আগরতলা, ১১ অক্টোবর : কৃষকদের কাছ থেকে সহায়ক মূল্যে ধান ক্রয় করার ফলে রাজ্যে সার্বিকভাবে ধানের ক্রয়মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৭-১৮ সালে প্রতি মন ধানের গড় বাজার মূল্য ছিল ৫৮০ টাকা। ২০২২-২৩ সালে ধানের বাজার মূল্য বেড়ে দাড়িয়েছে প্রতি মন ৮১৬ টাকা। আজ সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায় একথা জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষি সচিব জানান, বর্তমান রাজ্য সরকার ২০১৮ সালের রবি মরশুম থেকে প্রথম বারের মতো রাজ্যে কৃষকদের কাছ থেকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ধান ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই কর্মসূচিতে এখন পর্যন্ত রাজ্যে ৯২ হাজার ২৭ জন কৃষকের কাছ থেকে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ৭৯৬ মেট্রিক টন ধান ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ক্রয় করা হয়েছে। এর ফলে ৩৩৫ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা কৃষকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি দেওয়া হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষি সচিব জানান, গত সাড়ে পাঁচ বছর সময়কালে বর্তমান সরকারের আমলে কিষাণ ক্রেডিট কার্ডে রাজ্যের ৩ লক্ষ ২৯ হাজার ৮৬০ জন কৃষক ও বর্গাদারদের ১,৬৪৯ কোটি ১০ লক্ষ টাকা কৃষি ঋণ দেওয়া হয়েছে। পিএমকিষাণ প্রকল্পে রাজ্যে এখন পর্যন্ত ২ লক্ষ ৪৫ হাজার ৬১ জন কৃষককে মোট ৫৭৮ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনায় ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সালের খারিফ মরশুম পর্যন্ত ১২ লক্ষ ৭৬ হাজার ৬৫৭ জন কৃষককে বীমার আওতায় আনা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৯২ হাজার ৪০০ জন কৃষক ফসলের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৬ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা পেয়েছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষি সচিব ২০২৩-২৪ এর রবি মরশুমের বিশেষ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেন, আগামী রবি মরশুমে রাজ্যে ধানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১০ হাজার হেক্টর জমি সংকরজাতীয় ধান চাষের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচি রূপায়ণে ধান চাষে কৃষকদের প্রতি হেক্টরে ৯ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে। তাছাড়াও ৪১০ হেক্টর জমিতে প্রদর্শনীমূলক সরিষা চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচিতে কৃষকদের প্রতি হেক্টরে ৩ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। রবি মরশুমের পরিকল্পনায় রাজ্যের ৫০০ হেক্টর জমিতে সংকরজাতীয় ভূট্টা ও ১০০ হেক্টর জমিতে গম চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচিতে কৃষকদের প্রতি হেক্টরে ৯ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। কৃষি সচিব জানান, আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষ উপলক্ষে রাজ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচিতে কৃষকদের শ্রী-অন্ন চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বর মাসে রাজ্যের মিলেট বা শ্রী-অন্ন চাষিদের নিয়ে এক কর্মশালার আয়োজন করা হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে উদ্যানপালন ও ভূমি সংরক্ষণ দপ্তরের অধিকর্তা ফনিভূষণ জমাতিয়া বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে জানান, জাতীয় ভোজ্য তেল-পাম তেল মিশনে রাজ্যে এখন পর্যন্ত ৪৩ হেক্টর জমি পাম অয়েল চাষের আওতায় আনা হয়েছে। সুসংহত উদ্যান উন্নয়ন মিশনে এবছরে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি সব্জি চাষের আওতায় আনা হয়েছে। রাজ্য পরিকল্পনায় ৩২০ মেট্রিক টন টিপিএস আলু বীজ আগামী নভেম্বর মাস থেকে প্রতি কেজি ১৫ টাকা ভর্তুকীতে আলু চাষিদের মধ্যে বিতরণ করার কাজ শুরু হবে। আসন্ন শীত মরশুমে ৪০০ হেক্টর জমি গোপাল, গ্ল্যাডিওলাস, রজনীগন্ধা ও গাঁদাফুল চাষের আওতায় আনা হবে। উদ্যানপালন ও ভূমি সংরক্ষণ দপ্তরের অধিকর্তা জানান, রাজ্যে কাঠাল, আনারস, কলা, কমলা, আম চাষের এলাকা সম্প্রসারণ করার জন্যও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ৩ হাজার ৮৫০ জন কৃষককে এখন পর্যন্ত উদ্যানজাত ফসল চাষের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে উদ্যানপালন ও ভূমি সংরক্ষণ দপ্তরের অধিকর্তা জানান, মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যোজনায় চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত রাজ্যের ৯৭ হাজার ৮৮৪ টি পরিবারকে ফল ও সব্জি চাষে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। নারিকেল উন্নয়ন পর্ষদের আর্থিক সহায়তায় রাজ্যের ২৯৫ হেক্টর জমি উন্নত জাতের নারিকেল চাষের আওতায় আনা হয়েছে। রাজ্যে উৎপাদিত বিভিন্ন ফলের মধ্যে এবছর ২ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন আনারস, 8 হাজার ১০ মেট্রিক টন কাঁঠাল বহি:রাজ্যে ও ১৯৮ মেট্রিক টন বেল বিদেশে রপ্তানী করা হয়েছে। কৃষি সচিব জানান, চলতি অর্থবছরে রাজ্য পরিকল্পনায় শহর এলাকায় উদ্যানজাত ফসল চাষের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচিতে শহর এলাকায় ৫ হাজার পরিবারকে আম্রপালি ও উন্নতজাতের নারিকেলের চারা দেওয়া হয়েছে। দেশীয় ফল যেমন কুল, পেয়ারা ও লিচুর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের ২০০ হেক্টর জমি এসমস্ত ফল চাষের আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে ১০৮ হেক্টর জমি আপেল কুল চাষের আওতায় আনা হয়েছে।
তিনি জানান, উত্তর-পূর্বাঞ্চল পর্ষদের আর্থিক সহায়তায় ধলাই জেলার নালকাটায় একটি নতুন ইন্টিগ্রেড প্যাক হাউস স্থাপন করা হবে। এজন্য ব্যয় হবে ৪ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা। উন্নত পদ্ধতিতে সব্জির চারা তৈরীর জন্য বীরচন্দ্রমনুতে একটি সব্জি উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। আগামী ১৯ অক্টোবর এই কেন্দ্রের উদ্বোধন হবে। এই সব্জি উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপনে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা। তাছাড়াও তৈদুতে আরও একটি ফল উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রস্তাব ভারত সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। রাজ্য পরিকল্পনায় রুদ্রসাগর ও তার চারদিকের খালি জায়গা উন্নত করার জন্য উদ্যানজাত ফসল চাষের এক নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনায় ৭৫০টি পরিবারকে নারিকেল, সুপারি, লেবু ও আম চাষে সহায়তা দেওয়া হবে। সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা শরদিন্দু দাসও উপস্থিত ছিলেন।