BRAKING NEWS

১৫ই ডিসেম্বর কাঁঠালবেরিয়া পঞ্চায়েতের প্রধান উপপ্রধান নির্বাচনের নির্দেশ হাইকোর্টের


বাসন্তী, ৭ ডিসেম্বর (হি. স.) : নানা টালবাহানার মধ্যে দিয়ে চলতি বছরে শেষ হয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। রাজ্যের সমস্ত প্রান্তেই প্রায় পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন হলেও এখনও পর্যন্ত বোর্ড গঠন হয়নি বাসন্তী ব্লকের কাঁঠালবেরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের। শাসকের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই এই পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন থমকে রয়েছে বলেই দাবি স্থানীয়দের। পঞ্চায়েত বোর্ড না হওয়ায় প্রতিদিন নানা ধরনের সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এলাকার সাধারণ মানুষকে। আর সেই কারণে এই বিষয়ে জনস্বার্থে মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে। মাসুদা পিয়াদা নামে এক মহিলা মামালা করেন উচ্চ আদালতে। সেই মামলার শুনানিতে বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ আগামী ১৫ই ডিসেম্বর এই পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধান নির্বাচনের নির্দেশ দেন।

বাসন্তীর ১৩ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে কাঁঠালবেরিয়া বাদে সবকটি গ্রাম পঞ্চায়েতেই গত ৯ই আগস্ট প্রধান, উপপ্রধান নির্বাচিত হয়েছে। সেদিনই এই পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের কথা ছিল। সেই মোতাবেক জয়ী সদস্যরা সকলে চলেও আসেন পঞ্চায়েতে। কিন্তু আচমকাই বিডিও অফিস থেকে জানানো হয় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকার কারনে বোর্ড গঠন সম্ভব নয়। ফলে সেদিনের মতো ভেস্তে যায় বোর্ড গঠন। পরে এই বোর্ড গঠন হবে বলে বিডিও অফিসের তরফ জানানো হলেও ব্লক প্রশাসনের তরফে এই পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের জন্য কোন নির্দেশিকা জারি করা হয়নি বিগত প্রায় চার মাসে।

এদিনের নির্দেশিকায় হাইকোর্ট জানিয়েছে, উপযুক্ত পুলিশি নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রধান, উপপ্রধান নির্বাচন করতে হবে। পাশাপাশি সমগ্র নির্বাচন প্রক্রিয়া ভিডিও রেকর্ডিং করে রাখতে হবে বিডিওকে। দরকার পড়লে সেই ফুটেজ আদালত চেয়ে পাঠাবে। কার্যত এই নির্দেশিকার পরই নড়েচড়ে বসেছে বাসন্তী ব্লক প্রশাসন। বাসন্তীর বিডিও সঞ্জীব সরকার বলেন, “ আদালতের নির্দেশ মেনেই আগামী ১৫ই ডিসেম্বর কাঁঠালবেরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।”

এই পঞ্চায়েতের মোট ২৬ টি আসন রয়েছে। ২৬ টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের দুই বিবাদমান গোষ্ঠী রাজা গাজী ও আমানুল্লা লস্কর গোষ্ঠীর মধ্যে আসন বণ্টন করে দলের উচ্চ নেতৃত্ব। নির্বাচনের আগেই বিনা প্রতিদন্ধিতায় রাজার অনুগামী ১২ জন প্রার্থী জয় লাভ করে। অন্যদিকে আমানুল্লার পক্ষের চার প্রার্থী জয় পায় বিনা প্রতিদন্ধিতায়। বাকি যে দশটি আসনে ভোট হয়েছিল সেখানে আমানুল্লার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্দল হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে নামেন রাজার লোকজন। এই দশটি আসনের মধ্যে তৃণমূল মাত্র ২ টি আসনে জয় পায়। বাকি আসনে নির্দলরা জিতে যায়। মূলত আমানুল্লা ও রাজা গোষ্ঠীর বিবাদের জেরেই এই পঞ্চায়েতে আজও বোর্ড গঠন হয়নি।
সূত্রের খবর, এই নির্দল তথা বিক্ষুব্ধ তৃণমূলদের সমর্থন নিয়ে রাজা গাজী এই পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন করতে চাইছেন। কিন্তু আমানুল্লার দাবি তাঁর স্ত্রী বুলা নাসরিনকে পঞ্চায়েত প্রধান করতে হবে। এ বিষয়ে দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের কাছে দরবারও করেছেন তিনি। অন্যদিকে রাজার দাবি যার কাছে জন সমর্থন নেই সে কিভাবে প্রধান, উপপ্রধান হবে? তিনি বলেন, “ যারা নির্দল হিসেবে জিতেছে সকলেই তৃণমূলের কর্মী। দলের টিকিট না পেয়ে তাঁরা নির্দল হিসেবে লড়াই করেছেন। আর এঁদের সাথেই মানুষের সমর্থন রয়েছে। দলের মধ্যে কোন কোন্দল নেই। মানুষ যাকে প্রধান হিসেবে চাইবে সেই প্রধান হবে।” আমানুল্লা বলেন, “দল সব জানে। দল যা বলবে তাই হবে।” এই দুই গোষ্ঠীর বিবাদের জেরেই কার্যত এলাকার মানুষ সমস্যায় পড়েছেন। তাঁদের দাবি পঞ্চায়েতের সাধারণ কাজকর্ম প্রায় বন্ধ। মামলাকারী মাসুদা পিয়াদা বলেন, “ প্রধান, উপপ্রধান না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই পঞ্চায়েতের সার্টিফিকেট পেতে সমস্যা হচ্ছে। সরকারি নানা সাহায্য পেতেও সমস্যা হচ্ছে এলাকার মানুষের। সেই কারণে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *