে। দুই পরিবারের মোট ৯ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে দুৰ্ঘটনায়। দুর্ঘটনাটি আজ বুধবার ভোর প্রায় পাঁচটা নাগাদ দেড়গাঁওয়ের বালিজানে একটি যাত্রীবাহী বাস এবং কয়লা-বোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ সংঘটিত হয়েছে।
এ খবর লেখা পর্যন্ত যে সকল নিহতের পরিচয় পাওয়া গেছে তাঁরা যথাক্রমে অনিমা শইকিয়া (৬০), শুভঙ্কর শইকিয়া (১৩), নিহারিকা শইকিয়া (১০), দিপালী শইকিয়া (৩৭), নবজিৎ শইকিয়া (৪০), পিংকি শইকিয়া (৪৮) এবং রিংকি বরা (১৮), নুর আলম (৩৪, ট্ৰাক চালক)। নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তাছাড়া যাঁরা আহত হয়ে চিকিৎসাধীন তাঁরা যথাক্রমে নবনীতা শইকিয়া (৩৪), ধ্ৰুবজ্যোতি বরা (১৮), প্ৰাচুৰ্য শইকিয়া (৭), জোনালী বরা শইকিয়া (৪৩), কৌশিক শইকিয়া (১৭), চিন্ময় বরা (১২), বুলু শইকিয়া (৪৭), রুলি শইকিয়া বরা (৩৫), দীপ্তি শইকিয়া (১৭), মৃদুল শইকিয়া (৪০), মাধুৰ্য শইকিয়া (২৫), ধ্ৰুবজ্যোতি বরা (২৭), কুলুমণি শইকিয়া (৩৪), চিত্ৰলেখা বরা (২৬), বিজিত শইকিয়া (২৮), অরূপ শইকিয়া (৩৭), বিতোপন বরা (২৪), অৰ্চনা শইকিয়া (৪১), প্ৰীতি শইকিয়া (৭) এবং অভিজিৎ বরা (৬)। বাকিদের নাম এখনও জানা যায়নি।
জানা গেছে, দেড়গাঁওয়ের আটখেলিয়া শালিখিহাট ভরলুয়া গ্রামের ৪৫ জন বাসিন্দা ভোররাত প্রায় ৩.৩০ মিনিট নাগাদ এএস ০২ এসি ৫৩৮৩ নম্বরের একটি আলট্রা বাসে করে তিনসুকিয়ায় পিকনিকে যাচ্ছিলেন। কথা ছিল, সকালে প্রথমে তাঁরা তিনসুকিয়ার টিলিঙা মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়ে পার্শ্ববর্তী বগিবিলে বনভোজ করবেন। কিন্তু ভোর প্রায় পাঁচটা নাগাদ মাঝপথ দেড়গাঁওয়ের বালিজানে ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কে একটি ইউটার্নের মুখে বিপরীত দিক থেকে মার্ঘেরিটা থেকে আগত এএস ০১ পিসি ০৬৪৮ নম্বরের কয়লা-বোঝাই ট্রাকের সঙ্গে যাত্রীবাহী আলট্রা বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। প্রচণ্ড সংঘর্ষে ট্রাকটি রাস্তা থেকে পাশের খাদে উল্টে পড়ে। বাস রাস্তা ছেড়ে পাশে খাদের দিকে হেলে পড়ে।
দুই গাড়ির বিকট শব্দ শুনে স্থানীয় মানুষ বাড়ি-ঘর থেকে বেরিয়ে এসে হতাহতদের উদ্ধারকার্যে নেমে পড়েন। ইত্যবসরে খবর পেয়ে ছুটে আসে পুলিশের দল। বাসের ভিতর আবদ্ধদের উদ্ধার করতে ডেকে পাঠানো হয় এক্সকেভ্যাটর ও রিকভারি ভ্যান। পুলিশ হতাহতদের দেড়গাঁও সামূহিক হাসপাতালে এবং পার্শ্ববর্তী যোরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো শুরু করে।
এদিকে দুৰ্ঘটনার খবর পেয়ে অকুস্থল এবং হাসপাতালে ছুটে যান হতাহতদের পরিবারের লোকজন। তাঁরা তাঁদের আত্মীয়স্বজনকে মৃত এবং আহত অবস্থায় দেখে বুকফাঁটা কান্নায় ভেঙে পড়েন। দুৰ্ঘটনায় মুহূৰ্তের মধ্যে কয়েকটি পরিবারে অন্ধকার নেমে এসেছে। শালিখিহাট ভরলুয়া গ্রামের বাসিন্দদের কাছে জানা গেছে, আজকের মর্মান্তিক দুৰ্ঘটনায় দুটি পরিবার সম্পূৰ্ণ নিঃশেষ হয়ে গেছে। ওই দুই পরিবারের মোট ৯ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে, জানান তাঁরা।
অন্যদিকে দেড়গাঁও সামূহিক হাসপাতালে আসেন গোলাঘাটের জেলাশাসক পি উদয় প্ৰবীণ। তিনি হতাহতদের আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলে দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করেছেন। ঘন কুঁয়াশার জন্য দুৰ্ঘটনা সংঘটিত হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ ব্যক্ত করেছেন জেলাশাসক। তবে অভার-লোডেড কয়লা-বোঝাই ট্রাকটি রঙ সাইডে এসেছিল বলেও জানান তিনি।
জেলাশাসক পি উদয় প্ৰবীণ জানান, বাসে যাত্ৰী সহ প্ৰায় ৪৯ জন ছিলেন। গুরুতরভাবে আহত ২৪ জনকে ভরতি করা হয়েছে যোরহাট মেডিক্যালে। নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের শিশু তাঁর মা ও বাবা সহ চারজন আছেন। ওই পরিবারের মোট ছয়জন ছিলেন বাসে। এর মধ্যে এক শিশু এবং এক তরুণী আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে একজন ট্ৰাক এবং একজন বাস চালকের।