দুর্গাপুর, ২৫ নভেম্বর (হি. স.): ‘ করোনা আবহের পর, ভারতবর্ষের বাইরে সব দেশে হাহাকার পড়েছে। ৭০ বছর ধরে যারা বলত কাশ্মীর চাই । এখন সেই পাকিস্তানের মানুষ ভারতবর্ষে আসতে চাইছে। তাদের নেতাদের গালি দিচ্ছে। ভাত চাইছে, আটা চাইছে, ঔষধ চাইছে।’ শনিবার সন্ধ্যায় দুর্গাপুরের মায়াবাজারে দলের বিজয়া সম্মেলনে এসে এমনটাই দাবি করেলেন বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ। একইসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশীদের ওপর ভর করে তৃণমূল জিতে আছে।
প্রসঙ্গত, আগামী বছরই লোকসভা নির্বাচন। আর লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে ময়দানে নেমেছে বঙ্গ বিজেপি। রাজ্যে তৃণমূল সরকারের লাগামছাড়া দুর্নীতি, স্বজনপোষনকে হাতিয়ার করে আগামী ২৯ নভেম্বর কোলকাতায় প্রতিবাদ সভার ডাক দিয়েছে বিজেপি। ওইসভাকে সামনে রেখে জেলায় জেলায় সভা মিটিং মিছিল করছে বিজেপি। শনিবার দুর্গাপুর মায়াবাজারে ছিল বিজেপির বিজয়া সম্মেলন। তাতে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ। এদিন বক্তব্যের আগা গোড়া ছিল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা। দুদিন আগে তৃণমূলের অধিবেশনকে ঘিরে নব্য ও পুরোনো তৃণমূল নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্বের জল্পনা শুরু হয়েছে। সে প্রসঙ্গে দীলিপ ঘোষ বলেন,” ভারতবর্ষে এরকম ইতিহাস আছে ঔরঙ্গজেবের আমল থেকে। পুরনো রাজাকে বন্দী করে নতুন রাজা হওয়ার। অতীতে মুলায়ম সিংকে আউট করে অখিলেশ ক্ষমতা নিয়েছে। সেরকমই হতে পারে। যারা মমতা ব্যানার্জীর সঙ্গে মার খেয়েছে। তারা ব্র্যাত হতাশ। সবাই ক্ষুব্ধ। ধৈর্য্য নেই, তাই ক্ষমতা হাতে চায় বলে কিছু উটকো নেতা লাগিয়ে রেখেছেন যুবরাজ।’
তিনি আরও বলেন, রাজ্যে স্বৈরাচারী শাসন সর্বোচ্চস্তরে চলে গেছে। গনতন্ত্রকে চেপে মারা হচ্ছে। জেলায় সভা করতে হলেও কোটে যেতে হচ্ছে। কোর্টে গনতন্ত্রের জয় হচ্ছে। আর রাজ্য সরকারের মুখ পুড়ছে।” কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তৃণমূলের বঞ্চনার অভিযোগের জবাবে দীলিপ ঘোষ বলেন,” অন্যান্য রাজ্যের থেকে এরাজ্যে কেন্দ্রের বেশী টাকা আসে। বেশী রেশন আসে। আবাস যোজনায়, ১০০ দিনের কাজে বেশী বরাদ্দ আসে। অথচ সেই টাকা লুট করে। আয়লায় সেচ দফতরকে দেওয়া ৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ৫৬ লক্ষ বাড়ীর মধ্যে ১৭ লক্ষ নাম কেটে দেওয়া হয়েছে। লুটের রাজত্ব গরিব মানুষের জীবন দুঃবিশহ হয়ে গেছে। তাই মানুষ পরিবর্তন চাইছে। আর বিজেপি লুটেরাজত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।”
কেন্দ্রের সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেন্দ্র সরকার বিনাপয়সায় রেশন দিচ্ছে। গরিব মানুষের বাড়ী দিচ্ছে। আয়ুষ্মান কার্ড দিচ্ছে। শস্য বিমায় বছরে ছ’হাজার করে টাকা দিচ্ছে। আর রাজ্যে তৃণমূলের জামানায় বাংলায় বেকাররা গুজরাটে চাকরীর জন্য যাচ্ছে। চেন্নাইয়ে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে। বেঙ্গালোরে পড়াশোনার জন্য যাচ্ছে। আর রাজ্যকে তৃণমূল উপহার দিয়েছে মাগুর মাছ বিক্রেতা কেষ্ট মন্ডলের মতকে সাড়ে পাঁচ’শ কোটির কোটিপতি, পার্থ চ্যাটার্জীর মত সাড়ে তিন’শ কোটির কোটিপতি।” আফগানিস্তানের লোক পাকিস্তানে ঢুকলে তাড়িয়ে দেয়। দুই দেশই মুসলমানদের। আর আমাদের রাজ্যে দু কোটি রোহিঙ্গা ঢুকল, প্রতিবাদ করতেই বলা হল তারা খেতে পায় না তাই এসেছে।”
তিনি আরও বলেন,” করোনা আবহের পর, ভারতবর্ষের বাইরে সব দেশে হাহাকার পড়েছে। ৭০ বছর ধরে যারা বলত কাশ্মীর চাই। এখন সেই পাকিস্তানের মানুষ ভারতবর্ষে যেতে চাইছে। তাদের নেতাদের গালি দিচ্ছে। ভাত চাইছে, আটা চাইছে, ঔষধ চাইছে। আফগানস্তানে খাবারের হাহাকার। ভারতবর্ষে আফগানিস্তানকে ৫০ লক্ষ টন গম দিচ্ছে।”
সম্প্রতি বনগাঁয় এক তৃণমূল নেত্রীর বাংলাদেশীদের ভোটার কার্ড তৈরীর বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন,” আমরা আগেও বলেছি। বাংলাদেশের ভোট না পেলে তৃণমূল জিততে পারবে না। সেখান থেকে তৃণমূলের টাকা আসছে, সোনা আসছে, নায়ক নায়িকারা প্রচারে আসছে। বাংলাদেশীদের ওপর ভর করে তৃণমূল জিতে আছে। তার দলের নেতা নেত্রীরাই বলছে। এটা তারই প্রমান।”