কিশোর সরকার
ঢাকা, ৭ ডিসেম্বর (হি.স): ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছেন’ বলে যে অভিযোগ রাশিয়া করেছে, তা ‘পুরোপুরি মিথ্যা’ বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কৌশলগত যোগাযোগ বিষয়ক সমন্বয়ক জন কারবি।
বুধবার ওয়াশিংটন ফরেন প্রেস সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে রাশিয়ার অভিযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি শুধু এটুকু বলব, এটা পুরোপুরি মিথ্যা এবং রুশরাও জানে এটা মিথ্যা। এটা রাশিয়ার চিরাচরিত প্রপাগান্ডারই অংশ। তারাও জানে এটা মিথ্যা।”
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের তৎপরতার মধ্যে ২২ নভেম্বর এক ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ‘নগ্ন হস্তক্ষেপ’ করছে বলে অভিযোগ করেন রুশ বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা।
ওই ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “দেশটির আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে ‘স্বচ্ছ ও অন্তর্ভূক্তিমূলক’ করার ছদ্মাবরণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রভাবিত করার ক্ষেত্র যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের প্রচেষ্টার বিষয় আমরা অব্যাহতভাবে তুলে ধরে আসছি।
“আমাদের কোনও সন্দেহ নেই যে, বিদেশি ‘শুভাকাঙ্ক্ষীদের’ সহায়তা ছাড়াই জাতীয় শাসনতন্ত্রের বিধানমত ৭ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখের সংসদ নির্বাচন স্বাধীনভাবে আয়োজনের সক্ষমতা বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের আছে।”
অক্টোবরের শেষে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সরকারবিরোধী বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য বিরোধীদলীয় এক সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলেও অভিযোগ করে রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রণালয়।
বুধবারের ব্রিফিংয়ে নির্বাচন ঘিরে রাশিয়ার এসব অভিযোগ এবং পিটার হাসের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতাদের ‘হুমকির’ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের মন্তব্য জানতে চান একজন সাংবাদিক।
উত্তরে নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরে মুখপাত্র কারবি বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ যা চায়, আমরাও তা চাই এবং সেটা হচ্ছে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। আর সেটাই রাষ্ট্রদূত ও তার টিম করেছে এবং বাংলাদেশি সমাজের সব পর্যায়ের লোকদের সঙ্গে কাজ করবে।
“যার মধ্যে রয়েছে নাগরিক সমাজ, বিরোধী সংগঠন ও ব্যক্তিদের পাশাপাশি বর্তমান সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ততাও।”
একইসঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্খার প্রতি সম্মান জানানো হয়েছে, এমন অবস্থা নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রদূত ও তার দল কাজ অব্যাহত রাখবে বলে জানান তিনি।
আরেক প্রশ্নে ওই সাংবাদিক বলেন, “ইন্ডিয়া টুডের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের কর্তৃত্ববাদী প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে ভারত, চীন ও রাশিয়া একই অবস্থানে রয়েছে এবং বাংলাদেশের বর্তমান সরকার আরেকটি একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, বিরোধীদের উপর নিপীড়ন চালাচ্ছে এবং তাদেরকে জেলে ঢোকাচ্ছে।
“তাহলে বাংলাদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য যা কিছু করা দরকার করব, এমন অবস্থান থেকে আপনারা সরে গেছেন?”
উত্তরে জন কারবি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিশ্বাস করি এবং সেটার যুক্তি উপস্থাপন অব্যাহত রাখব।
“আমরা কোনো দেশের নির্বাচনে পক্ষ নিই না এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এসে সেটার পরিবর্তনও হচ্ছে না। আমরা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে সমর্থন করি।
মুখপাত্র বলেন, “বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন দিয়ে যা করতে পারি, আমরা তা অব্যাহত রাখছি, রাষ্ট্রদূতরাও সেভাবে কাজ করে যাবেন।