BRAKING NEWS

মানব পাচারের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে অভিযানে এনআইএ, ত্রিপুরার ২১ সহ গ্রেপ্তার মোট ৪৪

আগরতলা, ৮ নভেম্বর : ইন্দো- বাংলা সীমান্ত দিয়ে বিভিন্ন টাউট বা মধ্যস্থকারীদের সহায়তায় অবৈধভাবে রোহিঙ্গা ভারতে প্রবেশ করছে। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) ত্রিপুরা সহ বিভিন্ন রাজ্যে অভিযান চালিয়েছে আজ বুধবার। ওই অভিযানে ত্রিপুরা থেকে ২১ জন সহ বিভিন্ন রাজ্যের মোট ৪৪ জন টাউট বা মধ্যস্থকারীদের আটক করা হয়েছে বলে এনআইএ- এর তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

এনআইএ-এর তরফে ওই বিবৃতিতে আরো জানানো হয়েছে, গুয়াহাটি, চেন্নাই, ব্যাঙ্গালোর, জয়পুরের এনআইএ শাখায় ৪টি মানব পাচারের মামলা নথিভুক্ত হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতেই ১০টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট ৫৫টি জায়গায় আজ বুধবার একযোগে এই অভিযান চালানো হয়েছে। এর ফলে ৫টি রাজ্যের মানব পাচারের দলকে ধবংস করা হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরেই আসাম পুলিশ এই সীমান্ত এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশকে কেন্দ্র করে তাদের তদন্ত অব্যাহত রেখেছিল। আসাম পুলিশের তরফে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে করিমগঞ্জ রেল স্টেশনে ত্রিপুরা থেকে আসা একটি ট্রেনে রোহিঙ্গাদের একটি দল শনাক্ত করা হয়েছিল। পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে, তাঁরা অবৈধভাবে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছিলেন।


ওই ঘটনার পর অসম পুলিশের তরফ থেকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছিল সীমান্ত এলাকায়। অভিযানে অবৈধভাবে প্রবেশকারী ৪৫০ জন রোহিঙ্গাদের বর্ডার গার্ডিং ফোর্সের সহায়তায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে আরো জানানো হয়েছে, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা গেছে অভিবাসীদের অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশে সহায়তা করেছিল টাউট বা মধ্যস্থকারীরা। যাঁরা অনুপ্রবেশে প্রধান ভূমিকা পালন করছে। 

পুলিশি তদন্তকালে আরও জানা গিয়েছে, টাউটদের অস্তিত্ব শুধু ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের দুই পাশেই নয়, মূল ভূখণ্ডেও রয়েছে। এরপরই চলতি বছরের জুলাই মাসে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) ও অসম পুলিশ  টাউটদের নেটওয়ার্ক নির্মূল করার জন্য একটি অপারেশন শুরু করেছিল। ওই অভিযানে দশ জন টাউট বা মধ্যস্থকারীদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছিল। তদন্তে আরো জানা যায়, যে ভারত জুড়ে টাউটদের নেটওয়ার্ক বিদ্যমান ছিল।

অতএব, অসম রাজ্যকে জাতীয় বিরোধী কার্যকলাপের করিডোর হিসেবে ব্যবহার করার জন্য অসম সরকার ভারত সরকারের কাছে একটি মামলা এনআইএ -এর কাছে স্থান্তারিত করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিল। তদানুসারে, এনআইএ মামলাটি গ্রহণ করে এবং  অসম পুলিশের সাথে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার মাধ্যমে ১৭টি টিম দেশব্যাপী অভিযান শুরু করে। 

এন আই এ এর তরফে এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জানানো হয়েছে, আসাম পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স দ্বারা ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছিল। যার এফআইআর নাম্বার ১২/২০২৩। তারপরেই এনআইএ ৬ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে গুয়াহাটির এনআইএ থানায় এই মামলা নথিভুক্ত করে তদন্তের দায়িত্ব গ্রহন করেছে। গুয়াহাটির এনআইএ থানায় এই মামলার নম্বর- আরসি ০১/২০২৩/এনআইএ/জিইউডব্লিউ।

এই মামলার তদন্তে নেমে এনআইএ জানতে পেরেছে অবৈধ মানব পাচারের দল তামিলনাড়ু, রাজস্থান, হরিয়ানা এবং জম্মু কাশ্মীর সহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থেকে কাজ করছে। এই বিস্তৃত নেটওয়ার্ককে ভাঙতে এনআইএ আরো ৩ টি নতুন মামলা নথিভুক্ত করেছে। এই চারটি মামলার ভিত্তিতেই আজ এই অভিযান চালানো হয়েছে।

এদিনের অভিযানে এন আই এ মানব পাচার চক্র থেকে বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করেছে। মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, পেন ড্রাইভ, ভারতীয় মুদ্রায় ২০ লক্ষ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রায় ৪৫৫০ ইউএসডি। এছাড়াও আধার কার্ড, প্যান কার্ড সহ উল্লেখযোগ্য পরিচয়পত্র। যা প্রাথমিক তদন্তে জাল নথি বলেই মনে করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে এনআইএ এর তরফে।

ওই অভিযানে ত্রিপুরার ২১ জন, আসামের ৫ জন, পশ্চিমবঙ্গের ৩ জন , কর্ণাটকের  ১০ জন, হরিয়ানার  ১জন, তেলেঙ্গানার  ১জন, পুদুচেরিতে ১ জন এবং তামিলনাড়ুর ২জন সহ মোট ৪৪জন মধ্যস্থকারীদের আটক করা হয়েছে। ত্রিপুরা থেকে ধৃত ২১ জনকে ভারতীয় বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে আজ বুধবার দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করা হবে। এই মানব পাচার চক্রকে সমূলে ধ্বংস করতে এই তদন্ত অব্যাহত থাকবে বলে এনআইএ- এর তরফে জানানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *